ক্রিকেটের আবাসভূমি লর্ডস স্টেডিয়াম

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৩৫ পিএম, ২৯ মে ২০১৯

লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঐতিহাসিক আর ঐতিহ্যবাহী এক স্টেডিয়ামের ছবি। তবে লর্ডসের আইকনই হয়ে গেছে এখন যেন সাদা চকচকে মিডিয়া বক্সের ছবিটা।

গ্যালারির ওপর সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা মিডিয়া বক্সটাই এখন ঐতিহাসিক লর্ডসের আইকনিক প্রতিচ্ছবি। সে সঙ্গে সবুজ ঘাসে মোড়ানো মাঠ। লন্ডনের সেন্ট জন’স উড এলাকায় অবস্থিত স্টেডিয়ামটি ক্রিকেটের আবাসভূমি (হোম অব ক্রিকেট) নামেই পরিচিত।

কেউ কেউ একে ক্রিকেটের মক্কা, আবার কেউ কেউ একে বলে থাকেন ক্রিকেটের তীর্থস্থান। যাই বলা হোক না কেন, ক্রিকেটের ইতিহাসে গৌরবের একটি স্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছে লন্ডনের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড।

এটা একমাত্র স্টেডিয়াম, যেখানে আগের ১১টি আসরের মোট চারটি বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ এবং ১৯৯৯ সালে। এবারও বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে লর্ডসে। অর্থ্যাৎ, ৫টি বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে এই মাঠে।

পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মধ্যে এটি অন্যতম। বয়স প্রায় ২০৫ বছর। ইতিহাস ঐতিহ্য সব দিক দিয়েই ক্রিকেট বিশ্বে লর্ডস সমাদৃত। সাক্ষী হয়ে আছে বহু স্মরণীয় ঘটনার। প্রায় ২৮ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই স্টেডিয়ামটি নির্মিত হয়েছিল ১৭৮৭ থেকে ১৮১৪ সালের মধ্যে।

তবে ওই সময় যে স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়েছিল, সেটি এখন আর তার প্রকৃত অবস্থানে নেই। নির্মাতা থমার্স লর্ড- এর নামানুসারেই স্টেডিয়ামটির নামকরণ করা হয় লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড। তবে প্রথম প্রতিষ্ঠিত তিনটি মাঠের মধ্যে তৃতীয় মাঠটিকেই বর্তমানে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড হিসেবে সবাই চেনে এবং জানে।

লর্ডসের প্রথম মাঠটি ওল্ড গ্রাউন্ড। বর্তমানে ডরসেট স্কয়ার নামে পরিচিত। দ্বিতীয় মাঠটি লর্ডস মিডল গ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত। ১৮১১ থেকে ১৮১৩ সালের মধ্যে নির্মিত হয় এই মাঠটি। যা রিজেন্ট’স ক্যানেলের জন্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানের লর্ডস মাঠটি মিডল গ্রাউন্ডের উত্তর-পশ্চিমাংশের ২৫০ গজ দূরে অবস্থিত।

২২ জুন, ১৮১৪ সালে বর্তমান লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রথম খেলা হয় মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব এবং হার্টফোর্ডশায়ারের মধ্যে। ২০১৪ সালে ক্রিকেটের মক্কা ২০০ বছরের পদার্পণ করে। আর এই দুইশত বছরে লর্ডসের বুকে অনুষ্ঠিত হয়েছে ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরনো সংস্করণ ১০৫টি টেস্ট ম্যাচ।

১৮৮৪ সালের ২১ জুলাই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এ মাঠের যাত্রা শুরু করে ইংল্যান্ড। এরপর একে একে ১০৫টি টেস্ট ক্রিকেটের সাক্ষী হয়েছে হোম অব ক্রিকেট ভেন্যুটি। যার শেষটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট । ওই ম্যাচে পরস্পর মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড এবং ভারত।

The-Lords

১৯৭২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম এই মাঠে ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক ইংলিশরা। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত ৫৬টি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। যা টেস্ট ম্যাচের তুলনায় অনেক কম। মূলতঃ টেস্ট ক্রিকেটের ঐতিহ্য ধারনে মহাকালের সাক্ষী এই লর্ডস।

তবুও ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ আর ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালের আয়োজক ছিল এই লর্ডসই। ১৯৭৫ সালে প্রথম বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৬০ ওভারে ইংল্যান্ড সংগ্রহ করেছিল ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৩৪ রান। এটিই এখন পর্যন্ত লর্ডসে একদিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।

তবে একদিনের ক্রিকেট ৬০ ওভার থেকে ৫০ ওভার করার পর এখানে দলীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৩২৮ রান। ২০১৭ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে স্বাগতিক ইংল্যান্ড এই সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল। লর্ডসের আরেকটি বড় ঐতিহ্য হচ্ছে এই মাঠে যে সব ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেন বা যে বোলার ইনিংসে ৫ উইকেট নেন তাদের নাম লেখা হয়ে থাকে স্টেডিয়ামটির অনার্স বোর্ডে। সেখানে নাম রয়েছে বিশ্বের অনেক নামি দামি ক্রিকেট তারকার নাম। যেখানে নাম আছে বাংলাদেশের তামিম ইকবালেরও।

লর্ডসের ২০৫ বছরের ইতিহাসে টেস্ট ম্যাচে সবচেয়ে দ্রুত সেঞ্চুরি হাঁকান বাংলাদেশের বাঁ-হাতি ওপেনার তামিম ইকবাল। ক্রিকেটের মক্কায় অনন্য এক রেকর্ড আছে বাংলাদেশ দলের পেসার শাহাদাত হোসেন রাজীবেরও। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে লর্ডসে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। ১৫৮তম বোলার হিসেবে এই কীর্তি গড়েন টাইগার এই পেসার।

এবার ক্রিকেট বিশ্বকাপে ফাইনালসহ মোট ৫টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে লর্ডসে। ৫ জুলাই পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটিও অনুষ্ঠিত হবে ক্রিকেটের এই ঐতিহ্য ঘেরা মাঠটিতে।

বিশ্বকাপ ৩০ মে শুরু হলেও লর্ডসে বিশ্বকাপের ছোঁয়া লাগবে অন্তত ২৫দিন পর। কারণ, এই মাঠে প্রথম ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ২৩ জুন। পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচের মধ্য দিয়ে। ২৫ জুন এই মাঠে অনুষ্ঠিত হবে মহারণ। অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের ম্যাচ। ২৯ জুন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে নিউজিল্যান্ড। গ্রুপ পর্বে এই মাঠের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে পাকিস্তানের।

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।