কার্ডিফে সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেখা মিলবে অ্যাডিলেডের রিয়াদের?

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা কার্ডিফ থেকে
প্রকাশিত: ০৪:৫২ পিএম, ০৭ জুন ২০১৯

শক্তি-সামর্থ্য আর অবস্থানগত তারতম্য যাই থাকুক না কেন, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ম্যাচ মানেই বাংলাদেশের জয়, আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সাফল্যর প্রশংসা, স্তুতি-বন্দনা। বাংলাদেশ যে ২০১১ আর ২০১৫ সালে জিতেছে, সেই দুটি জয়ের অন্যতম রূপকার, স্থপতি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

যদিও একটিতে মানে দেশের মাটিতে ২০১১ সালের ১১ মার্চ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ইংলিশদের বিপক্ষে ২ উইকেটের অতি নাটকীয় জয়ের ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন ওপেনার ইমরুল কায়েস। বাংলাদেশের বোলারদের বিশেষ করে তিন স্পিনার নাইম ইসলাম (২/২৯), আব্দুর রাজ্জাক (২/৩২) আর সাকিব আল হাসানের (২/৪৯) স্পিন ঘূর্ণির মুখে ২২৫ রানে অলআউট হওয়া ইংলিশদের ঐ মাঝারি স্কোর টপকাতে মুখ্য ভূমিকা রাখেন তখনকার বাঁহাতি ওপেনার ইমরুল কায়েস।

তবে তামিম ইকবালের ২৬ বলে ৩৮ রানের ঝড়ো ইনিংস, সাকিব আল হাসানের দায়িত্বশীল ৩২ রান (৫৮ বলে) আর ইমরুল কায়েসের ধীর গতির কিন্তু অতি কার্যকর (১০০ বলে ৬০) ইনিংসটির পরও বাংলাদেশ হারতে বসেছিল। প্রায় হারের পথে চলেও গিয়েছিল। সেই হারা ম্যাচ জিতিয়েছিলেন আসলে রিয়াদ আর শফিউল। এক পর্যায়ে ১৬৯ রানে ৮ উইকেটের পতন ঘটে।

ঐ অবস্থায় হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ (৪২ বলে ২১), সাথে পেসার শফিউল (২৪ বলে ২৪)। তারা দুজন নবম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থাকেন। ইংলিশ বোলার ও ফিল্ডারদের শত চেষ্টা হার মানে রিয়াদ-শফিউলের দৃঢ়তায়। তারা অবিচ্ছিন্ন ৫৮ রানের জুটি গড়লে ৬ বল আগে ২ উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ।

পেসার শফিউল শেষ দিকে ১০০ স্ট্রাইক রেটে হাত খুলে খেললেও চীনের প্রাচীরের দৃঢ়তায় অপর প্রান্ত আগলে আসল কাজটি করেছিলেন রিয়াদ। সব প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান বিদায় নেয়ার পর রিয়াদ ছিলেন একদিক আগলে।

একইভাবে ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে বাংলাদেশ যখন ইংল্যান্ডকে হারায়, সেদিন ম্যাচ সেরা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এ মিডল অর্ডারের অসাধারণ সেঞ্চুরিতে আগে ব্যাট করে ২৭৫ রানের লড়িয়ে স্কোর গড়ে বাংলাদেশ।

শুরু তেমন ভাল হয়নি। ওপরের দিকে তামিম (২), ইমরুল (২) রান পাননি। ওয়ান ডাউনে সৌম্য ৪০ রানের এক ইনিংস খেললেও তারপর সাকিব ০ রানে ফিরলে আবার বিপর্যয়। সে সংকটে শক্ত হাতে হাল ধরেন রিয়াদ আর মুশফিকুর রহিম। ৯৯ রানে ৪ উইকেট পতনের পর রিয়াদ আর মুশফিক ১৪১ রানের দারুণ জুটি গড়েন। রিয়াদ ১৩৮ বলে উপহার দেন ১০৩ রানের দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস। আর মুশফিকুর রহিম খেলেন ৭৭ বলে ৮৯ রানের সাহসী ইনিংস।

