ভারত-পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে কোন দুই দল টার্গেট সুজনের

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা ব্রিস্টল, ইংল্যান্ড থেকে
প্রকাশিত: ০১:৩৯ এএম, ১০ জুন ২০১৯

‘দুর্দান্ত, উড়ন্ত আর উদ্ভাসিত’ সূচনা যাই বলা হোক না কেন- কম বলা হবে। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে আসা মাশরাফির দলের শুরুটা হয়েছিল আশাতীত ভালো। দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলের বিপক্ষে নিজেদের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি ৩৩০ রান করে জয় যে ছিল অনেক বড় ও স্মরনীয় সাফল্য!

এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দিনের সেই ঔজ্জ্বল্য হয়ত ছিল না, ব্যাটিংটা তেমন হয়নি; কিন্তু বোলিংটা হয়েছে কল্পনার চেয়েও ভাল। ২৪৪ রানের মাঝারী পুঁজি নিয়ে কিউদের নাড়া দেয়া যায়, তাদের ভিত কাঁপিয়ে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করা সম্ভব- সে সত্যের দেখাও মিলেছে ওভালে দ্বিতীয় ম্যাচে।

কিন্তু সাফল্যের পয়মন্তঃ কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পারফরমেন্সের গ্রাফটা হঠাৎ নীচে নেমে গেছে। ব্যাটিং-বোলিং আর ফিল্ডিং ভাল হয়নি মোটেই। সাকিবের ব্যাটিংটাই যা ছিল আশার প্রদীপ। আর পুরো দল ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত।

এই অনুজ্জ্বল পারফরমেন্স এবং ১০৬ রানের বড় হার ভক্তদের করেছে আশাহত। তারা হতাশায় ভেঙ্গে না পড়লেও খানিক হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। আর নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন, ‘আচ্ছা! এখান থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা কতটুকু? মাশরাফির দল কি আবার মাথা তুলে সামনে এগিয়ে যাবে?’

যাদের মনে এমন প্রশ্ন উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে, তাদের জন্য আশার আলো। জাতীয় দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন মনে করেন, আশাভঙ্গের ও আশাহত হবার কিছুই নেই। এখনো প্রচুর সময় বাকি আছে। ছয়-ছয়টি ম্যাচ বাকি এখনও। এখান থেকে সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা আছে যথেষ্ঠ।

আজ ব্রিস্টলে এসে বিকেলে (স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটায়র কিছু পরে, বাংলাদেশে তখন সময় রাত সাড়ে দশটা) জাগো নিউজের সাথে বাংলাদেশের এখনও পর্যন্ত হওয়া তিন ম্যাচের পারফরমেন্স ও সামনের ম্যাচগুলোর সম্ভাবনা নিয়ে অনেক খোলামেলা কথা বলেছেন খালেদ মাহমুদ সুজন।

জাগো নিউজের পক্ষ থেকে প্রশ্ন ছিল, আচ্ছা! বর্তমান অবস্থায় আপনারা কি খানিক আশাহত, এখনো সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা কতটা?

সুজনের জবাব, ‘কে কি ভাবছেন, আর কার কি মত জানি না। আমি বিশ্বাস করি, কার্ডিফে আমাদের যতটা অনুজ্জ্বল আর কমজোরি দল মনে হয়েছে, আমরা তত খারাপ দল নই। এরচেয়ে অনেক ভাল দল। গতকাল যা খেলেছে মাশরাফিরা, তারচেয়ে অনেক ভাল খেলার সামর্থ্য আছে ওদের। আসলে আমি নিজ দলের ক্রিকেটারদের সাফাই গাইতে চাই না। ইংল্যান্ড এখন অনেক বেশি ভাল দল। যাদের ব্যাটিং ও বোলিং অনেক বেশি সমৃদ্ধ। শক্তিশালী। এই দলকে হারানো এখন খুব কঠিন কাজ।’

