বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ম্যাচ এবং ঘুমন্ত গাভাস্কার
৭জুন ১৯৭৫, লন্ডনের লর্ডসে শুরু হয়েছিল ক্রিকেটের এক নতুন অধ্যায়। স্বাগতিক ইংল্যান্ড বনাম ভারতের ম্যাচের মধ্যে দিয়ে পথচলা শুরু হয় বিশ্বকাপ ক্রিকেটের। মূলত বৈশ্বিক খেলা হিসেবে ক্রিকেটের পরিচিতির নতুন এক অধ্যায়ের শুরু সেদিন থেকেই।
লন্ডনের হেঁয়ালি বিকেল সেদিন সাক্ষী হয়েছিল অসংখ্য সব রেকর্ডের। বিশ্বকাপের সব 'প্রথম' রেকর্ড যে জড়িয়ে আছে পুরো ম্যাচজুড়ে। তখন একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ হতো ৬০ ওভার করে; তবে ছিলো না হালের মতো রানবন্যায় রমরমা অবস্থা।
অগণিত সব রেকর্ড দিয়ে ম্যাচটি জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। বিশাল অংকের দলীয় সংগ্রহ,
ড্যানিস অ্যামিসের শতক, কেইথ ফ্লেচার ও ক্রিস ওল্ডের ঝড়ো অর্ধশতক, ইংলিশদের মিতব্যয়ী বোলিং কিংবা ভারতীয়দের কচ্ছপ গতির ব্যাটিং- এতো কিছু মিলিয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ম্যাচটি আলাদা ভাবে জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে এ ম্যাচের বিশেষত্ব ঘিরে আছে অন্য একজনকে নিয়ে। তিনি আর কেউ নন, ভারতীয় কিংবদন্তি সুনিল মনোহর গাভাস্কার। ১৭৪ বল খেলে মাত্র ৩৬ রান করে গাভাস্কার সেদিন হয়েছিলেন আলোচিত এবং সমালোচিত।
লর্ডসের সে ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ৬০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৩৪ রানের পাহাড় গড়ে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ওপেনার ডেনিস অ্যামিসের শতক (১৩৭ বলে ১৪৭) এবং কেইথ ফ্লেচার (১০৭ বলে ৬৮) ও ক্রিস ওল্ডের (৩০ বলে ৫১) অর্ধশতকে বড় সংগ্রহ পায় ইংলিশরা। ভারতীয়দের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন আবিদ আলী।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভারত সেদিন করলো ভুলে না যাবার মতো ইতিহাস। পুরো ৬০ ওভার খেলে ভারত হারিয়েছিল মাত্র ৩ উইকেট। কিন্তু অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি, তারা করতে পারেনি প্রয়োজনের অর্ধেক রানও, এমনকি অ্যামিসের ইনিংসকে টপকাতে পারেনি তারা। ইনিংস শেষে মাত্র ১৩২ রান তুলতে সক্ষম হয় ভারতীয়রা। ম্যাচ হেরে বসে ২০২ রানের বিশাল ব্যবধানে।
সুনিল গাভাস্কার এবং একনাথ সোলকারের শুরু দেখে মনে হচ্ছিল ম্যাচটি একদিনের নয় পাচদিনের। দুই ওপেনারের দেখানো পথে হাঁটেন বাকিরাও। সোলকার, গায়কোয়ান্দ, বিশ্বনাথ কিংবা প্যাটেলদের দেখে মনে হচ্ছিল কে কার চেয়ে বেশি ধীরভাবে খেলতে পারবে তার প্রতিযোগিতা হচ্ছে।
সোলকারের ৩৪ বলে ৮, গায়কোয়ান্দের ৪৬ বলে ২২, প্যাটেলের ৫৭ বলে ১৬ রান দেখে ম্যাচটিকে যে কেউই টেস্ট ম্যাচ বলে ভুল করবেন। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়ে নিজেকে কাছিম শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে জানান দেন ব্যাটিং গ্রেট সুনিল গাভস্কার।
ওপেনিংয়ে নেমে সম্পূর্ণ ইনিংস শেষ করেছেন তিনি। ইনিংসের শতকরা প্রায় ৪৮.৩৩ শতাংশ বল বা ১৭৪ বল খেলে সুনীল গাভাস্কার মাত্র করেছিলেন ৩৬ রান। সুনিলের এমন কচ্ছপ গতির ব্যাটিংয়ে সেদিন শুধু ইংলিশ খেলোয়াড়রা ই বিরক্ত হয়নি বিরক্ত হয়েছে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব; এমনকি খোদ ভারতীয় সমর্থকরাও। এমন ব্যাটিংয়ের জন্য মাঠেই দুয়ো শুনতো হয়েছিল গাভাস্কারকে, এমনকি মজা করতে ছাড়েনি ইংলিশ খেলোয়াড়রাও।
৩৬ রানের ইনিংসে গাভাস্কার ৪ মেরেছিলেন মাত্র ১টি। পুরো ইনিংসে ভারতের বাউন্ডারি ছিল মাত্র ৯টি, ছিলো না কোন ওভার বাউন্ডারি। যেখানে এক ডেনিস অ্যামিসই মেরেছেন ১৮টি বাউন্ডারি।
ম্যাচ শেষে এমন ভুতুড়ে ব্যাটিংয়ের কারণ নিয়ে মুখ খুলেননি গাভাস্কার। তবে তিনি যে ইতিহাসের পাতায় কচ্ছপ গতির হিরো হিসেবে জায়গা পেয়ে যাবেন সেটা বোধ করি সেদিন বুঝতেই পেরেছিলেন সুনিল।
আরজে/এসএএস/পিআর