পূর্ব লন্ডনের রেস্টুরেন্টে জমজমাট ইফতার বাণিজ্য!

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা লন্ডন থেকে
প্রকাশিত: ০৬:৪৬ পিএম, ০১ জুন ২০১৯

লন্ডন শহর ঘুরে কোথাও বিশ্বকাপের আমেজ পাচ্ছেন না? রমজানে ইফতার বেচাকেনার ধুম চোখে পড়ছে না? চলে আসুন ইস্ট লন্ডনে। দুই-ই পাবেন।

হাঁটতে চলতে ফিরতে সাদা বর্ণের ইংলিশদের পাশে চোখে পড়বে প্রচুর বাঙালির। বাংলায় লেখা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, জেনারেল স্টোর, রেস্টুরেন্টসহ রকমারি দোকান পসরার সমাহার এই ইস্ট লন্ডনে।

অফিস ছুটির পর থেকেই এ অঞ্চলের দোকানপাটগুলোয় বাঙালিদের হাট বসে। নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটায় বের হন বাঙালি নারী ও পুরুষরা।

তবে এখন যেহেতু রমজান মাস, তাই বিকেল গড়াতেই অনেকে ভিড় জমাচ্ছেন রেস্টুরেন্টগুলোয়। যার যা প্রয়োজন, কিনে নিচ্ছেন। কেউ ফলের দোকানে খেজুর, কলা, তরমুজ, আপেল, আঙ্গুর আর কমলা কেনায় ব্যস্ত। কেউবা আবার বাংলাদেশের চিরায়ত ইফতারি আইটেম ভাজা ভুনা কিনতে রেস্তোঁরায়।

বাংলাদেশে রাত ৯টা মানে রীতিমতো ঘুটঘুটে অন্ধকার। বেশ রাত। কিন্তু লন্ডনে ৯টা মানে সন্ধ্যা। সূর্য ডোবে অনেক দেরিতে, স্থানীয় সময় রাত ৯টা নাগাদ। ইফতার স্থানীয় সময় ৯টা ১০ এর দিকে।

আসলে লন্ডনে রাতের স্থায়িত্ব খুব কম। সূর্য ডোবে রাত স্থানীয় সময় ৯টায় আর ভোর সাড়ে ৩টায় আলো দেখা যায়। সূর্য ওঠে ভোর ৫টার আগে। ওদিকে স্থানীয় সময় বিকেল ৩টার পর থেকে শুরু হয় ইফতার কেনা বিক্রির ধুম।

london-3.jpg

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ইফতারি ছোলা, পিঁয়াজু, আলুর চপ, সমুচা, মুরগির গ্রিল আর জিলাপি সবই মিলছে বাঙালি অধ্যুষিত ইস্ট লন্ডনের রেস্টুরেন্টগুলোয়। বাংলায় দোকানপাটের নাম, সাইনবোর্ডও চোখে পড়বে।

সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো বিষয় হচ্ছে সেই রেস্টুরেন্টগুলোয় ঠিক বাংলাদেশের সব হোটেল রেস্টুরেন্টের মতো আবার ইফতারি-সেহরির খাবার এবং ‘টেক এওয়ে’র ব্যবস্থাও আছে।

ইফতারের প্লেট এবং সেহরির ফিক্সড মেন্যু সেট করে মূল্যও দেয়া আছে। থরে থরে সাজানো ইফতার সামগ্রীর পাশে ইংরেজিতে লেখা ‘রামাদান মোবারক’। নিচেই পরিষ্কার বাংলায় লেখা, ‘স্পেশাল ইফতার’। পাশে মূল্যও দেয়া-৭ পাউন্ড করে।

IFTAR-1

আবার ‘ফিস্ট অ্যান্ড মিঠাই’ নামের রেস্টুরেন্টে চোখে পড়লো ইংরেজিতে লেখা ‘রামাদানুল কারিম’। দেদারসে ইফতার সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ইংরেজ ক্রেতাও চোখে পড়লো। তারা রেস্টুরেন্টে বসেই ছোলা ভুনা খাচ্ছেন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই আসছেন অফিস থেকে ফেরার পথে বাড়িতে ইফতারের জন্য আইটেম কিনে নিতে।

তবে হোয়াইট চ্যাপেল এলাকা ঘুরে বিকেল থেকে ইফতারের আগের সময়ে একজন বাঙালিকেও প্রকাশ্যে পানাহার করতে দেখা গেল না। হোয়াইট চ্যাপেলের ফায়েজ, বাদশাহ প্রমুখদের সাথে কথা বলে জানা গেল, এখানে প্রবাসী বাঙালি আর স্থায়ী বাংলাদেশিদের মূল অংশ রোজাদার। এবং তারা ১৯ ঘণ্টা প্রায় (রাত আড়াইটা থেকে পরদিন রাত ৯টার বেশি) সময় অভুক্ত থাকেন এবং নিজ নিজ কাজও করেন।

রোজার শেষ দিকে এসে ঈদের বাজারও জমে উঠেছে। ইস্ট লন্ডনের প্রায় পোশাক সামগ্রীর দোকানেই শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ আর নানা ডিহাইনের বোরকা মিলবে। বাঙালি নারীরা পছন্দের জিনিসটি কিনতে বের হয়েছে দল বেঁধে।

london-3.jpg

এদিকে এই রোজার আমেজ এবং ঈদ-পূর্ববর্তী প্রাণচাঞ্চল্য ছাপিয়ে বাংলাদেশি তরুণ ও যুবাদের মূল দুটি আকর্ষণ- বিশ্বকাপ ক্রিকেট এবং নিজ জাতীয় দলের খেলা। দোকানে দোকানে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশের জার্সি। এক বাঙালি আরেক বাঙালির সাথে দেখা হওয়া মাত্র জিজ্ঞেস করছেন- তোমার জার্সি কিনেছ?

প্রিয় জাতীয় দলকে ঘিরে এবার দেশের মতো প্রবাসেও বাংলাদেশিদের অনেক আশা। প্রত্যাশার মাত্রা এবার যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। নানাভাবে ক্রিকেটারদের চাঙ্গা করতেও উদ্যমী উদ্যোগী প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ২ জুন দক্ষিণ আফ্রিকা আর ৫ জুন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দেখতে উন্মুখ স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

এদিকে স্থানীয় যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগও তৎপর প্রিয় জাতীয় দলকে অনুপ্রাণিত করতে। তাদের উজ্জীবিত করার মানসে এরই মধ্যে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের দিনক্ষণও চূড়ান্ত করে ফেলা হয়েছে। সংগঠনটির যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সম্পাদক ফায়েজ জাগো নিউজকে দিলেন এ তথ্য। আজ (শনিবার) সন্ধ্যায় তারা মাশরাফির সাথে দেখা করবেন।

আরআই/এমএমআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।