অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট আধিপত্যের শুরু

ইমাম হোসাইন সোহেল
ইমাম হোসাইন সোহেল ইমাম হোসাইন সোহেল
প্রকাশিত: ১২:১৪ পিএম, ২০ মে ২০১৯

ক্রিকেট বিশ্বে অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্য এর আগে ছিল না, তা বলা যাবে না মোটেও। আধুনিক ক্রিকেটের জন্মই তো হয়েছে অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের হাত ধরে। যুগে যুগে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তিদের হাতে শাসন হয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের। ডন ব্র্যাডম্যানরা যখন খেলেছেন, তখন একদিনের ক্রিকেটের ধারণা পর্যন্ত ছিল না।

কিন্তু এখানে বলা হচ্ছে শুধুমাত্র ওয়ানডে ক্রিকেটের কথা। ১৯৭১ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বৃষ্টির কারণে আচমকা অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ড জন্ম দিয়ে বসলো ওয়ানডে ক্রিকেটের। সে থেকে এই ফরম্যাটের জনপ্রিয়তা শুরু এবং চার বছরের মাথায় আইসিসি আয়োজন করে ফেললো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের।

১৯৭১ সাল থেকে শুরু করে ১৯৮৭- এই ১৬ বছরে অস্ট্রেলিয়ার অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। অনেক নামকরা ক্রিকেটার এসেছেন সত্য; কিন্তু এক ক্যারি পেকারের ধাক্কায় অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট গৌরব ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ১৯৭৯ এবং ১৯৮৩ সালে তো কোনোমত একটা দল গঠন করে বিশ্বকাপে পাঠাতে পেরেছিল অস্ট্রেলিয়ানরা। যার ফল- এই দুই বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকেই অস্ট্রেলিয়ার বিদায়।

তবে যাদের রক্তে মিশে আছে ক্রিকেট, তারা কোনো না কোনো সময় ঘুরে দাঁড়াবেই। সেই অভিপ্রায় নিয়েই বলতে গেলে চার বছর পর, ১৯৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের আসল রূপ দেখতে পেলো বিশ্ব ক্রিকেট। অ্যালান বোর্ডারের নেতৃত্বে প্রথমবারেরমত তারা জয় করলো বিশ্বকাপ এবং সেই যে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ানদের আধিপত্য শুরু হলো, সেটা চলছে আজ অবদি।

১৯৮৭ সাল থেকেই মূলত বিশ্বকাপ নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এর আগের টানা তিনটি বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল ইংল্যান্ডে। এবারই প্রথম সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বিশ্বকাপ চলে আসলে উপমহাদেশে। অর্থ্যাৎ, ভারত-পাকিস্তানে। শুধু আয়োজক দিয়েই নয়, আয়োজনের আরও অনেক দিকেই এই বিশ্বকাপে পরিবর্তণের ছোয়া লাগলো।

সবচেয়ে বড় পরিবর্তণ হল এখনকার পরিচিত আকার, মানে ৫০ ওভারের ওয়ানডে ক্রিকেট শুরু হল এই বিশ্বকাপ থেকেই। তার আগের তিনটি বিশ্বকাপ ছিল ৬০ ওভারের। ১৯৮৭ বিশ্বকাপেই পৃষ্ঠপোষক হিসেবে প্রুডেন্সিয়ালের জায়গা নিলো ভারতীয় প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স।

এসব পরিবর্তনকে দারুণ অর্থবহ করে দিয়ে প্রথম শিরোপা জিতে নিলো অস্ট্রেলিয়া। যদিও ফরম্যাটটা অবশ্য আগের মতোই ছিল- গ্রুপপর্বে সবাই সবার সঙ্গে দু’বার করে খেললো এবারও। আর এই গ্রুপপর্বে সবচেয়ে বড় অঘটন ছিল, ক্যারিবীয় অধিনায়ক স্যার ভিভ রিচার্ডসের প্রবল প্রতাপের পরও ছিটকে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

australia

উদ্বোধনী ম্যাচটাই ছিল পুরো বিশ্বকাপকে জমিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন সাথে স্বাগতিক- ভারতই যেন ফেবারিট। তখনকার মাদ্রাজ, বর্তমানে চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক ভারতকে ১ রানে হারিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। অসিদের করা ২৭০ রান তাড়া করতে নেমে ১ বল বাকি থাকতে ২৬৯ রানে অলআউট ভারত। তবে ফিরতি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৫৬ রানে হারিয়েছিল ভারত।

দুই দল সমান ৫টি করে জয় পেলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলো ভারতই। রানারআপ হয়ে সেমিতে উঠে যায় অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে ‘বি’ গ্রুপে আরেক স্বাগতিক পাকিস্তান ৬ ম্যাচের ৫টিতে জিতে হলো গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। ৪ ম্যাচ জিতে ইংল্যান্ড হলো রানারআপ।

দুই স্বাগতিক ভারত এবং পাকিস্তান গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠলো সেমিতে। তাদের সঙ্গে চিরায়ত দুই ক্রিকেট প্রতিদ্বন্ধী ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া উঠলো গ্রুপ রানারআপ হয়ে।

কিন্তু অনেক নাটকীয়তা স্বত্ত্বেও দুই স্বাগতিক প্রতিবেশীকে ছিটকে দিয়ে ফাইনালে উঠে গেলো অ্যাশেজ জুটি ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের জন্য স্বপ্নটা ছিল, নিজেদের দেশের বাইরের প্রথম আসরের ট্রফিটা ঘরে তুলে তিনবারের হাহাকার ঘোচানো। আর অস্ট্রেলিয়ার সামনে স্বপ্ন, তাদের নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করার জন্য হলেও বিশ্বকাপ জেতা দরকার।

ফাইনাল ছিল সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ। বিশ্বকাপের ইতিহাসের ছিল সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনাল সেটা। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ২৫৩ রান করে অস্ট্রেলিয়া। ডেভিড বুন করেন ৭৫ রান। জবাব দিতে নেমে ইংল্যান্ড ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রানে থেমে যায় ইংল্যান্ড। মাত্র ৭ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ট্রফি স্পর্শ করলো অস্ট্রেলিয়ানরা।

আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।