‘বাপু ক্যাচ তো ফেলোনি, ট্রফিটাই ফেলে দিয়েছো’
দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম অস্ট্রেলিয়া, সুপার সিক্স (১৯৯৯)
সুপার সিক্সের সে ম্যাচের আগেই প্রোটিয়ারা সেমির কামরা দখল করে নিয়েছিল। সে হিসেবে ম্যাচটা ছিল তাদের জন্য কেবল নিয়ম রক্ষার। এছাড়া দলের খেলোয়াড়দের ঝালাই করার কাজে লেগেছিলো। আর অসিদের জন্য ছিলো সাক্ষাৎ কোয়ার্টার ফাইনাল। টুর্নামেন্টে বেঁচে থাকতে হলে এ ম্যাচ জয়ের কোনো বিকল্প ছিলো না তাদের জন্য।
ব্যাট হাতে ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহ যখন পিচে আসলেন,২৭১ রান তাড়া করতে নামা অজিদের স্কোর তখন ৩ উইকেটে ৪৮ রান। ল্যান্স ক্লুজনারের বলে ওয়াহ’র উঠিয়ে দেয়া বল যখন মিডউইকেটে ভাসছিল,ততক্ষণে তার নামের পাশে ‘৫২ বলে ৫৬ রান’ লেখাটা স্পষ্ট।
লেখাটা তখনই অস্পষ্ট হয়ে যেতো, যদি না হার্শেল গিবস বলটা তালুবন্দী করেই ইঁচড়েপাকা ধরনের উদযাপন করার চেষ্টা না করতেন। বল ছুটে যায় হাত থেকে। কথিত রয়েছে সেই ক্যাচ মিসের পর গিবসের উদ্দেশ্যে ওয়াহ বলেছিলেন, ‘বাপু ক্যাচ তো ফেলোনি, ট্রফিটাই ফেলে দিয়েছো।’
পরে এ ব্যাপারটা বড় ধরনের সু্যোগ হয়ে দাড়িয়েছিল অসিদের জন্য। স্টিভ ওয়াহ বাগিয়ে নিলেন নিজের দ্বিতীয় শতক আর অজিরা পেয়ে গেলো সেমিফাইনালের একটা কামরা। পুরো ব্যাপারটা যে প্রোটিয়াদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে, সেটা এর কয়েকদিন পর এজবাস্টনে এই দুই দলের টাই ম্যাচের পূর্বে কেউই বুঝতে পারেনি।
আগের সাক্ষাতে গিবসের উন্মাদ হয়ে ফেলা দেয়া ক্যাচের ফল মূলত এই ম্যাচেই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রোটিয়াদের জন্য। এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সেমির সে ম্যাচে ২১৪ রান তাড়া করতে নেমেছিল প্রোটিয়া দল।
রানের পাল্লা বেশ কম মনে হলেও, শেষ ওভারে ৯ রানের কোটায় গিয়ে ঠেকেছিল ম্যাচ। হাতে ছিলো মাত্র ১ উইকেট। ব্যাটিং স্ট্রাইকে তখন সেই ল্যান্স ক্লুজনার, টুর্নামেন্ট সেরা এই ভদ্রলোকের জন্য যে আরও কিছু অপেক্ষা করছিলো, তা ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে কেউ বুঝতেই পারেনি। পিচের অপর প্রান্তে ছিলেন অ্যালান ডোনাল্ড।
ডেমিয়েন ফ্লেমিংয়ের করা শেষ ওভারের প্রথম ২ বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বসেন ক্লুজনার। অফ সাইডে ছুটে যাওয়া দুই চার, ম্যাচকে নিয়ে আসলো ৪ বলে ১ রানের করিডোরে। ফ্লেমিংয়ের ছুঁড়ে মারা পরের বলে অল্পের জন্য রান আউট হতে বেঁচে গিয়েছিলেন তারা।
কিন্তু চতুর্থ বল, পূর্বের ভাগ্যকে অনেকটা গুঁড়িয়ে দিয়েই চলে গিয়েছিলো। ক্লুজনারের ব্যাটে আঘাত করা বল পিচ চিরে মিড অফে কিছু দূর বেরিয়ে গিয়েছিলো। পিচের প্রান্ত পরিবর্তনের জন্য বেরিয়েও পড়েছিলেন তিনি কিন্তু বেচারা ডোনাল্ড, পিছনে ফিরে ওই বলের দিকেই যেনো নজর রাখছিলেন, রান নেয়ার জন্য দৌড়ানোর কথা যেনো মাথায় আসেনি তার।
ফলাফল ক্লুজনারের দিকে চোখ পড়তেই, যতক্ষণে স্থান পরিবর্তনের জন্য দৌড় শুরু করেন, তাতে যথেষ্ঠ দেরি করে ফেলেছিলেন ডোনাল্ড। ম্যাচ টাই হলেও সুপার সিক্সের অবস্থান বিবেচনায় ফাইনালের টিকেট পেয়ে গিয়েছিলো অজিরা।
আর প্রোটিয়াদের সেই পূর্বের দূর্ভাগ্যের নিচেই চাপা পড়তে হয়েছিলো। সে সাথে এক বুক পাথর নিয়ে হার্শেল গিবস হয়ত অজান্তেই লিখে ফেলেছিলেন স্বপ্ন ভঙ্গের অনাকাঙ্ক্ষিত উপাখ্যান।
আরজে/এসএএস/এমকেএইচ