বিদায়ী বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগেও সেই চেনা মাশরাফি!

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা লন্ডন থেকে
প্রকাশিত: ১০:৫৬ পিএম, ০১ জুন ২০১৯

তিনি আসলে তারই মতো। হোক তা ঘরের মাঠে কাছাকাছি শক্তির আফগানিস্তান কিংবা ভারত, অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিগ ম্যাচ অথবা বিশ্বকাপের প্রথম খেলা। তাও কোন বিশ্বকাপ, যেটা অতি অবশ্যই তার ক্যারিয়ারের শেষ।

অন্য যে কেউ হলে এ বিদায়ী বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগে খানিক আবেগতাড়িত থাকত। কথা বলতে গিয়ে হয়তো জড়িয়ে যেত। প্রতি মুহূর্তে অতীতের কথা ভেবে স্মৃতিকাতর হয়ে যেতেন। কিন্তু মাশরাফি বিন মর্তুজার মধ্যে ওসবের কিছুই নেই।

আর তাই তো বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামার ২৪ ঘন্টা আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়া মাত্র রসিকতায় মেতে ওঠা শুধু মাশরাফি বিন মর্তুজার পক্ষেই সম্ভব।

আজ ওভালে আনুষ্ঠানিক প্রেস কনফারেন্সে মাশরাফির কথা শুনে মনেই হয়নি, এটা এবারের বিশ্বকাপে তার দলের প্রথম ম্যাচের আগের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সন্মেলন। তাই বলে ভাববেন না মাশরাফি হালকা, ঠুনকো ও চটুল কথা বার্তা বলেছেন।

তার আচার, আচরণ ও শরীরী অভিব্যক্তি দেখে মনে হয়নি এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ এবং সেই শেষ বিশ্বকাপ যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ রাখতে যাচ্ছেন কাল ২জুন। কেমন ছিল মাশরাফির প্রেস কনফারেন্স শুনবেন?

শুনে হয়তো অবাক হবেন, বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচের ঠিক ২৪ ঘন্টা আগে সংবাদ সম্মেলন শেষেও সেই চিরচেনা মাশরাফি। তাই তো প্রেস মিট শেষ করেই খুনসুঁটি আর রসিকতায় মেতে ওঠা।

‘আরে প্রেস মিটে কেমন কথা বললাম? বেশ সাবলীল ছিলাম তাই না? কোন জড়তা ছিল বলেন? আর ইংরেজীর গাথুনি, শব্দ চয়ন আর একসেন্টই বা কেমন ছিল? সেদিন বাকিংহ্যাম প্যালেসে সৌজন্য সাক্ষাতকারে রানী এলিজাবেথও তো আমার ইংলিশ শুনে মুগ্ধ। কি আমাকে দিয়ে হবে না? ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলে আমি কি আইসিসির মিডিয়া উইংয়ে কাজ করতে পারবো না? মনে হয় ভালোই পারবো? কি বলেন আপনি?’

mash

ওভালের ইনডোরে অস্থায়ী প্রেস কনফারেন্স হলে ৩৪ মিনিটের প্রেস কনফারেন্স শেষ হওয়া মাত্র আইসিসির নিযুক্ত ইংলিশ নারী মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর মেরি গুডবিয়ারের সাথে রসিকতা মাশরাফির!

ভাবুন একবার, অনুশীলনের আগে ৩৪ মিনিট টানা প্রেসের সঙ্গে কথা বলা। বাংলা-ইংরেজি মিলে অন্তত ১২-১৪টি প্রশ্নের জবাব ও ব্যাখ্যা দেয়ার পর ঐ ইংরেজ মিডিয়া সমন্বয়কারির সঙ্গে অমন রসিকতা! তারপর আবার স্বদেশী সাংবাদিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় পর্ব, করমর্দন, সৌজন্যতা বিনিময় আর শুভকামনায় আরও প্রায় মিনিট দশেক পার করা। মাঠের নেতা মাশরাফি অন্য সময় যেমন করেন, আজও ঠিক তাই’ই করলেন।

