সেমির সম্ভাবনা এখনও শেষ হয়ে যায়নি : হাবিবুল বাশার

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা ব্রিস্টল, ইংল্যান্ড থেকে
প্রকাশিত: ০৭:৩৪ পিএম, ১২ জুন ২০১৯

সেই কার্ডিফে পাকিস্তানের সাথে পরিত্যক্ত হওয়া প্রস্তুতি ম্যাচ থেকেই দলের সাথে আছেন হাবিবুল বাশার। মঙ্গলবার ব্রিস্টলে বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার ম্যাচ দেখতে গ্লস্টারশায়ার কাউন্টি ক্লাব মাঠে সারা দিন কাটিয়েছেন বাংলাদেশ দলের অন্যতম এই নির্বাচক।

বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় আর সবার মত হাবিবুল বাশারের হতাশাও কিছু কম নয়; কিন্তু আর সবার মত তারও ওই এক কথা, আসলে প্রকৃতির ওপর তো কারো হাত নেই! আর বৃষ্টির বৈরি আচরণে ম্যাচ পন্ড হলে কার কি করার আছে?’

গত ২৪ মে দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে আসা নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন ভারতের সাথে প্রস্তুতি ম্যাচ আর বিশ্বকাপের চার ম্যাচ শেষে আজ সন্ধ্যার ফ্লাইটে ফিরে যাচ্ছেন দেশে। তিনি দেশে ফেরার পর নির্বাচক কোটায় জাতীয় দলের সফর সঙ্গী হবেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। শেষ ম্যাচ পর্যন্ত মাশরাফি বাহিনীর সঙ্গে থাকবেন প্রধান নির্বাচক।

দলের সাথে প্রায় ২০ দিন ছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন। দেখেছেন তিনটি বিশ্বকাপের ম্যাচ। কেমন ছিল টাইগারদের পারফরমেন্স? সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন পূরণ হবে কি? সে লক্ষ্য পূরণে করনীয়ই বা কি?

দুই বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতায় পূর্ণ আর ২০০৭ সালে বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়া হাবিবুল বাশার সুমন আজ সকালে জাগো নিউজের সাথে আলাপে সে সব প্রশ্নর জবাব দিতে গিয়ে একটি কথাই বলেছেন জোর দিয়ে। তাহলো, ‘আমার বিশ্বাস, এবারের বিশ্বকাপে অনেক ঘটনা ঘটবে। আপসেটের ঘটনাও থাকবে। একদম টপ ফেবারিটের যে কোন একটি দলকে ছিটকে পড়তে হতে পারে সেমিফাইনালের আগেই। আর আমার বিশ্বাস আমাদের বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিঃশেষ হয়ে যায়নি। এখনো সেমিতে খেলার সুযোগ আছে।’

তবে সেই সুযোগ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে হাবিবুল বাশারের চিন্তা ও লক্ষ্য একটু অন্যরকম। বেশিরভাগই টার্গেট করে আগানোর পক্ষে। যেমন ভাবা হচ্ছিল- শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর পাকিস্তানকে টার্গেট করে হারানোর। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার সাথে ম্যাচ বৃষ্টিতে পন্ড হওয়ায়, জয়ের বদলে এক পয়েন্ট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে টাইগারদের। এখন শুধু আফগানিস্তান, পাকিস্তান আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাবো- এমন লক্ষ্য নিয়ে খেললে হবে না। তাহলে সামনে আগানো যাবে না। কাঙ্খিত লক্ষ্যেও পৌঁছানো সম্ভব হবে না।’

তাহলে কি করা উচিৎ? বাশারের পরামর্শ, ‘এখন আর কোন নির্দিষ্ট দলকে টার্গেট করে আগালে চলবে না। লক্ষ্য থাকতে হবে খুব ভাল খেলার। ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের সব শাখায় জ্বলে ওঠার দৃঢ় সংকল্প আর ভাল করার জোর তাগিদও দরকার। তাহলেই আমরা যাকে-তাকে হারাতে পারবো। আর আমরা যদি ধরেই নেই, আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর পাকিস্তান ছাড়া আর কাউকে হারাতে পারবো না- তাহলে ভালোর চেয়ে খারাপ হতে পারে। তখন লক্ষ্য পূরণ হওয়া কঠিন হবে। এই যেমন আমাদের লক্ষ্য ছিল শ্রীলঙ্কাকে হারাবো। এখন বৃষ্টি এসে সব নষ্ট করে দিল। এক পয়েন্ট হাতছাড়াও হলো। সামনে আমরা যাদের মনে মনে টার্গেট করেছি, সেই ওয়েষ্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচেও যে প্রকতি বাধা হয়ে দাড়াবে না, আগামী ম্যাচগুলোতেও যে এমন ঘটনা ঘটবে না, তাইবা কি করে বলবো? এরচেয়ে আমরা যদি প্রতিপক্ষকে সেট না করে নিজেদের সেরাটা উপহার দেয়ার কথা ভাবি, তাহলে আমার মনে হয় ভাল হবে। আমরা যদি সামর্থ্যের সেরাটা দিয়ে মাঠে ভাল খেলতে পারি তখন আপনা-আপনি প্রতিপক্ষের চেয়ে শ্রেয়তর পারফরমেন্স হবে। আর নির্দিষ্ট দিনে প্রতিপক্ষের চেয়ে শ্রেয়তর পারফরমেন্স করার অর্থ জিতে যাওয়া। সে লক্ষ্যে এগোনোই অধিক যুক্তিযুক্ত বলে আমার বিশ্বাস।’

