সেই যুক্তরাজ্যে এবার ম্যানেজার হয়ে গেলেন সুজন

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১১:০০ এএম, ১৮ মে ২০১৯

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক তিনি। সে বছরের ৩১ মে নর্দাম্পটনে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের অন্যতম রুপকার খালেদ মাহমুদ সুজন ২০০৪ সালে খেলা ছেড়ে কোচিংকেই নিজের ব্রত বলে মনে করছেন।

সেই ডেভ হোয়াটমোর কোচ থাকা অবস্থায় জাতীয় দলের ব্যবস্থাপনার সাথেও জড়িয়ে আছেন আষ্টেপৃষ্টে। কখনো ম্যানেজার, কখনো সহকারী কোচ বা মেন্টর আবার কখনো টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

কিন্তু গত এক বছরের বেশী সময় ধরে জাতীয় দলে খানিক অনিয়মিত ছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন বিপিএল এবং প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে। বিপিএলে তার দল ঢাকা ডায়নামাইটস গত দুই বারের রানার্সআপ।

তবে প্রিমিয়ার লিগে খালেদ মাহমুদ সুজনের আবাহনীর পরপর দুই বারের লিগ বিজয়ী। মাঠের লড়াকু ক্রিকেটার সুজন কোচিং আর টিম ম্যানেজমেন্টেও শতভাগ নিবেদিত প্রাণ। দলের মঙ্গল কল্যাণে নিজেকে সদাসর্বত্র জড়িয়ে রাখেন। ক্রিকেট মাঠে আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করেন, প্রাণ খুলে মেশেন এবং সবার পারফরম্যান্সে উন্নতির চেষ্টা করেন বলেই সুজন সবার ভালবাসার পাত্র, ক্রিকেটারদের ‘চাচা’।

দীর্ঘদিন ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে থাকার কারণে সবার অস্থিমজ্জা জানেন। তাদের সেরাটা বের করে আনার রসদও আছে তার কাছে। আর তাই এবারের বিশ্বকাপেও খালেদ মাহমুদ সুজনই ম্যানেজার।

জাগো নিউজের পাঠকরা আগেই জেনে গেছেন, আয়ারল্যান্ডের তিন জাতি আসরে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করলেও বিশ্বকাপে টিম বাংলাদেশের ম্যানেজার সুজন।

আজ সকাল দশটায় লন্ডনের উদ্দেশ্যে শুরু হয়েছে তার বিমান যাত্রা। এমিরেটসের ফ্লাইটে দুবাই হয়ে লন্ডন পৌঁছাবেন বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ম্যানেজার। আর আয়ারল্যান্ডে সফল মিশন শেষে কালই ফিরে আসছেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু।

তবে বিশ্বকাপের আগে আরেক নির্বাচক হাবিবুল বাশারও দলের সঙ্গী হবেন। তিনি যুক্তরাজ্য যাবেন আগামী ২৪ মে। ২৬-২৮ মে যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে দুটি অফিসিয়াল ওয়ার্ম আপ ম্যাচের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রথম চার বিশ্বকাপ ম্যাচে দলের সাথে থাকবেন নির্বাচক হাবিবুল বাশার। তারপর প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু আবার দলের সঙ্গী হবেন।

১৯৯৯ সালে যে দেশের মাটিতে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন, সেই যুক্তরাজ্যেই আবার ম্যানেজার হয়ে বিশ্বকাপ অংশ গ্রহন করতে যাচ্ছেন। কেমন লাগছে? খালেদ মাহমুদ সুজনের জবাব, ‘আসলে জাতীয় দলের সাথে থাকাটাই আমার ভালো লাগা। আমি কোন পদে আছি সেটা বিষয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০ বছর আগে ইংল্যান্ডে খেলোয়াড় হিসেবে ছিলাম, এবার ম্যানেজারের ভূমিকায় থাকবো- এমন ভেবে আমি পুলকিত বা উদ্বেলিত না। আমার দেশ ও জাতীয় দলের সাথে আমি সম্পৃক্ত আছি এটাই অন্যরকম ও সর্বোচ্চ ভালো লাগা। বাংলাদেশ দলের অংশ হিসেবে থাকাটাই আসলে সবচেয়ে বড়। জাতীয় দলের সঙ্গে, লাল সবুজের সঙ্গী হয়ে থাকা- এটাই যে অনেক বড় ভালো লাগা ও গর্বের। আমি চেষ্টা করি সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে। এখন তো আর মাঠে খেলি না, ম্যানেজার হিসেবে আমার ভূমিকা থাকে দলের ব্যবস্থাপনার কাজ করা। পাশাপাশি ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে উজ্জীবিত করা। মাঠে যাতে তারা সামর্থ্যের সেরাটা দিতে পারে সে জন্য অনুপ্রাণিত করা।’

