তবে কি এবার পাকিস্তানই চ্যাম্পিয়ন!
খেলার মাঠে কি তাহলে ইতিহাসের পূনরাবৃত্তি হয়! আগের ম্যাচে অনেক বড় ব্যবধানে জিতেও পরের ম্যাচে হারের অনেক নজির রয়েছে। খেলাধুলায় তাই আগাম কিংবা ইতিহাস-ঐতিহ্য দিয়ে কিছু বলা যায় না; কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত পাকিস্তান যেভাবে খেলে যাচ্ছে, তাতে ইতিহাসের হুবহু পূনরাবৃত্তিই তো দেখা যাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতেও যদি এভাবে পূনরাবৃত্তি হতে থাকে, তাহলে ধরে নিতে পারেন, এবারও চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান!
দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউজিল্যান্ডের মত শক্তিশালী দুটি দলকে যেভাবে হারিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদেরকে যেভাবে টিকিয়ে রেখেছে সরফরাজ আহমেদের দল, তাতে তাদেরকে এখন শিরোপার ফেবারিটের তালিকা থেকে কোনোভাবেই বাইরে রাখতে পারবেন না। বরং, ঐতিহ্য বলছে, তারাও অনেক বড় শিরোপার দাবিদার এখন।
কিভাবে? পাকিস্তান কিভাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মত জায়গায় চলে এলো? এসব প্রশ্নের জবাব দিয়ে রেখেছে ১৯৯২ বিশ্বকাপ। সেবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তান ঠিক এভাবেই তো এগিয়ে গিয়েছিল। এমন হুবহু মিল দেখে যে কেউ অবাক হবেন। এতটা মিল কিভাবে হতে পারে?
৭ ম্যাচের প্রতিটিতেই মিল। ১৯৯২ সালের সাথে ফরম্যাট মিল রেখে এবারের বিশ্বকাপের ফরম্যাট তৈরি করার পর কেউ কেউ বলাবলিও করছিলেন, তাহলে কি এবারও চ্যাম্পিয়ন হবে পাকিস্তান। তখন হয়তো, হাসি-ঠাট্টায় এসব কথা বলা হলেও, এখন বিষয়টা পুরোপুরি সিরিয়াস। কারও একে আর হালকা করে নেয়ার সুযোগ নেই।
১৯৯২ সালের সাথে একটাই অমিল হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপে গ্রু পর্বে খেলতে হবে ৯টি ম্যাচ। সেবার খেলতে হয়েছিল ৮টি ম্যাচ। এখনও পর্যন্ত ৭ ম্যাচের সবগুলোর সঙ্গেই মিল রেখে এগিয়ে চলছে পাকিস্তান। ১৯৯২ সালের প্রথম ম্যাচে হেরে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল ইমরান খানের দল। এবারও ঠিক একইভাবে প্রথম ম্যাচ হেরে শুরু হলো তাদের।
এরপর ১৯৯২ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। এবারও ঠিক একই অবস্থা। শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছে। সেবার তৃতীয় ম্যাচ ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। এবারও পাকিস্তানের তৃতীয় ম্যাচ ভেসে যায় বৃষ্টিতে। সেবার চতুর্থ এবং পঞ্চম ম্যাচে হেরে গিয়েছিল ইমরান খানরা। এবারও সরফরাজরা হেরেছিল চতুর্থ এবং পঞ্চম ম্যাচ।
১৯৯২ সালে গ্রুপ পর্বের ৬ষ্ঠ ম্যাচ থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় পাকিস্তান। এবারও একইভাবে ৬ষ্ঠ ম্যাচ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছে। সেবারও ৬ষ্ঠ এবং সপ্তম ম্যাচে জিতেছিল তারা। এখন বাকি অষ্টম ম্যাচ। সেবার শেষ ম্যাচে (অষ্টম ম্যাচে) পাকিস্তান নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে।
এবার ৮ম ম্যাচ তাদের আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এই ম্যাচটিতেও সরফরাজ আহমেদরা জয় পেতে যাচ্ছে- এটা প্রায় নিশ্চিত। আফগানদের তারা হারিয়ে দিলে পাকিস্তানের পয়েন্ট হবে ৯। এই ৯ পয়েন্ট দিয়েও নানা হিসাব-কিতাবের পর হয়তো বা সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা যাবে। ৯ম ম্যাচেও যদি তারা জিতে যায়, তাহলে তো সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়েই যাবে হয়তো। যদিও পাকিস্তানের শেষ ম্যাচটা বাংলাদেশের বিপক্ষে। যেটা বাংলাদেশেরও শেষ ম্যাচ।
আর কে জানে, ১৯৯২ সালের মত সেমিতে ওঠার পর যেভাবে দুর্দমনীয় হয়ে ওঠে আনপ্রেডিক্টেবল দলটি, এবারও তারা এমন হবে না? যদি একবার সেমি নিশ্চিত হয়েই যায়, তাহলে পাকিস্তানই হয়তো বা চলে যাবে ফাইনালে এবং চ্যাম্পিয়নও হয়ে যেতে পারে। এমনটা যদি ঘটে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ, ১৯৯২ সালের ভাগ্যই যে তাদেরকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে!
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের জয়ের পর ইএসপিএন ক্রিকইনফোর অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর সিদ্ধার্থ মঙ্গা ক্রিকইনফোতেই কলাম লিখেছেন, ‘বিশ্বাস করুন! এটাই পাকিস্তান।’ যে কলামটা তিনি লিখেছেন, তার সারমর্মই হচ্ছে, ‘এটা আনপ্রেডিক্টেবল, আনবিলিভেবল পাকিস্তান। যে কোনো সময়ই তারা পাশার দান উল্টে দিতে পারে।’ ক্রিকইনফোর পাকিস্তান রিপোর্টার ওসমান সামিউদ্দিনও ঠিক একইভাবে সামনে নিয়ে আসলে ১৯৯২ সালের সঙ্গে এবারের মিলের কথা। বললেন, তাহলে কি এবারও চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান!
আবার ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অভিজ্ঞতা এবং ভাগ্যও অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে এখন পাকিস্তানকে। দুই বছর আগে ভারতের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু করেছিল সরফরাজরা। শেষ পর্যন্ত সেই ভারতকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। ২ বছর আগের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারবে কি সরফরাজরা? সময়ই বলে দেবে। আপাতত সে পর্যন্ত অপেক্ষা।
আইএইচএস/জেআইএম