ব্যাটে-বলে মাঠ মাতাবেন যারা
সন্দেহাতীতভাবে একটি দলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সেই দলের অলরাউন্ডাররা। কারণ অলআউন্ডাররা শুধু ব্যাটিং কিংবা বোলিং না- দুই বিভাগেই অবতীর্ণ হন সব্যসাচীর ভূমিকায়। দলের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও ধরা হয় তাদের। আর হবে নাই বা কেন? তাদের পারফরম্যান্সই যে প্রায় সময়ে গড়ে দেয় ম্যাচের ভাগ্য।
বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ‘জাগো ক্রিকেট বিশ্বকাপ’ এর আজকের আয়োজনে থাকছে, বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ১০ দলের ১০ সেরা অলরাউন্ডারের ইতিকথা- যারা কিনা যেকোনো মুহূর্তে পালটে দিতে পারে ম্যাচের চেহারা। দলকে এনে দিতে পারে অবিশ্বাস্য জয়:
সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ
বাংলাদেশ দলের নিউক্লিয়াস বলা হয়ে থাকে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে। আর বলা হবে নাই বা কেন? ব্যাট-বল- দু’বিভাগেই তো বিশ্বের সেরাদের একজন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনটি বিশ্বকাপজয়ী রিকি পন্টিং তো বলেই দিয়েছেন, সাকিব ‘ডেঞ্জার ম্যান’।
২০১১ বিশ্বকাপে টাইগারদের নেতৃত্ব দেয়া সাকিব এ পর্যন্ত খেলেছেন দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ। সেখানে ২১টি ম্যাচ খেলে সাকিব ব্যাট হাতে ৩০ গড়ে করেছেন ৫৪০ রান। কোনো সেঞ্চুরি না থাকলেও এর মধ্যে ফিফটি আছে ৫টি। তবে বল হাতে বিশ্বকাপে তেমন ক্ষুরধার সাকিবকে এখনো পায়নি বাংলাদেশ। প্রায় ১৬৫ ওভার বল করে ৩৫.৭৮ গড়ে তার ঝুলিতে আছে ২৩টি উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার ৫৫ রান দিয়ে ৪ উইকেট, যা এসেছিল ১৫ বিশ্বকাপে শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
আন্দ্রে রাসেল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ
এবারের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন আন্দ্রে রাসেল। দলে ক্রিস গেইলের মতো বড় তারকা ক্রিকেটার থাকলেও অলরাউন্ডার হওয়ায় ক্যারিবীয়ানদের মধ্যমণি এখন রাসেল। আর এর কারণ তার সাম্প্রতিক ফর্ম।
এ বছরের আইপিএলে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন রাসেল। আগের দুই বিশ্বকাপে ‘ফ্লপ’ এই ক্রিকেটার আইপিএলের দ্বাদশ আসরে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ১৪ ম্যাচ খেলে ৫৬ গড় আর অবিশ্বাস্য ২০৪ স্ট্রাইক রেটে করেন ৫১০ রান! কলকাতাকে রীতিমত একাই এবার কাঁধে বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছেন রাসেল।
বেন স্টোকস, ইংল্যান্ড
ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবারের আসরে হট ফেভারিট ইংল্যান্ড। প্রথমবারের মতো তাই বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে বিভোর থ্রি-লায়ন্সরা। আর সেই স্বপ্ন যাত্রায় ইংলিশ দলের সবচেয়ে বড় তারকা বেন স্টোকস। মিডিয়াম পেস বোলিংয়ের পাশাপাশি বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ সুপরিচিত এই অলরাউন্ডার।
এই প্রথম বিশ্বকাপ অংশ নিতে গেলেও রঙিন পোশাকে এরইমধ্যে তিনি হয়ে উঠেছেন দলের অবিছেদ্দ্য অংশ। ৮৪টি ওয়ানডে খেলা স্টোকস ইংল্যান্ডের হয়ে এখন পর্যন্ত ব্যাট হাতে ২২১৭ রানের পাশপাশি বল হাতে নিয়েছেন ৬৩ উইকেট।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, অস্ট্রেলিয়া
বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে যেকোনো দলের বোলিং লাইনআপ গুড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। গত বিশ্বকাপে ১৮২ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে তার ৩২৪ রান সে কথারই প্রমাণ দেয়। তবে এই বিশ্বকাপে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতে বেশ বড় ভূমিকা রাখতে চলেছেন ম্যাক্সওয়েল।