কখনো কি ভেবেছিলেন, ২০ বছর আগে যে দেশে বিশ্বকাপ খেলেছেন, সেই ইংল্যান্ডে আবার জাতীয় দলের ম্যানেজার হয়ে যাবেন? সুজনের সোজাসাপটা উত্তর, ‘নাহ, ঠিক সেভাবে ভাবিনি। অমন চিন্তা ছিল না। আমি খেলাটাকে মিস করি। এখনো মনে হয় যদি দেশের হয়ে খেলতে পারতাম, এই সময় যদি খেলতে পারতাম। এখন বাংলাদেশ টিম অন্যরকম, সুযোগ সুবিধাও অনেক। ক্রিকেটে আমরা দিনকে দিন অনেক উন্নতি করেছি। তাই মনে হয় আমি যদি এই দলের প্লেয়িং মেম্বার থাকতে পারতাম।’

এই দলের বিশ্বকাপ সম্ভাবনার ব্যাপারে বলতে গিয়ে সুজন জানান, ‘সত্যি কথা বলতে কি আমাদের সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে ভাল করার। তবে সবচেয়ে কঠিন সত্য হলো, কাজটা সহজ নয়। বেশ কঠিন। আমাদের ভাল খেলতে হবে। অনেক বেশী ভাল খেলতে হবে। কারণ আপনি যদি প্রতিপক্ষ দলগুলোর পারফরম্যান্স দেখেন, সবাই ভাল খেলছে। সবাই খুব শক্তিশালী দল। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এমনকি পাকিস্তান হারের মধ্যে থাকলেও তাদের পারফরম্যান্স কিন্তু হেলা ফেলার না। সাড়ে তিনশ রান হচ্ছে অহরহ।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাই বলে আমরা যে খুব দূর্বল তাও না। আমাদের দলেরও সামর্থ্য আছে ভাল খেলার, ভাল করার। দলের সামর্থ্য না থাকলে আমি কিছুই বলতাম না। কিন্তু আমাদের সামর্থ্য আছে ভাল কিছু করার। আমরা অতীতে সব বড় দলকে বিভিন্ন সময় হারিয়েছি। শেষ এশিয়া কাপেও ভারতের সঙ্গে ফাইনালে শেষ বলে গিয়ে হেরেছি। আমরা অতীতেও প্রমাণ করেছি সবাইকে হারাতে পারি। মোদ্দা কথা আমাদের ছেলেরা অনেক দূর যাওয়ার সামর্থ্য রাখে। এখন উপরে যেতে হলে জায়গামত সেরা ক্রিকেটটা খেলতে হবে। সেরা খেলোয়াড়দের পারফর্ম করতে হবে।’

নিজ দলের শক্তি ও সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে সুজন বোলিং নিয়ে একটু চিন্তার কথা বলেন। তার মূল্যায়ন, ‘ব্যাটিং ঠিক আছে। প্রথম সাতজনের সবাই ক্যাপেবল। তাদের সামর্থ্য প্রমাণিত। এ মহুর্তে বোলিং নিয়ে আমি চিন্তিত।’

সেটা কি শুধু পেস ডিপার্টমেন্ট? সুজনের শেষ কথা, ‘সাকিব নো ডাউট ওয়ার্ল্ড বেস্টদের একজন। মাশরাফি আর মিরাজও খুব ভাল করছে। মাশরাফির লং এক্সপেরিয়ন্স দলের বড় সম্পদ। এখনো এক জায়গায় অনেকটা সময় টানা বল করতে পারে। বুদ্ধি খাটিয়ে ব্যাটসম্যানের মতি গতি বুঝে বল করার সামর্থ্য আছে। সাইফউদ্দিন খুব ভাল বল করছে। মোস্তাফিজও মাঝে মধ্যে জ্বলে উঠছে। তারপরও যেমন ব্যাটিং উইকেটে খেলা হবে, সেখানে নির্ভুল ও নিখুঁত বোলিং করার বিকল্প নেই।’

‘তবে সময় মত নার্ভ ঠিক রেখে বড় দলগুলোর সঙ্গে শেষ ওভারগুলোয় ভাল করা খুব কঠিন। বলতে পারেন, আমি ঐ শেষ ওভারের বোলিং নিয়েই চিন্তা করছি। আর নতুন বলে উইকেট নিতে পারলে আমরা প্রতিপক্ষকে ঝাঁকুনি দিয়ে পেছনে ফেলার সামর্থ্য রাখি। আমাদের ব্যাটিং নিয়ে আমি অন্তত চিন্তিত নই। দারুণ পরিপাটি সাজানো গোছানো ও অভিজ্ঞ -পরিণত পারফরমারের সমারোহ আছে ব্যাটিয়ে। আমার বিশ্বাস, তারা বিশ্বকাপেও ভাল করার পর্যাপ্ত সামর্থ্য রাখে’- সুজনের শেষ কথা।

এআরবি/এসএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।