নতুন জার্সির হাতা কিংবা কলারে যোগ হতে পারে লালের ছোঁয়া
বিশ্বকাপ খেলতে যাবার আগে দু'দুটি অন্যরকম ধাক্কা বাংলাদেশ দলে। এক, নতুন দুই সেট জার্সির একটির রঙ ও ডিজাইন নিয়ে প্রশ্ন আর দ্বিতীয়, জাতীয় দলের অফিসিয়াল ফটোসেশনে অন্যতম প্রাণ ও চালিকাশক্তি সাকিব আল হাসানের উপস্থিত না থাকা।
সাকিব ইস্যুতে মিডিয়ার সামনেই হতাশা, দুঃখ ও চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিসিবি প্রধান। আর বিকেলে নতুন জার্সির প্রশংসা করে মন্তব্য করলেও পরে মধ্যরাতে (রাত সাড়ে ১২টার পর) জার্সির রঙ ও ডিজাইন বদলের কথা বলেছেন বিসিবি বিগ বস।
কারণ, ঠিক তুলকালাম বলা যাবে না। সমালোচনার ঝড়ও বয়ে যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৈচৈ। বিশ্বকাপের জন্য কাল বিকেলে শেরে বাংলায় জাতীয় দলের যে সবুজ জার্সি উন্মোচিত হয়েছে, তা কারো কারো পছন্দ হয়নি।
বলার অপেক্ষা রাখে না, নিয়ম ও প্রথা মেনেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুই সেট জার্সি। যার একটি প্রায় সবুজ। যেখানে লাল নেই কোথাও। শুধু পেট আর বুকে সাদা রঙে ‘বাংলাদেশ’ লিখা। তা নিয়েই বিপত্তি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরব।
ডিজাইনে লালের অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়ার পাশাপাশি জার্সির রঙ নিয়েও আছে প্রশ্ন। কেউ কেউ এ জার্সিটাকে আয়ারল্যান্ড আর পাকিস্তানের জার্সির মতো বলে উল্লেখ করছেন। এক শ্রেণির দাবি, জার্সিতে যে সবুজ রঙটা ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার মতো গাঢ় সবুজ বা ‘বটল গ্রিন’ নয়, হালকা সবুজ। যা বাংলাদেশের চিরন্তন জাতীয় পতাকার রঙ নয়। বরং যে সবুজ রঙ এর জার্সি তৈরি করা হয়েছে, সেটার সাথে পাকিস্তানের জার্সির রঙ এর সাযুজ্যই বেশি।
শুধু যে রঙ ও ডিজাইন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তা বলাও বোধকরি ঠিক হবে না। কেউ কেউ জার্সির রঙ-ডিজাইনের প্রশংসাও করেছেন। সবুজ জার্সিতে লাল নেই- অনেকেই এটাকে খুব বড় করে দেখতে নারাজ। তাদের কথা, জাতীয় দলের জার্সি যে একদম জাতীয় পতাকার রঙ ও ডিজাইনের সাথে মিল রেখেই করতে হবে- এমন বাধ্যবাধকতা নেই। অস্ট্রেলিয়াসহ একাধিক ক্রিকেট দল আছে, যাদের জাতীয় দলের পতাকার রঙয়ের সাথে জার্সির রঙয়ের কোনো মিল নেই। কিন্তু সেদেশে একটি কথাও কেউ বলে না।
এদিকে লাল রঙ না থাকার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে, কেউ কেউ আবার ১৯৯৯ সালে এই ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া জার্সির উপমা টানছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে নান্নু, আকরাম, অপি, বিদ্যুৎ, দুর্জয়, সুজন, পাইলট, রফিক, শান্ত ও মঞ্জুরা যে জার্সি পরে প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছিলেন তা মূলত সবুজ আর সাদার মিশেলে, সবুজই বেশি। লালের অস্তিত্ব ছিল না তাতে। কই তখন তো কেউ প্রশ্ন তোলেননি। এসব কথাও হচ্ছে।
মোদ্দা কথা, জার্সি ইস্যুতে সোমবার বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মোটামুটি সরব ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক চলছে। শেষ পর্যন্ত গভীর রাতে (রাত সাড়ে ১২টার পর) বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন টিভি সাক্ষাৎকারে জার্সির ডিজাইন বদলের কথা বলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৈচৈ হলেও কঠিন বাস্তবতা হলো বিসিবি প্রধানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর পরই যে জার্সির রঙ ও ডিজাইন পাল্টে যাবে- এমন নয়। তারও একটা সুষ্ঠু নির্ধারিত প্রক্রিয়া আছে।
বিসিবি ইতোমধ্যে সোমবার দুপুরে উন্মোচিত জার্সি দেখিয়েই আইসিসির অনুমোদন নিয়ে ফেলেছে অর্থাৎ বাংলাদেশ দল যে এবার সবুজ ও লাল দুই সেট জার্সি পরে খেলবে, তার নমুনা আইসিসির কাছে চলেও গেছে। এখন সেই জার্সির রঙও ডিজাইন বদলাতে হলে আইসিসিকে জানাতে হবে।
জানা গেছে আজই আইসিসির কাছে জার্সির ডিজাইন বদলের জন্য বলা হবে। সেখানে পরিবর্তিত বা রদবদল করার পর জার্সির ডিজাইন কি দাঁড়াবে? সেটাও জানাতে হবে। কারণ, পরিবর্তিত জার্সির রঙ ও ডিজাইন জানার পর আইসিসি সেই অনুযায়ী বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, ম্যাগাজিন, বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুনসহ যাবতীয় প্রচার ও আনুসাঙ্গিক কাজে ব্যবহার করবে। তবে জার্সিতে এমন পরিবর্তন আনার অতীত নজির রয়েছে অনেক। ফলে আইসিসির কাছে আবেদন করা হলে জার্সিতে পরিবর্তন আনা কঠিন কাজ হবে না।
এদিকে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, এখন আর ঢালাও রদবদল করার সুযোগ নেই। সবুজ জার্সির যে কোনো এক অংশে লাল জুড়ে দেয়ার চিন্তা ভাবনাই চলছে। যতদূর জানা গেছে সবুজ জার্সির হাতা (বাহুটা পুরো) কিংবা কলারটা লাল রঙে করার সম্ভাবনাই বেশি। তবে লাল রঙের যে জার্সি করা হয়েছে, তাতে কোনো বদল আসছে না। কারণ সে জার্সিতে বুকের মধ্যেই সবুজের অস্তিত্ব রয়েছে।
এআরবি/এসএএস/জেআইএম