দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দিল পাকিস্তান
বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে জিততেই হবে, হারলেই বেজে যাবে বিদায়ঘণ্টা- এমন সমীকরণ মাথায় নিয়েই পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কোথায় এমন ম্যাচে লড়াই করবে তারা, উল্টো একপেশে লড়াইয়ে পাকিস্তানের হেরেই গেছে প্রোটিয়ারা।
ফলে আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। পাকিস্তানের করা ৩০৮ রানের জবাবে প্রোটিয়াদের ইনিংস থেমেছে ২৫৯ রানে। পাকিস্তান পেয়েছে ৪৯ রানের জয়, বাঁচিয়ে রেখেছে সেমিতে খেলার আশা।
সবার আগে ৭ ম্যাচ খেলে ফেলা দক্ষিণ আফ্রিকার ঝুলিতে এখন পয়েন্ট সংখ্যা মাত্র ৩। পরবর্তী দুই ম্যাচে তারা জয় পেলেও সর্বোচ্চ হবে ৭ পয়েন্ট। ফলে তারা টপকাতে পারবে না ৮ পয়েন্ট নিয়ে এখন চার নম্বরে থাকা ইংল্যান্ডকে। তাই এ বিশ্বকাপে আর আশা বাকি নেই তাদের।
৩০৮ রান তাড়া করতে নেমে কখনোই মনে হয়নি এ লক্ষ্য ছুঁতে পারবে প্রোটিয়ারা। শুরু থেকেই নিয়মিতে বিরতিতে উইকেট হারিয়ে কেবল পরাজয়ের কাছেই গিয়েছে তারা। শেষপর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৫৯ রান করতে সক্ষম হয় তারা। হেরে যায় ৪৯ রানের ব্যবধানে।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৩ রানের ইনিংস খেলেন অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। এছাড়া কুইন্টন ডি কক ৪৭, ফন ডার ডুসেন ৩৬, ডেভিড মিলার ৩১, ক্রিস মরিস ১৬ ও আন্দিল ফেলুকায়ো অপরাজিত থাকেন ৪৬ রান করে।
পাকিস্তানের পক্ষে বল হাতে ৩টি করে উইকেট নেন ওয়াহাব রিয়াজ ও শাদাব খান। এছাড়া মোহাম্মদ আমির ২ ও শাহীন শাহ আফ্রিদির ঝুলিতে যায় ১টি উইকেট।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে হারিস সোহেল আর বাবর আজমের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করে প্রোটিয়াদের সামনে ৩০৯ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় পাকিস্তান।
প্রোটিয়া অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসির সঙ্গে কয়েন নিক্ষেপে জেতার পর ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের উইকেটের চারদিকে পিটিয়ে অসাধারণ খেলে যাচ্ছিলেন দুই পাক ওপেনার ফাখর জামান এবং ইমাম-উল হক।
১৪.৫ ওভার পর্যন্ত টেকেন দুই ওপেনার। লুঙ্গি এনগিদি, কাগিসো রাবাদা, ক্রিস মরিস কিংবা আন্দিল পেহলুকাইয়োদের গতির ঝড় কোনো বিপদেই ফেলতে পারেনি পাকিস্তানের দুই ওপেনারকে। অবশে প্রোটিয়া অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসি আক্রমণে নিয়ে আসেন দলের একমাত্র লেগি ইমরান তাহিরকে।
বোলিংয়ে এসে প্রথম ওভারেই পেলেন সাফল্যের দেখা। ওভারের পঞ্চম বলে ফাখর জামান চেয়েছিলেন শট খেলার জন্য। কিন্তু হঠাৎ মাঝ ব্যাটে লেগে স্লিপে ক্যাচ উঠে যায় এবং প্রথম স্লিপে সেটি ধরেন হাশিম আমলা। এ সময় ফাখর ছিলেন ৫০ বলে ৪৪ রানে। ৬টি বাউন্ডারির সঙ্গে একটি ছক্কাও মারেন তিনি।
ওপেনিং জুটি ভাঙার পর ইমরান তাহিরের লেগ স্পিন ভেলকি অব্যাহত থেকেছে তারপরও। নিজের চতুর্থ ওভারে ইমরান ফিরিয়ে দিলেন পাকিস্তানের আরেক ওপেনার ইমাম-উল হককে। তিনি আউট হন ৫৮ বলে ৪৪ রান করে।
দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরলেন ইমরান নিজেই। নিজের বলেই নিজের ক্যাচ। এক প্রকার ঝাঁপিয়ে পড়েই উইকেটের ওপর এক হাতে বলটি তালুবন্দী করলেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই লেগ স্পিনার। এরপরই পাগলের মত ছুটলেন তিনি, উদযাপন করলেন উইকেট পাওয়ার আনন্দ।
ইমাম-উল হক আউট হয়ে যাওয়ার পর মাঠে নামেন মোহাম্মদ হাফিজ। বাবর আজমের সঙ্গে জুটি বাধেন তিনি। ৪৫ রানের জুটি গড়ার পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তারা। ৩৩ বলে ২০ রান করে এইডেন মারক্রামের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান মোহাম্মদ হাফিজ।
এরপরই প্রোটিয়াদের সামনে পাহাড়ের মত দাঁড়িয়ে যান হারিস সোহেল এবং বাবর আজম জুটি। দু’জন মিলে গড়েন ৮১ রানের জুটি। দলীয় ২২৪ রানের মাথায় আউট হয়ে যান বাবর আজম। ৮০ বলে তিনি করেন ৬৯ রান। ৭৬টি বাউন্ডারির মার মারেন তিনি।
এরপর ইমাদ ওয়াসিমকে নিয়ে জুটি বাধেন হারিস সোহেল। এ দু’জনের ব্যাটে গড়ে ওঠে ৭১ রানের জুটি। ১৫ বলে ২৩ রান করেন ইমাদ ওয়াসিম। পরের ব্যাটসম্যানরা ছিলেন শুধু আসা যাওয়ার মিছিলে।
আট নম্বরে ব্যাট করতে নামেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। ২ বলে ২ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। ইনিংস শেষ হওয়ার খানিক আগে ৫৯ বলে ৮৯ রান করে আউট হন হারিস সোহেল। ৯টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৩টি ছক্কার মার মারেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ৩০৮ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান।
প্রোটিয়া পেসার লুঙ্গি এনগিদি ৬৪ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। ইমরান তাহির নেন ২ উইকেট। ১ উইকেট করে নেন আন্দিল পেহলুকাইয়ো এবং এইডেন মারক্রাম।
এসএএস