আর সে কার্যকর জুটিই বাংলাদেশকে নিয়ে যায় পৌনে তিনশো রানের লড়িয়ে অবস্থানে। সেই স্কোরটাকে শেষ অবধি জয়ের জন্য যথেষ্ঠ বলে প্রমাণ করেন পেসার রুবেল হোসেন।

ম্যাচ যখন ইংলিশদের প্রায় হাতে, ঠিক তখন নিজের শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে দুই ইংলিশ অলরাউন্ডার স্টুয়ার্ট ব্রড আর জেমস এন্ডারসনকে বোল্ড করে ম্যাচ জিতিয়ে দেন পেসার রুবেল। শেষ কাজটা রুবেলের হাতে হলেও দায়িত্বপূর্ণ শতরান করে জয়ের পথ দেখানোর কাজটি করে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন রিয়াদই।

আগামীকাল (শনিবার) সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ। তাই ঘুরে ফিরে রিয়াদের কথা উঠছে। আবার জ্বলে উঠবেন রিয়াদ। সেই ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ আর ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মত ‘বিগ ম্যাচে’ আবার কথা বলবে তার ব্যাট? এ কৌতুহলী প্রশ্ন আর জল্পনা-কল্পনা অনেকের মনে।

এবারের বিশ্বকাপে শুরুটা ভালই করেছিলেন রিয়াদ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ছয় নম্বরে নেমে শেষ দিকে হাত খুলে খেলে ৩৩ বলে নট আউট ছিলেন ৪৬ রানে। সেই ইনিংসটি বাংলাদেশের ৩৩০ ‘এর ঘরে পৌঁছুতে বেশ সহায়তা করেছিল।

কিন্তু ঠিক আগের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রিয়াদ নিজের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে পারেননি। যে কিউই বোলারদের বিপক্ষে ২০১৭ সালে কার্ডিফে সাকিবের সাথে জুটিতে ম্যাচ জেতানো শতক হাঁকিয়ে দল জেতানোর অন্যতম নায়ক হয়েছিলেন, সেই দলের বিপক্ষে ৫ জুন ওভালে দেখা মিললো এক অন্য রিয়াদের। দলের প্রয়োজনে দৃঢ়তা দেখানো দূরের কথা, অতি প্রয়োজনীয় সময় উল্টো স্লথ গতিতে ব্যাট করে খেললেন দ্বিগুণ বল, ৪১ বলে করলেন ২০ রান। যা দলকে আগানোর বদলে পিছিয়েই দিয়েছিল।

‘পঞ্চ পান্ডবের’ মধ্যে সারা বছর সাকিব, তামিম আর মুশফিকের কাছে খানিক ম্লান মনে হলেও বিশ্বকাপ আর আইসিসির বড় মঞ্চে কিন্তু রিয়াদ তাদের চেয়ে একচুলও পিছিয়ে নন। বরং পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বকাপ তথা আইসিসির ইভেন্টে রিয়াদই বাংলাদেশের এক নম্বর ব্যাটিং পারফরমার। কাজেই তার ভাল খেলা, ব্যাটে বড় ইনিংস বাংলাদেশের সাফল্যের অন্যতম পূর্ব শর্ত এবং সহায়ক উপাদান হয়ে গেছে। সে কারণেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগামীকালকের বড় ম্যাচে এ রিয়াদের ব্যাটে রান চান ভক্ত-সমর্থকরা।

রিয়াদ কি তা পারবেন? 'সারা বছর যেমনই খেলিনা কেন, আইসিসি বিশ্বকাপ আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি মানেই আমার সাফল্যর আসর। একবার দুবার নয়, তিন তিন বার তার প্রমাণ দিয়েছি আমি।'-এমন ভেবে আবারো সে সত্যর প্রমাণ দিতে পারবেন রিয়াদ?

চার বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে যে ম্যাচ জেতানো শতরান করে ইংলিশদের হারাতে রেখেছিলেন অগ্রণী ভূমিকা, চার বছর পর আগামীকাল ৮ জুলাই সাফল্যের পয়োমন্ত কর্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আবার তা করতে পারবেন রিয়াদ? আবার সৌরভ ছড়াবে রিয়াদের ব্যাট? উত্তরটা সময়ের হাতেই তোলা থাক।

এআরবি/এমএমআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।