তিনি নিজেই জানিয়েছেন, আগে শুধুমাত্র পার্ট-টাইম বোলার হিসেবে বোলিং করলেও আসন্ন বিশ্বকাপে পাক্কা একজন বোলারের দায়িত্বও পালন করতে চান তিনি। ২০১৫ বিশ্বকাপে ৬টি উইকেট পেয়েছিলেন অফ স্পিন করা ম্যাক্সওয়েল।
হার্দিক পান্ডিয়া, ভারত
ভারতীয় দলের এবারের বিশ্বকাপের ‘ট্রামকার্ড’ পান্ডিয়া। দেখতে হালকা-পাতলা হলেও বল বাউন্ডারি ছাড়া করতে তার জুড়ি মেলা ভার। তাই বিশ্বকাপে ভারতের ইনিংস শেষ করার দায়িত্ব থাকছে পান্ডিয়ার কাঁধে। এছাড়া নতুন কিংবা পুরাতন- বল হাতে যেকোনো সময় ব্রেক-থ্রু এনে দিতেও সিদ্ধহস্ত তিনি। টিম ইন্ডিয়ার এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে ২৯টি ওয়ানডে খেলে ৭৩১ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ৪৪ উইকেট।
ইমাদ ওয়াসিম, পাকিস্তান
বয়স ৩০ হলেও, এই প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন ইমাদ ওয়াসিম। আর প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েই দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়েছে তার। ব্যাটিংয়ে ঝড়ো ইনিংস খেলার পাশাপাশি বল হাতে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের বেঁধে রাখতে হবে তাকে। ৪৬টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১০৭ স্ট্রাইক রেট আর ৪০ গড়ে ওয়াসিমের রান ৭৭৮। অন্যদিকে বল হাতে ৩৯টি উইকেটও আছে তার ঝুলিতে।
জেমস নিশাম, নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডের হয়ে এবারই প্রথম বিশ্বকাপ খেলবেন জেমস নিশাম। এই অলরাউন্ডার বাঁ-হাতে ব্যাটিং করলেও আবার বল করেন ডানহাতে। মিডিয়াম পেস করা নিশাম ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত পেয়েছেন ৪৪ উইকেট। এছাড়া ঝড়ো ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ আলোচিত তিনি। তাই ১০৫ স্ট্রাইক রেট আর ৩০ গড়ে ১০১৫ রান করা নিশামের কাঁধে থাকছে এবারের বিশ্বকাপে ব্ল্যাক-ক্যাপসদের ইনিংসের সমাপ্তি টানার দায়িত্ব।
থিসারা পেরেরা, শ্রীলঙ্কা
২০০৯ সালে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হলেও কখনোই স্কোয়াডে নিয়মিত হতে পারেননি শ্রীলঙ্কার পেস বোলিং অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা। কিন্তু এই বিশ্বকাপে দলের সবচেয়ে বড় তারকার একজন তিনি। কারণ এর আগের দুই বিশ্বকাপে তার খেলার অভিজ্ঞতা। ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে মাত্র ১০টি ম্যাচ খেলে মোটে ১০৬ রান আর ১৩ উইকেট নিলেও বেশ অভিজ্ঞ হিসেবে এই বিশ্বকাপ খেলায় দলের ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে দেখা যাবে তাকে।
মোহাম্মদ নবী, আফগানিস্তান
ছোট দলের বড় তারকা। এর আগের বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেয়া মোহাম্মদ নবী এই বিশ্বকাপেও দলের ভরসার প্রতীক। ২০১৫ বিশ্বকাপে তেমন কিছু করে দেখতে না পারলেও অভিজ্ঞতা আর ধারাবাহকতায় আসন্ন বিশ্বকাপে যেকোনো দলের জন্য হুমকি নবী।
১টি বিশ্বকাপ খেলা এই অলরাউন্ডার ৬টি ম্যাচে মাত্র ৯০ রান আর ৩ উইকেট পেলেও, আফগানিস্তানের হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ফর্মে আছেন। এ ছাড়াও আইপিএলেও সানরাইজার্সের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন নবী।
আন্দিল ফেলুকায়ো, দক্ষিণ আফ্রিকা
বাঁহাতে ব্যাট করা এই অলরাউন্ডার বল করেন ডানহাতে। লোয়ার মিডল অর্ডারে ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বলে দারুণ গতিও আছে আন্দিল ফেলুকায়োর। ২৩ বছর বয়সী ফেলুকায়ো এবারই খেলতে যাচ্ছেন নিজের প্রথম বিশ্বকাপ। ৪৩টি ওয়ানডে খেলা এই অলরাউন্ডারের উইলো থেকে এখন পর্যন্ত এসেছে ৪১৬ রান। আর উইকেট সংখ্যা ৫৪টি।
এসএস/এসএএস/এমকেএইচ