২০১০ সালের সেই কুখ্যাত ‘স্পট ফিক্সিং’ আগেই টের পেয়েছিলেন আফ্রিদি!
আত্মজীবনী লিখেই তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন পাকিস্তানের বুমবুম খ্যাত আফ্রিদি। নিজের ক্রিকেট জীবনের অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি সেখানে। অনেক অজানা রহস্যের সমাধানও করে দিয়েছেন তিনি। সেখানেই তিনি জানিয়েছেন ২০১০ সালে ইংল্যান্ডে ঘটা সেই কুখ্যাত স্পট ফিক্সিংয়ের ঘটনার কথা।
ওই সময় চার বছর বিরতি দিয়ে টেস্ট দলে ফিরেই অধিনায়ক হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এক ম্যাচ নেতৃত্ব দিয়েই টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন বুমবুম আফ্রিদি।
আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জার’-এ বলতে গেলে একের পর এক বোমা ফাটিয়েছেন শাহিদ আফ্রিদি। তার নিজের সঠিক বয়স, গৌতম গম্ভীর ও জাভেদ মিয়াঁদাদ সম্পর্কে মূল্যায়নের পরে এবার ২০১০ সালে তোলপাড় করা স্পট ফিক্সিং নিয়েও ঝড় তুলেছে আফ্রিদির আত্মজীবনী।
যে বইতে তিনি লিখেছেন, ২০১০ সালে পাকিস্তান ক্রিকেটে ‘স্পট ফিক্সিং’-য়ের বিষয়টা অনেক আগেই তিনি ধরতে পেরেছিলেন যে, ক্রিকেটার ও জুয়াড়িদের মধ্যে এসএমএস আদানপ্রদান চলছে। যার প্রমাণসহ তখনকার পাকিস্তান কোচ ওয়াকার ইউনুসকে জানিয়েছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
২০১০ সালে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ স্টিং অপারেশন চালিয়ে প্রথম ফাঁস করে অধিনায়ক সালমান বাটসহ তিন পাকিস্তানি ক্রিকেটারের ‘স্পট ফিক্সিং’ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার কথা। আফ্রিদির দাবি, এ ঘটনার অনেক আগেই তিনি জানতেন জুয়াড়ি মাজহার মাজিদ এবং পাকিস্তান দলের কয়েকজন ক্রিকেটারের মধ্যে এসএমএস আদানপ্রদান চলছে।
কেন তার কথা তখন শোনা হয়নি? আত্মজীবনীতে আফ্রিদি লিখেছেন, ‘টিম ম্যানেজমেন্ট তখন কোনও গুরুত্ব দেয়নি বিষয়টাকে। চূড়ান্ত বিভ্রান্ত হয়ে ধীরে চলার নীতি নিয়েছিল তারা। হয়তো, টিম ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি শুনে খুব ভয় পেয়ে থাকতে পারে। নয়তো, ওই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত সালমান বাট, মোহাম্মদ আমির, মোহাম্মদ আসিফের উপর বেশি নির্ভর করছিল ভবিষ্যতের জন্য। সত্যি কারণটা কি, তা জানা নেই।’
কিভাবে আফ্রিদি পাকিস্তান ক্রিকেটের এই কেলেঙ্কারির তথ্য আগাম জানতে পেরেছিলেন? আফ্রিদি জানিয়েছেন, ‘২০১০ সালের জুন মাসে শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল (তার নেতৃত্বেই খেলতে গিয়েছিল পাকিস্তান)। সেখানেই জানতে পারেন, জুয়াড়ি মাজহার মাজিদ ও সালমান বাটের মধ্যে নিয়মিত এসএমএস আদানপ্রদান হচ্ছে। সেই মোবাইল বার্তা দেখেছিলেন বলেও দাবি আফ্রিদির। তা কিভাবে সম্ভব হয়েছিল, সেই ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন।
নিজের আত্মজীবনীতে আফ্রিদি লিখেছেন, ‘মাজিদ ও সালমানের এসএমএস দেখতে পেয়েছিলাম শ্রীলঙ্কার সমুদ্র সৈকতে একটি বাচ্চা ও মোবাইল ফোন সারান, এমন এক ব্যক্তির সৌজন্যে।’
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক লিখেছেন, ‘মাজহার মজিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সে সময় শ্রীলঙ্কার এক সমুদ্র সৈকতে ঘুরছিলাম (প্রসঙ্গতঃ মাজহার মাজিদ ছিলেন আবার পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের এজেন্ট)। মাজিদের মোবাইল ফোন তার ছেলের হাত থেকে পানিতে পড়ে যায়। মাজিদ ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে সেই ফোন একটি দোকানে সারাতে দেয়। বেশ কয়েক দিন ফোনটি সেখানে ছিল। ওই দোকানের মালিক আবার আমার এক বন্ধুর বন্ধু। মাজিদের ফোনটি সারাতে গিয়েই প্রথম ওই এসএমএসগুলো দেখে ফেলেছিল দোকানের মালিক। যা আমার বন্ধুর কানে আসে। সেখান থেকেই বিষয়টি আমি জানতে পারি। এ ছাড়াও আরও কয়েকজন এই ঘটনা জেনে গিয়েছিল।’
তবে আফ্রিদি ছাড়া কারা এই ঘটনা আগাম তথ্য জানতে পেরেছিলেন, সে ব্যাপারে কিছু বলেননি এই সাবেক পাক অধিনায়ক। আফ্রিদি লিখেছেন, ‘মোবাইল বার্তা বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই কোনও এক সূত্রে হয়তো জেনেছিলেন, নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড-এর সাংবাদিকেরা।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘বিষয়টি গুরুতর বুঝতে পেরেই তারপর পুরো ঘটনা প্রমাণসহ দলের সে সময়ের কোচ ওয়াকার ইউনুসকে বলি; কিন্তু বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উপর মহলে জানাননি তিনি। হয়তো ওয়াকার ভেবেছিলেন, বিষয়টা যেভাবে দেখানো হচ্ছে, ততটা গুরুতর নয়; কিন্তু এটা যে কি ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে চলেছে পাক ক্রিকেটে তা কয়েকদিন পরে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব বুঝতে পেরেছিল।’
আফ্রিদি আরও লিখেছেন, ‘এরপর আমি দলের ম্যানেজার ইয়াওয়ার সৈয়দকে সব জানাই। তার কাছে আবেদন করি, ক্রিকেটাররা যেন মাজহারের সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে বা ফোনে যোগাযোগ না রাখতে পারে, সেটা দেখতে। সৈয়দ কোনো ব্যবস্থা না নিলে আমি তাকে এসএমএসগুলোর প্রিন্ট আউট দেখিয়েছিলাম। আশ্চর্যজনকভাবে সৈয়দ সেদিন খুব নিস্পৃহভাবে বলেছিলেন, আমরা কি করতে পারি? কিছুই না।’
আফ্রিদি আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, ‘এরপরই বিষয়টি জেনে ফেলে নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড- এর সাংবাদিকরা। এরপর ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে দলের সবাইকে মাজিদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখতে বলি; কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। লর্ডসে প্রথম টেস্টে কিছু একটা দলের মধ্যে চলছে তা আন্দাজ করেই হতাশ হয়ে চতুর্থ দিন খেলার মাঝে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিই সালমান বাটকে।’
আইএইচএস/পিআর