বিশ্বকাপে মাশরাফির সেরা কয়েকটি মুহূর্ত

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:০৭ এএম, ০৫ জুলাই ২০১৯

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উত্থানের সময় থেকেই একজন খাটি ফাস্ট বোলারের অভাবে ভুগছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। অন্যান্য দলের কাছে ১৪০+ কিলোমিটারে বল করা অন্তত একজন পেসার থাকলেও টাইগারদের কপালে সেটা ছিল না।

অবশেষে ২০০১ সালে এসে দলের সেই অভাবটা পূরণ করেন ১৮ বছর বয়সের এক টগবগে তরুণ খেলোয়াড়, নাম তার মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রথম দেখায় মাশরাফিকে খুব মনে ধরে সেসময় বাংলাদেশের বোলিং কোচ ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তী অ্যান্ডি রবার্টসের।

তরুণ এই ফাস্ট বোলারকে পর্যবেক্ষণ করে তিনি বলেছিলেন, ভবিষ্যত খুব উজ্জ্বল হবে তার। হীরা পরখ করতে যে জহুরিরা ভুল করেন না, তা ক্ষণে ক্ষণে প্রমাণ দিয়ে গেছেন এই বোলার।

১৮ বছরের লম্বা ক্যারিয়ারে আগামীকাল (শুক্রবার) বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে নিজের শেষ ম্যাচ খেলবেন বর্তমান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। কালকের পর ক্রিকেটের সর্বোচ্চ এই আসরে আর পায়ের ছাপ ফেলবেন না দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটার। চারটি আসর খেলার পর কাল ইতি টানবেন দারুণ এক অধ্যায়ের।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অনেক অর্জনের সাক্ষী হয়েছেন মাশরাফি। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা বধ, ২০১৫ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া। সবকিছুতেই তার অবদান ছিল অপরিসীম।

তাই বিশ্বকাপে মাশরাফির সেই বিশেষ মুহূর্তগুলো স্মৃতিচারণ করতে তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের পাঠকদের কাছে:

প্রথম বিশ্বকাপ (২০০৩)

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই দলে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে ফেলেন মাশরাফি। সেই সুবাদে সুযোগ পেয়ে যান বাংলাদেশের ২০০৩ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। প্রথম ম্যাচে কানাডার বিপক্ষেই আসরে অভিষেক। সেই ম্যাচে তার দারুণ বোলিং ফিগারের (৮-০-৩৮-২) সুবাদে কানাডাকে মাত্র ১৮০ রানেই অলআউট করে বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে শেষ পর্যন্ত ৬০ রানে হারতে হয় টাইগারদের। ফলে ভেস্তে যায় মাশরাফির পারফরমেন্স।

প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খুব একটা উজ্জ্বল ছিলেন না মাশরাফি। তবে এর পেছনে দায়ী আবারো ব্যাটসম্যানরাই। প্রথম ব্যাট করতে নামে মাত্র ১২০ রানই তুলতে পারে টাইগাররা। সহজ এই টার্গেট তাড়া করতে নেমে ১০ উইকেটেই জিতে যায় লঙ্কানরা। নিজের প্রথম বিশ্বকাপে এটাই ছিল মাশরাফির শেষ ম্যাচ। কেননা এর পরে ইনজুরিতে পড়ে আসর থেকে ছিটকে যান তিনি।

২০০৭ বিশ্বকাপে ভারত বধ

এই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই আসরের হট ফেবারিট ভারতের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশ। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেবার প্রথমে ব্যাট করতে নাম ভারতকে ১৯১ রানে অলআউট করে দেয় টাইগাররা। শক্তিশালী এই ব্যাটিং লাইনআপের এমন ধস নামানোর পেছনে মূল কারিগর ছিলেন মাশরাফি। ৩৮ রানে তার তুলে নেয়া ৪ উইকেটের কারণেই বড় স্কোর গড়তে ব্যর্থ হয় ভারত।

সহজ এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তামিম, সাকিব ও মুশফিকের অর্ধশতকে পাঁচ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ফলে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটি লাভ করে নেন মাশরাফি। এই ম্যাচ এতোটাই স্পেশাল যে, ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মাশরাফি বলে ভিরেন্দর শেবাগের স্ট্যাম্প উড়ে যাওয়ার দৃশ্যটি এখনো প্রতিটি টাইগার ভক্তদের চোখে ভেসে উঠে।

অধিনায়ক হিসেবে প্রথম বিশ্বকাপ

২০১৪ সালে জর্জরিত এক অবস্থায় মুশফিকুর রহীমের পরিবর্তে দলের অধিনায়ক করা হয় মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। নিজের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে বোর্ডের সিদ্ধান্তের সঠিক প্রমাণ দেন তিনি। তবে এর পরপরই বিশ্বকাপের মতোন বড় মঞ্চে অধিনায়কত্ব করতে হয় তাকে।

আসরের প্রথম ম্যাচেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে দল এবং বোলিং ইউনিটকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মুশফিক, সাকিবের ফিফটিতে ২৬৭ রান তুলে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে মাশরাফি বোলিং তোপের কাছে দাঁড়াতেই পারেননি আফগান ব্যাটসম্যানরা। ২০ রান দিয়ে তার তুলে নেয়া ৩ উইকেটের কারণে ১৬২ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান। ফলে অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের স্বাদ লাভ করেন মাশরাফি।

বাংলাদেশের সেরা সাফল্য

মাশরাফির বিন মর্তুজার হাত ধরেই বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজেদের সেরা সাফল্য পায় বাংলাদেশ। ২০১৫ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে ছয় ম্যাচে তিন জয় ও দুই হারে ৭ পয়েন্ট প্রথমবারের মতো আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে টাইগাররা। ওই আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টাই আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার মূল ভিত গড়ে দেয়। ওই ম্যাচে ৪৮ রানে দুই উইকেট নেয়ার পাশাপাশি অধিনায়কত্ব করে দলের জয়ে অবদান রাখেন মাশরাফি। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে বিতর্কিত এক ম্যাচে ভারতের কাছে ১০৯ রানে হারার পর সেখান থেকেই বিদায় নিতে হয় তার দলকে।

শেষ বিশ্বকাপ

গত বিশ্বকাপে দুর্দান্ত সাফল্যের পর এবারের আসরেও অধিনায়কের দায়িত্বটা দেয়া হয় মাশরাফির কাধে। বলা হয়ে থাকে ইতিহাসের সেরা দল নিয়ে এই টুর্নামেন্টে এসেছে টাইগাররা। যার প্রমাণ দেখিয়েছে প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই। সাকিব, মুশফিকের অর্ধশতকের উপর ভর করে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দাপট দেখিয় ২১ রানের জয় পায় মাশরাফির দল।

তবে প্রথম ম্যাচে জয় পেলেও দুর্ভাগ্য আর হতাশা নিয়ে এবারের আসরের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে বাংলাদেশকে। প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন থাকলেও সেটা পূরণ করতে ব্যর্থ হয় টাইগাররা।

এএইচএস/এসএএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।