সুজন মনে করেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফিল্ডিংটা হয়েছে খুব বাজে। তিনি বলেন, ‘তবে আমরা এই ম্যাচে আরও ভাল খেলতে পারতাম। খেলা উচিৎও ছিল। ব্যাটিং-বোলিং যেমন তেমন, আমরা খুব বেশি বাজে ফিল্ডিং করেছি। ফিল্ডিংটা বেশি খারাপ হয়েছে। সেটা স্কোর লাইনের ওপর প্রভাবও ফেলেছে প্রচুর। বোলিংয়েও ঠিক সময়মত কাজ হয়নি। তারপরও ব্যাটিংয়ে সাকিব ছাড়া আর কেউ কিছু করতে পারেনি। তাই ব্যবধানটা বেশি হয়েছে।’

দুটি ম্যাচে জয় ধরা না দিলেও সুজন মনে করে প্রথম দুই ম্যাচে দল বেশ ভাল খেলেছে। ব্যাটিং ও বোলিং ভালই হয়েছে। আর ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচটি তাই তার ভাষায় খারাপ দিন ছিল। সাকিবের ব্যাটিং ছাড়া আর কোন কিছুই ভাল হয়নি।

লড়াকু মানসিকতার খালেদ মাহমুদ সুজন নিজে থেকে বলে ওঠেন, ‘আমি অল্পতে ভেঙ্গে পড়ার পাত্র নই। আর ভেঙ্গে পড়ার কিছু নেইও। আমরা এখনো কক্ষপথেই আছি। আমাদের সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তাই চিন্তার কিছু নেই। শ্রীলঙ্কার সাথে জিততে পারলেই আবার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যাবে।’

সুজন বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘আমাদের আরও ছয়টি খেলা বাকি আছে। এর মধ্যে চারটি ম্যাচ জিতলে শেষ চারে থাকার সম্ভাবনা থাকবে। ওই চার ম্যচ জিতলেই চলে যাব সেমিতে, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে। তখন হয়ত কয়েকটি দলের পয়েন্ট সমান হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে অন্য দলগুলোর সাথে হেড টু হেডটা গুরুত্বপূর্ণ হবে। সেটা থেকে মাথায় রেখেই আমাদের এখন থেকে হিসেব কষে এগুতে হবে।’

সামনে যে ছয় ম্যাচ আছে, তার মধ্যে শক্তি ও সামর্থ্যে তুলনামূলক কম ও বাকিদের চেয়ে পিছিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কা আর আফগানিস্তানকে হারাতেই হবে। এর পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, ভারত আর অস্ট্রেলিয়ার মধ্য থেকে আরও দুই দলকে হারানোটা খুব জরুরি।

সুজন বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে আমাদের শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তানের সাথে ভারত, পাকিস্তান আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টার্গেট করে এগুতে হবে। শেষ তিন দলের দুই দলকে হারনো ছাড়া সেমিতে খেলার সম্ভাবনা তৈরি করা কঠিন। এই দলগুলোকে বলে-কয়ে হারানো কিন্তু কঠিন। তবে অসম্ভব নয়। এদের সবাইকে হারানোর রেকর্ড আছে আমাদের। এবারের বিশ্বকাপে ভাল জায়গায় যেতে হলে আবার জিততে হবে।’

তবে সেমিতে খেলার বিষয়ে সুজনের একটা নিজস্ব একটা মতবাদ আছে। তাহলো, তিনি মনে করেন না, বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলতেই হবে, না হলে সব শেষ হয়ে যাবে। এমন ভাবার কোনই কারণ নেই।

সুজনের ভাষায়, ‘আমরা গত কয়েক বছর বেশ ভাল ক্রিকেট খেলেছি। এবারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে সাকিবের ব্যাটিংটুকু বাদ দিলে হয়ত সামগ্রিক পারফরমেন্স ভাল হয়নি; কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচ যথেষ্ঠ ভাল খেলেছি। কাজেই তিন ম্যাচের মধ্যে যখন দুটি ম্যাচের পারফরমেন্স উজ্জ্বল ছিল, তখন কোনোভাবেই বলা যায় না আমরা বিশ্বকাপে খারাপ খেলেছি। আমার মনে হয় ইংল্যান্ডের সাথে উই হ্যাড এ ব্যাড ডে। দিনটি আমাদের ছিল না। তাই কোন কিছু ভাল হয়নি। আমার বিশ্বাস, এই অন্ধকার কেটে যাবে। আবার আমরা ঠিক জয়ের পথ খুঁজে পাব। তখন দেখবেন আমার চনমনে দল।’

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।