বাঘের গর্জনে কাঁপল ক্রিকেট বিশ্ব

অভিনন্দনের ভাষা কতটা মাধুর্যপূর্ণ করা যায়, কতটা ভাষার মাধুরী দিয়ে একঝাঁক বীরসেনানীকে শুভেচ্ছা জানানো যায়, আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেগুলো কে কার আগে আপলোড করবে সে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে। নিজের ফেসবুক ওয়ালে একজন মজা করে লিখে দিলেন ‌‘ফলাফল ঘোষণার আগে কোনো বিজয় উৎসব নয়’। বিজয় যখন নিশ্চিত তখন কে শোনে এসব? শেষ বল ডেলিভারির আগেই তো অভিনন্দনে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। বিশেষ করে ফেসবুক।

লন্ডনের ওভালে ততক্ষণে সব ক্রিকেটার পরিণত একটি লাল-সবুজ বৃত্তে। গ্যালারিতে বাংলাদেশ বাংলাদেশ চিৎকার। চিৎকার ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রতিটি কোণে। প্রায় আট হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত দুটি শহর ঢাকা আর লন্ডন তখন যেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উৎসবে মত্ত।

Fan

সহকর্মী আরিফুর রহমান বাবু ভাইয়ের সকালে পাঠানো খবরগুলো পড়েই জেনে গিয়েছিলাম বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ ঘিরে লন্ডন শহরে কী উন্মাদনা! কেবল লন্ডনেই নয়, ইংল্যান্ডের যেকোনো শহরে বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলতে নামা মানে যেন ভেন্যু মিরপুর কিংবা চট্টগ্রাম। ২০০৫ সালে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি কাভার করতে গিয়ে দেখেছিলাম ইংল্যান্ডপ্রবাসী বাংলাদেশিদের ক্রিকেট উন্মাদনা। রোববার ওভালে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচটি বাংলাদেশ যেন খেলল ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর শের-এ-বাংলা স্টেডিয়ামে।

জাগো নিউজে চোখ বুলিয়ে লন্ডনের ক্রিকেট উন্মাদনার ধারণা নিয়ে ঘর থেকে বাইরে পা রেখেই আঁচ করা গিয়েছিল ঢাকার উন্মাদনাটা কেমন হতে পারে। বিশ্বকাপ ফুটবলের সময়কার মতো আশপাশে নানা দেশের নানা রঙের পতাকা নেই ঠিকই। কিন্তু বহু মানুষের মন যে লন্ডনে তা ধারণা করা গেছে ঠিকই। বিকেলে টস হেরে ব্যাটিং পাওয়ার পর আলোচনা চারদিকে-কত রান করলে তা হবে দক্ষিণ আফ্রিকার নাগালের বাইরে।

বেশিরভাগেরই মত তিন শতাধিক রান চাই। নাহলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আটকানো সম্ভব নয়। তামিম-সৌম্যের ইনিংস শুরুটা আশা জাগাল। ৬০ রানে তামিম ও আর ১৫ রান যোগ না হতেই সৌম্য আউটের পর আশার আকাশে কালো মেঘ। কিন্তু দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ম্যাচটিকে নিজেদের বানিয়ে ফেললেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটমস্যান সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে-ঝানু দুই জন মিলে বাংলাদেশের ইনিংস দাঁড় করালেন শক্ত ভিতে। সেখান থেকে টাইগাররা থামল তিনশত ত্রিশ রানে।

fan-2

লক্ষ্য তিন শতাধিক রান মানেই একটা চাপ। সে চাপে দক্ষিণ আফ্রিকার ভেঙে পড়া শুরু দলীয় রান ৫০ হওয়ার আগেই। বাংলাদেশের ইনিংসে প্রথম দুই উইকেট পতনের পর কিছু সময় ছাড়া আর কখনোই ম্যাচে ফিরতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। না, বাংলাদেশের ইনিংসে না, তাদের ইনিংসে। বেশিরভাগ সময় বাংলাদেশের হাতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ থাকার আরেকটি কারণ ছিল মাশরাফির অধিনায়কত্ব। ব্যাখা দিয়ে বোঝানোর দরকার নেই, এক কথায় অসাধারণ। যোগ্য নেতা।

অধিনায়কের কৌশলী বোলার পরিবর্তনে নিয়মিত উইকেট পড়তে লাগল দক্ষিণ আফ্রিকার। আস্তে আস্তে প্রয়োজনীয় রানরেট চলে যেতে থাকল প্রোটিয়াদের নাগালের বাইরে। আর জয়ের সুবাতাস আসতে থাকল লাল-সবুজ শিবিরে। ওভালের গ্যালারিতে যখন বিজয়ের আগাম উন্মাদনা লাল-সবুজ পতাকা দুলিয়ে। মাঠে যখন বাঘ আরও হিংস্রতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর তখন বাংলাদেশের কোটি কোটি টিভি সেটের সামনে টাইগার ভক্তদের উৎসবের প্রস্তুতি।

শেষ বলের পর মুহূর্তে এক হয়ে গেল লন্ডন-ঢাকা, এক হয়ে গেল ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ। কেঁপে উঠল ক্রিকেট বিশ্ব। বাংলাদেশ বদলে দিল বিশ্বকাপের ফেবারিটদের সমীকরণ। এশিয়ার পাকিস্তান, শ্রীলংকা নাকানি-চুবানি খেয়ে শুরু করেছে বিশ্বকাপ। আফগানিস্তানও তাই। শুধু বাংলাদেশই ব্যতিক্রম। যদিও ভারতের শুরুটা এখনো দেখা হয়নি। আপাতত একটি করে ম্যাচ খেলা এশিয়ার পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও আফগানিস্তানের মধ্যে বাংলাদেশই শুরু করেছে প্রতিপক্ষে উড়িয়ে দিয়ে। মাশরাফিবাহিনীরা যে ‌রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

আরআই/এসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।