সাধারণত সাংবাদিকদের সাথে তার সখ্যতা বেশী। সময় পেলে শেরে বাংলায় আড্ডায় মেতে ওঠেন। এখানে সেই সুযোগটা কম। বিশেষ করে কালকের ম্যাচের আগে তো আরও নেই। কিন্তু তাই বলে মাশরাফি কথা না বলে প্রেস কনফারেন্স রুম ত্যাগ করেননি। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বকাপ কভার করতে যাওয়া এমন একজন সাংবাদিকও নেই যার সাথে আলাদা করমর্দন হয়নি তার। সাথে খুনসুটি, স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে হাস্যকৌতুক করতেও ভুল হলো না। সেখানেও হাসিমুখে রসিকতা, ‘এখন থেকে ইংরেজিতেই প্রশ্নোত্তর পর্ব হলে ভাল হয়।’

রাত পোহালে সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে ইংল্যান্ডের লন্ডনের ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। যে ম্যাচ দেখতে উন্মুখ বাংলাদেশ। রমজানের শেষ ভাগ চলছে। জুমাতুল বিদাও সম্পন্ন। এখন ঘরমুখো মানুষ তৈরী হচ্ছেন, ইতিমধ্যে নিজ নিজ আলয়ে ফেরাও শুরু করেছেন।

আর মাত্র ৪ দিন পর (যদিও শাওয়ালের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে) ঈদ উল ফিতর। সারা বাংলাদেশে উৎসবের আমেজ। এর মধ্যে বিশ্বকাপে মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহদের প্রথম ম্যাচ। তা নিয়েও রাজ্যের উৎসাহ-আগ্রহ, উদ্দীপনা ও প্রান চাঞ্চল্য গোটা বাংলাদেশে।

সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে কি অবস্থায় আছে টাইগাররা? অনেক প্রত্যাশার বিশ্বকাপ শুরুর আগে কি ভাবছেন অধিনায়ক মাশরাফি? খেলার ২৪ ঘন্টা আগে ওভালের প্রেস মিটে তার শরীরী অভিব্যক্তি কেমন ছিল?- এসব জানতে যারা মুখিয়ে ছিলেন, তারা আবার ওপরের বর্ণনা শুনে ভাববেন না অধিনায়ক মোটেই সিরিয়াস নন। নাহ, মাশরাফি সিরিয়াস, শতভাগ সিরিয়াস।

তবে তার সিরিয়াসনেসের ধরনও ভিন্ন। তিনি তো অনুকূল, প্রতিকূল সব অবস্থায় সমান। ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপের আগেও ঠিক মাশরাফি ঠিক তেমনি সতেজ, সাবলীল, চাঙ্গা ও ফুরফুরে। এতটুকু জড়তা নেই। তার প্রতিটি কথায় প্রতিধ্বনিত হয়েছে, নিজ দলের সামর্থের প্রতি আস্থা প্রচন্ড। স্বদেশী, ভারতীয়, দক্ষিণ আফ্রিকান আর বৃটিশ সাংবাদিক- সবার প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন একদম গুছিয়ে।

যার পরতে পরতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, নিজ দলের শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে তার ধারণা অতি পরিষ্কার, ‘আমরা কেমন দল? আমাদের সামর্থ্য কী? আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আসলে কি করতে পারি- এসব যে আমাদের খুব ভাল জানা।’

খেলার আগের হিসেব নিকেশ, সমীকরণ, প্রত্যাশা, আবেগ, উচ্ছাস- যাই থাকুক আসল কাজ হলো করণীয় বিষয়গুলো ঠিকমত করা। তাই ২ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে আকাশ কুসুম কল্পনা না করে নিজ দলের শক্তি ও সামর্থ্যের কথা ভেবে সম্ভাব্য করণীয় গুলো ঠিকঠাক মত করার কথা ভাবতেই বেশী আগ্রহী টাইগার ক্যাপ্টেন।

এআরবি/এসএএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।