ওভালের সরব বাংলাদেশ সমর্থকদের নীরব সময় কাটলো কার্ডিফে

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা কার্ডিফ, ওয়েলস থেকে
প্রকাশিত: ১০:০৩ পিএম, ০৮ জুন ২০১৯

২ জুন লন্ডনের ওভালে পত পত করে উড়লো লাল সবুজ পতাকা। বাংলাদেশ-বাংলাদেশ ধ্বনি, সাকিব-মাশরাফি ধ্বনিতে মুখরিত ছিল ওভাল মাঠ ও তার আশপাশ।

৫ জুন মাঠের লড়াইয়ে প্রায় সমান তালে লড়েও শেষপর্যন্ত টাইগাররা কিউইদের কাছে হার মানলেও বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকরা কিন্তু হারেননি। ওভাল সেদিনও মেতে ছিল বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকদের গগন বিদারী চিৎকার, বাংলাদেশ-বাংলাদেশ ধ্বনিতে।

লন্ডনে লাখ লাখ বাঙালি। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওভাল ছিল বাংলাদেশি ভক্ত ও সমর্থকে পরিপূর্ণ। কিন্তু কার্ডিফে? ওয়েলসের রাজধানীর মোট জনসংখ্যাই সাকুল্যে সাড়ে তিন লাখের মত। কাজেই বাংলাদেশির সংখ্যা অনেক অনেক কম।

তারপরও আজ (শনিবার) সোফিয়া গার্ডেনে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাশরাফি বাহিনীর খেলা দেখতে প্রিয় জাতীয় দলকে অকুন্ঠ সমর্থন জানাতে এসেছেন কয়েক হাজার বাংলাদেশি। সেটা আনুপাতিক হারে লন্ডনের চেয়ে কম হলেও লোক সংখ্যার বিচারে কম নয়। বরং বেশি। তারা যথারীতি প্রিয় জাতীয় পতাকা হাতে, লাল সবুজ জার্সি গায়ে চেপেই এসেছেন প্রিয় দলকে অনুপ্রাণিত-উজ্জীবিত করতে অনেক উদ্দীপক স্লোগান ছিল তাদের কন্ঠে। সাথে রং বেরঙের ব্যানারও এনেছেন কেউ কেউ। যার একটিতে লিখা ছিল ‘খেলা হবে। দৌড়া বাঘ আইলো।’

কঠিন সত্য হলো, আজ কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে প্রথম সেশনে অন্তত বাঘের গর্জন শোনা যায়নি। তাই প্রতিপক্ষ ইংলিশদের দৌড়ে পালানোর অবস্থাও তৈরি হয়নি। বরং বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকদের আজকের প্রথম সেশনটি কাটলো বড়ই নিরুত্তাপ। এক কথায় বড্ড খারাপ সময় কাটালেন ভক্তরা। মাঠে এসেও মন মত হৈ চৈ করতে পারেননি। প্রিয় লাল সবুজ পতাকা উঁচিয়ে ধরে ওভালের মত হৈ চৈ করতে পারেননি তেমন। ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে আকাশ বাতাসও কেঁপে ওঠেনি। সাকিব-মাশরাফি নামে ধ্বনিও শোনা যায়নি।

কি করে যাবে? প্রথম অংশ যে জেসন রয়, বেয়ারস্টো আর বাটলারদের উইলোর দাপটে ঠাসা। প্রথম সেশনটার পুরোটাই ইংলিশদের একচ্ছত্র প্রাধান্য। তাদের উইলোর তেজ থামাতে যত ধারালো বোলিং আর উজ্জীবিত ফিল্ডিং দরকার, বাংলাদেশের বোলার ও ফিল্ডারদের তা ছিল না। তাই প্রথম সেশনেই ৩৮৬ রানের হিমালয় সমান স্কোর গড়ে রীতিমত চালকের আসনে ইংলিশরা।

অথচ এ ম্যাচের ইতিহাস আর পরিসংখ্যান পক্ষে ছিল। ইংল্যান্ড গত দুই বিশ্বকাপে পারেনি বাংলাদেশের সাথে। হেরেছে প্রতিবার। ২০১১ সালে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ২ উইকেটে আর ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে ১৫ রানে জিতেছিল টাইগাররা।

সেই সাথে ভেন্যু হিসেবে কার্ডিফও ‘পয়োমন্ত।’ দেশের বাইরে সম্ভবত একমাত্র ভেন্যু যেখানে বাংলাদেশের সাফল্যের হার ছিল শতভাগ। তাও যেনতেন দলের বিপক্ষে নয়। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাথে। আর ২০১৭ ‘তে নিউজিল্যান্ডের সাথে।

মোদ্দা কথা, বল পিচে গড়ানোর আগে কিছু হিসেব নিকেশ বাংলাদেশের পক্ষেই ছিল। সকালে মাশরাফি টস জেতার পর কেউ কেউ নড়ে চড়ে বসেছিলেন। ভেবেছিলেন, ভালই হলো। বৃষ্টির কারণে দুই দিনের বেশি পিচ কভারে ঢাকা ছিল। তাই হয়ত কিছু ময়েশ্চার জমে থাকতে পারে। তাই শুরুতে জেসন রয়, বেয়ারস্টো, জো রুট আর বাটলার-মরগ্যানদের একটু নাড়া দেয়ার বুঝি মোক্ষম সুযোগ।

কিন্তু হায়, তা আর হলো কই? শুরুর দুই তিন ওভার একটু সতর্ক ও সাবধানে খেলে তারপর ধীরে ধীরে চড়াও হলেন ইংলিশ ওপেনাররা। জেসন রয় একাই একদিকে ঝড় তুলে আগালেন। তার ঝড়ো আর বেয়ারস্টোর গাণিতিক পরিপাটি উইলোবাজির সামনে এক সময় নুয়ে পড়লো টাইগারদের বোলিং। তারপর যত সময় গড়ালো ততই বাড়লো ইংলিশদের রানের গতি।

শেষ দিকে রান চাকা এতটাই সচল হলো যে, শেষ ২০ ওভার রান উঠলো টি-টোয়েন্টির স্টাইল ও গতিতে। ঐ ৬০ বলে ওভার পিছু ১০ রান করে শেষ ১০ ওভারে যোগ হলো ১১০। আর তাতেই ইংল্যান্ডের স্কোর গিয়ে ঠেকলো ৩৮৬ ‘তে। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সব সময়ের সর্বোচ্চ (২০০৫ সালে নটিংহ্যামে ৩৯১) স্কোরের চেয়ে মাত্র ৫ রান কম।

এআরবি/এমএমআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।