শুধু ছেলেকে নিয়ে নয়, দলের সবাইকে নিয়েই চিন্তা সাকিবের বাবার

পবিত্র কুন্ডু
পবিত্র কুন্ডু পবিত্র কুন্ডু , বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০৭:১৪ পিএম, ১৮ জুন ২০১৯

তাহলে কি ছোট টেনশন থেকে বড় টেনশনের বৃত্তে পড়তে যাচ্ছেন সৈয়দ মসরুর রেজা? দেশের মাটিতে এমনিতেই স্টেডিয়ামে গিয়ে ছেলের খেলা তিনি দেখেন না। বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসেও ছেলের খেলা তার প্রায়ই দেখা হয় না। ওই যে টেনশন!

এই বুঝি ক্যাচ উঠে গেল, এই বলটিতেই হয়তো এলবিডব্লু বা বোল্ড হয়ে গেল সে, কিংবা বেধড়ক পিটুনি খেল বোলিংয়ে- বুকের মধ্যে এমন একটা ধুকধুকানি চলতেই থাকে নিরন্তর। ম্যাচ শেষ হলে তবেই শান্তি। ছেলের কৃতিত্বে জয় এলে তো কথাই নেই। পরে ম্যাচের হাইলাইটস দেখে নেন।

এই মসরুর রেজা ছেলের খেলা দেখতে আগামীকাল (বুধবার) যাচ্ছেন ইংল্যান্ড। যেন তেন খেলাও তো নয়, বিশ্বকাপ ক্রিকেট। যেখানে জাতীয় গর্বের একটা পতাকা উড্ডীন তার ছেলের হাতেই। সুতরাং বড় টেনশন তো বটেই।

তবু মসরুর যাচ্ছেন, ছেলের ইচ্ছায়ই। সঙ্গে স্ত্রী শিরীন আক্তার। বিশ্বকাপের দীর্ঘ যাত্রায় এই পারিবারিক আবহ ছেলেকে যাতে গৃহকাতরতা পেয়ে বসতে না দেয় একটুও। অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে লিগ পর্বের বাকি চারটি ম্যাচ মাঠে বসে দেখে তবেই ফিরবেন।

আগামীকাল (বুধবার) সকালে বাংলাদেশ বিমানে উড়ান ধরবেন, নটিংহামে পৌঁছে যাবেন পরদিন সকালে। ওইদিন অর্থাৎ ২০ জুনই সেখানে (ট্রেন্ট ব্রিজ) বাংলাদেশের ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।

বিখ্যাত ছেলের বাবা বলে অনেকেই তাকে চেনেন। তবু আরেকবার তার পরিচয় দেওয়া যাক। মসরুর রেজা হলেন সাকিব আল হাসানের বাবা। বেশ ভালো পর্যায়ে ফুটবল খেলেছেন। মাগুরা জেলা দলে অপরিহার্য মিডফিল্ডার ছিলেন একসময়। অনেকেই মনে করেন, বাবার খেলোয়াড়ি সত্তার ডিএনএ ছেলের শরীরে বহমান বলেই সাকিব আজ এত বড় খেলোয়াড়।

কিন্তু সাকিব তো বাবার মতো ফুটবলে যাননি, বেছে নিয়েছেন ক্রিকেট। সেই ক্রিকেটে দেশবাসীর আবেগকে কী উথাল-পাতালই না করে দেন সাকিব! তার মাধ্যমেই যেন নিঃশ্বাস ফেলে বাংলাদেশের ক্রিকেট। কাল যেমন ফেলল এবং যার শেষটি ছিল বড় সুন্দর। সাকিবের অপরাজিত ১২৪ আর লিটনের অপরাজিত ৯৪ রানের কল্যাণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩২২ রানের পাহাড় কী অনায়াসেই টপকে বাংলাদেশ জিতল ৭ উইকেটে। বেঁচে থাকল সেমিফাইনালের আশা।

ছেলের অসাধারণ নৈপুণ্যে মসরুর খুশি, বুক থেকে একটা পাথরভার নেমে যাওয়ার স্বস্তি পেয়েছেন গভীর রাতে। তবে ছেলের চেয়ে তার মুখে যেন লিটন দাসের প্রশস্তিই বেশি, ‘সাকিব তো ভালো খেলেছেই। তবে লিটনের অবদানও দুর্দান্ত। একটা প্রান্তে ও ছিল বলেই তো সাকিব ম্যাচটা বের করতে পেরেছে। দারুণ খেলেছে ছেলেটা। বাংলাদেশ দলের অন্য ১৪টি ছেলেকেও কিন্তু আমি আমার সন্তানের মতো দেখি। অন্যদের কৃতিত্বেও আমার সমান গর্ব হয়। ওরা সবাই যদি একটা দল হিসেবে খেলে বাংলাদেশ ভালো করে, আমার তখন আরও ভালো লাগে।’

southeast

এ প্রসঙ্গ ধরেই মসরুরের বুকে আক্ষেপ জাগে, ‘ইস! নিউজিল্যান্ড ম্যাচেও যদি সাকিবের সঙ্গে লিটনের মতো কেউ থাকত আরও ২০–২৫টা রান যোগ হতো। আমরা হয়তো জিতেও যেতে পারতাম। তাহলে সেমিফাইনালের আশাটা আরও উজ্জ্বল হতো।’ আশাটা আবার জেগে উঠেছে বলেই মনে করেন সাকিবের বাবা, তবে সেটিকে বাস্তবে রূপ দিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের মতোই পুরো দলকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এক হয়ে লড়তে হবে।

যতই বলি, সাকিবের হাতেই বাংলাদেশের আলোর মশাল, সাকিবই গোটা দলকে পথ দেখাচ্ছেন, পারলে তার অনুপ্রেরণায়ই দল এগিয়ে যাবে, মসরুর ‘না, না’ করেন। তার মতে, ‘সাকিব একটা উপলক্ষ মাত্র। ও ফর্ম ফিরে পেয়েছে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু দল জিতছে সবার অবদানেই।’

চার ম্যাচ খেলে টানা দুটি করে অর্ধশতক ও শতক নিয়ে ৩৮৪ রান। এই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। কোনো বোলারই চোখ রাঙাতে পারছেন না সাকিবকে। পাঁচটি উইকেটও আছে ভাণ্ডারে। এই বিশ্বকাপটাই তো সাকিবের হয়ে যেতে পারে! মসরুরের কণ্ঠে টেনশন ধরা পড়ে, ‘দেখা যাক! কী হয়।’

সাকিবের বনানী ডিওএইচএসের বাসায় বসে একপলক টিভিতে চোখ বুলিয়েছিলেন কাল। তাতেই সাকিবের একটা ক্যাচ উঠতে দেখেন, ফিল্ডারের একটু সামনে পড়ে বলে রক্ষা। ওই যে ওপর থেকে নিচে নেমে আসেন, ঘরে ফেরেন জয় প্রায় নিশ্চিত হওয়ার পর। বাংলাদেশ জিততেই তার স্বস্তি।

এবার খেলা দেখতে হবে মাঠে বসে। টেনশন তো আরও বেশি? ‘খুব টেনশন হবে। তবে আমার টেনশন দলের সবাইকে নিয়ে। একা সাকিবকে নিয়ে নয়’- মসরুরের এই কথাটা আসলে পুরো দেশের। টেনশন আসলে দলের সবাইকে নিয়ে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে দুর্দান্ত জয় এই বিশ্বাসটাও এনেছে যে, বাংলাদেশ দল হিসেবে খেললে টেনশন থাকে না। শেষে জয়টাও ধরা দেয় সহজেই।

লেখক : বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।