স্কটিশদের হারিয়ে বিশ্বকাপে জয়ের সূচনা বাংলাদেশের
১৯৯৯ বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ দল ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে প্রথমবারেরমত খেলতে গিয়েছিল একটিমাত্র আশা নিয়ে। স্কটল্যান্ডকে হারানোর আশা নিয়েই রাণীর দেশে পা রেখেছিল আমিনুল ইসলাম বুলবুলের দল। প্রত্যাশামতই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম জয় এসেছিল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেই।
দিনটি ছিল ১৯৯৯ সালের ২৪ মে। এডিনবরায় স্বাগতিক স্কটিশদের মুখোমুখি হলো বাংলাদেশ। যে ম্যাচ নিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্ন। সেই ম্যাচটিই কি না বাংলাদেশকে খেলতে হচ্ছে গিয়ে স্বাগতিক স্কটল্যান্ডের মাঠে! কেমন করবে বাংলাদেশ? ধুরু ধুরু বুক নিয়ে এডিনবরায় জর্জ স্যালমন্ডের সঙ্গে টস করতে নামেন বাংলাদেশের অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
ম্যাচ শুরুর আগেই কিন্তু স্কটল্যান্ড খুব উজ্জীবিত। কারণ স্কটল্যান্ড ক্রিকেটের পরিচালক জিম লাভ ম্যাচ শুরুর আগে স্কটিশদের বলে দিলেন, যে কোন মূল্যেই হোক বাংলাদেশকে হারাতে হবে। এই ম্যাচটিকে তিনি স্কটিশদের জন্য ফাইনাল বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু নানা নাটকীয়তার পর দিনশেষে লাভের দর্প চূর্ণ করেছে বাংলাদেশ।
যদিও ওই ম্যাচে বাংলাদেশের ২২ রানের জয় সহজে আসেনি। এক সময় তো মনে হচ্ছিল বাংলদেশ শুরুতে হেরেই যাবে। গ্যাভিন হ্যামিল্টন বাংলাদেশকে ছিটকেই ফেলে দিয়েছিলেন।
সেটা হয়নি মনজুরুল ইসলামের অসাধারণ এক থ্রোতে তিনি রান আউট হওয়ার কারণে। তার আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটাও হয়েছিল জঘণ্য। কারণ, মাত্র ২৬ রানের মধ্যে বাংলাদেশকে হারাতে হয়েছিল পাঁচ উইকেট। দুই ওপেনার খালেদ মাসুদ এবং মেহরাব হোসেন শুরুতেই ফিরে গেলেন একজন শূন্য এবং অন্যজন ৩ রান করে।
ফারুক আহমেদ আউট হলেন ৭ রানে। অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল ফিরে গেলেন কোনো রান না করেই। বাংলাদেশের আরেক ভরসা আকরাম খানও আউট হলেন শূন্য রানে। ২৬ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে মহা বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু।
যাকে বিশ্বকাপের দলেই প্রথমে রাখা হয়নি। তুমুল বিরোধীতার মুখে শেষ পর্যন্ত নান্নুকে নেয়া হয় দলে এবং তিনিই কাংখিত ম্যাচটিতে বাংলাদেশকে টেনে তুলেছিলেন।
২৬ রানে ৫ উইকেট থেকে নান্নু এক প্রান্ত আগলে রেখে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৬৮ রানে। ১১৬ বলে খেলা তার এই ইনিংসে বাউন্ডারি ছিল ছয়টি। বলার মতো রান করেছিলেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও (৩৬) এবং এনামুল হক মনি (১৯)। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের মামুলি সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৮৫ রানের।
জবাব দিতে নেমে স্কটল্যান্ডও শুরুতে বিপর্যয়ে পড়ে যায়। ৮ রানে তারা হারায় ৩ উইকেট। এরপরই ছোট ছোট কয়েকটি ইনিংসে এগিয়ে যাচ্ছিল স্কটল্যান্ড। ইয়ান স্টেঞ্জার ১০, জর্জ স্যালমন্ড ১৯ রান করেন। তবে বাংলাদেশের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে দেখা দেন গ্যাভিন হ্যামিল্টন। হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন তিনি।
৭১ বলে ৬৩ রান করার পরই মঞ্জুরুল ইসলামের সেই থ্রো এবং রানআউটই বাঁচিয়ে দিলো বাংলাদেশের স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত ৪৬.২ ওভারে ১৬৩ রান করে অলআউট হয়ে গেলো স্বাগতিক স্কটল্যান্ড। সে সঙ্গে মাত্র ২২ রানে বিশ্বকাপে প্রথম জয় পেয়ে গেলো বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয়।
হাসিবুল হোসেন শান্ত, মঞ্জুরুল ইসলাম, খালেদ মাহমুদ নেন ২টি করে উইকেট। মিনহাজুল আবেদিন নান্নু এবং এনামুল হক মনি নেন ১টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১৮৫/৯, ৫০ ওভার (নান্নু ৬৮*, দূর্জয় ৩৬, মনি ১৯, ফারুক আহম্মেদ ৭, হাসিবুল হোসাইন ৬, মেহেরাব হোসেন ৩, মঞ্জুরুল হক ২*, আকরাম খান ০, আমিনুল ইসলাম ০, খালেদ মাসুদ ০, খালেদ মাহমুদ ০। ব্লেইন ৩৭/৪, বাট ২৪/২, ডায়ার ২৬/২।)
স্কটল্যান্ড: ১৬৩/১০, ৪৬.২ ওভার (হ্যামিল্টন ৬৩, ডেভিস ৩২, সালমন্ড ১৯। হাসিবুল ২৬/২, মাহমুদ ২৭/২, মুনজুরুল ৩৩/২।
ফল : বাংলাদেশ ২২ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচঃ : মিনহাজুল আবেদীন নান্নু
আইএইচএস/জেআইএম