নিজ দেশের উইকেট না চিনলে, ইংলিশ কোচ রেখে লাভ কি?
লন্ডনের কেনিংটন ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৩০ রান করার পর একই মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে উইকেট চিনতে ভুল হয়েছিল বাংলাদেশের। উইকেটের আচরণ আর গতিপ্রকৃতি বুঝতে না পারার কারণেই অ্যাপ্রোচটা ছিল বেশি আক্রমনাত্মক।
কিন্তু আসলে সেই ম্যাচের পিচ ৩৩০ রানের মত ছিল না, সেটা ছিল ২৭০ থেকে ২৮০'র পিচ। অথচ টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে নাকি বলা হয়েছিল, এটা সাড়ে তিনশো রানের উইকেট। তাই মিডল অর্ডারে মিঠুন আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে চালিয়ে খেলতে বলাও হয়েছিল।
ভেতরের খবর, খোদ জাতীয় দলের ইংলিশ কোচ স্টিভ রোডসই নাকি ঐ বার্তা দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। হাতে ৪-৫ উইকেট অক্ষত থাকার পর মিডল অর্ডারকে বলা হয়েছিল হাত খুলে খেলতে। আর তাতেই বুমেরাং হয়। মিঠুন আর রিয়াদ সেট হয়েও বেশি চালিয়ে খেলতে গিয়ে আউট হয়ে যান।
ব্যক্তিগত কথা বার্তায় এর ওর মুখ থেকে কথটি আগেই জানাজানি হয়ে গিয়েছিল। তবে কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে না বলায় তাকে উদ্ধৃতও করা যায়নি। অবশেষে আজ প্রেস কনফারেন্সে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা নিজেই বললেন,
'সত্যি কথা বলতে কি আমরা নিউজিল্যান্ডের সাথে ম্যাচে উইকেটের চরিত্র বুঝতে আর আচরণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিতে গিয়ে একটু ভুল করে ফেলেছিলাম। ওটা আসলে ছিল ২৭০-২৮০ রানের পিচ। আমরা সেদিন ঠিক তা ধরতে পারিনি।'
আগের তিন ম্যাচের চালচিত্র বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের সাথে ম্যাচের চালচিত্র নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মাশরাফি আরও বলেন, 'আমাদের অ্যাপ্রোচ ছিল ভুল। এটাও বিগ স্কোরিং উইকেট ভেবে খেলতে গিয়ে মাঝপথে দ্রুতই কয়েকটি উইকেট খুইয়েছি।'
প্রশ্ন উঠলো এই ভুলটা আসলে কার? দলে একজন ইংরেজ কোচ। যিনি কাউন্টি ক্রিকেট খেলেছেন। কোচিংয়ের দায়িত্বও পালন করেছেন। সেই ইংলিশ কোচ থাকতে ইংলিশ কন্ডিশন বুঝতে না পারা এবং পিচের চরিত্র বুঝে উঠতে পারেননি? তা কেন হবে?
তাহলে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে একজন ইংলিশ কোচ রেখে লাভ কি হলো? তিনি যদি উইকেটের চরিত্রই না বুঝবেন, তাহলে তাকে হেড কোচের দায়িত্ব দেয়ার যৌক্তিকতাই বা কি? মাশরাফি জবাব দিতে গিয়ে পাশ কাটানোর চেষ্টা করলেন। তাতে বোঝা গেল তিনি মূলত বিতর্ক এড়াতেই অমন করলেন।
দলে একজন বিদেশি কোচ আছেন, যিনি ইংলিশ এবং তার দেশেই খেলা। তিনি দলের সাথে হেড কোচ হিসেবে থাকতেও পিচ মিস জাজ ও মিস রিড করা? তাহলে ইংলিশ হেড কোচ রেখে লাভ হলো কি? মাশরাফি কোচকে বাঁচিয়ে নিয়ে গেলেন এ যাত্রায়।
বলে দিলেন, 'না না , মাঠের বাইরে থেকে তেমন চরিত্র বোঝা যায় না। যারা মাঠে খেলেন, তারাই ভাল বোঝেন উইকেটের চরিত্র কি? কাজেই আসল দায়টা আমদের। যারা মাঠে খেলেছি তাদের। হয়ত আমরাই উইকেট বুঝতে পারিনি। কোচ মাঠে খেলেন না, খেলেননিও। তিনি বাইরে থেকে কি করে বুঝবেন এ পিচের চরিত্র কি?'
সেটা যদি ভিনদেশী কোচ হতো তাহলে কথা ছিল। কিন্তু কোচ তো ইংল্যান্ডেরই। তার তো অবশ্যই জানা উচিৎ ছিল বিশ্বকাপের কোন ভেন্যুর বিশেষ করে বাংলাদেশের খেলাগুলো যে সব মাঠে হবে, সেই সব পিচের চরিত্র জানা এবং পরিষ্কার ধারণা রাখা। কিন্তু জানা গেলো, স্টিভ রোডসের সেই ধারণাটা নেই। তাহলে তাকে এত অর্থ খরচ করে কোচ করে আনা কেন?
এআরবি/এসএএস