দল টার্গেট না করে সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দিলে যে সাফল্য ধরা দেয়, তার প্রমাণ মিলেছে আমাদের প্রথম ম্যাচে। ভাল খেলতে পারলে যে কঠিন প্রতিপক্ষর বিপক্ষেও জেতা যায়, তার প্রমাণও কিন্তু আমরা দিয়েছি। আমরা শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিয়েছি। বলা যায় উড়ন্ত সূচনা। তবে সেটা যে একদম টার্গেট সেট করে প্রোটিয়াদের হারাতেই হবে, না হারালে চলবে না- এমন পণ থেকে হারাইনি। ভাল খেলেছি। ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের সব শাখা ক্লিক করেছে, আমরা সামর্থ্যের প্রায় সেরাটা উপহার দিতে পেরেছি। তাই জিতেছি।’

বাশারের মূল্যায়ন, ‘ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচটি ছাড়া এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ যে তিনটি ম্যাচ খেলেছে, তার দুটিতে বেশ ভাল খেলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দল জিতেছে বলে পারফরমেন্স যত উজ্জ্বল মনে হয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সাথে জয় ধরা না দেয়ায় ততটা উজ্জ্বল মনে হচ্ছে না। আসলে কিন্তু তা নয়। কিউইদের বিপক্ষেও আমরা বেশ ভাল খেলেছি।

টার্গেটটা আর ২০-২৫ রান বেশি করতে পারলেই হয়ত নিউজিল্যান্ডের সাথে ম্যাচটিও আমরা জিততে পারতাম। আর আমি বলে দিতে পারি, নিউজল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলে আমাদের অবস্থান আরও অনেক সুসংহত থাকতো। সেমিতে খেলার সম্ভাবনাও থাকতে বেশি।’

হাবিবুল বাশারের মনে হয়, ওই ম্যাচে উইকেটের চরিত্র বুঝতে একটু সমস্যা হয়েছে বাংলাদেশের। এ সম্পর্কে তার ব্যাখ্যা, ‘আসলে ওভালে প্রথম ম্যাচে আমরা ৩৩০ প্লাস রান করেছি। তাই পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের সাথেও তেমন স্কোরের চিন্তা ছিল সবার মাথায়। কিন্তু পরে বোঝা গেছে, সেটা আসলে ৩০০ প্লাস রানের পিচ ছিল না। ঐ উইকেটে ২৭০ প্লাস’ই ছিল লড়াকু পুঁজির। সেটা ম্যাচ চলাকালীন উইকেটের আচরণের এই রদবদল বা রূপবদলটা ভালমতো ধরতে পারা এবং যত দ্রুত সম্ভব লক্ষ্য, পরিকল্পনা আর কৌশল নির্ধারণটা এবারের বিশ্বকাপে সাফল্যের অন্যতম পূর্বশর্ত বলে মনে করেন বাশার।’

তার শেষ কথা, যুক্তরাজ্যের আবহাওয়ার মত উইকেটের আচরণও খানিক রহস্যময়! যেমন কার্ডিফে ইংল্যান্ডের সাথে খেলার আগে পরপর দুই দিন টানা বৃষ্টি হয়েছে। ওই দুইদিন পিচ ছিল হুপার কভারে ঢাকা। রোদের ‘র’ও ছিল না। ভাবা হচ্ছিল, এ উইকেট কিছুটা হলেও প্রথম দিকে ঘণ্টা খানেক অন্তত বোলারদের সহায়তা করতে পারে। বল একটু আধটু সুইংও করতে পারে; কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। বল একটুও ম্যুভ করেনি। কাজেই পিচের আচরণ ঠাওরে ওঠাও কঠিন এখানে।’

এআরবি/আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।