শিরোপার লড়াইয়ে নামার আগে ছয় কোচের ভাবনা

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১০:০৬ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০১৯

দীর্ঘ ৩৫ দিন ও ৬৬ ম্যাচের লড়াইয়ের পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ পেয়েছে চলতি আসরের সেরা ছয় দল। সব হিসেব নিকেশ পাল্টে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করেছে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। বাকি ছয় দল হলো প্রাইম ব্যাংক স্পোর্টিং ক্লাব, আবাহনী লিমিটেড, প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।

তাদের নিয়েই আগামীকাল থেকে শুরু হবে শিরোপার লড়াই। যেখানে টেবিলের প্রথম তিন দল রূপগঞ্জ, প্রাইম ব্যাংক এবং আবাহনীর শিরোপা জেতার সম্ভাবনা এখনো জোরদার। তবে বাকি তিন দলের পক্ষে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট অর্জন করা বেশ দুঃসাধ্য কাজই বটে।

সে যাই হোক, সোমবার সুপার লিগ ম্যাচ শুরুর আগে কী ভাবছেন ছয় দলের কোচ?- সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছে জাগো নিউজ। চলুন দেখে নেয়া যাক কোচদের জবানিতেই:

আমরা সতর্ক-সাবধানি, আত্মতুষ্টিতে ভোগার প্রশ্নই আসে না
আফতাব আহমেদ, লিজেন্ডস অফ রুপগঞ্জ

চার পয়েন্ট এগিয়ে থাকাটা বাড়তি সুবিধা। তবে আমরা তাতে আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। আমরা জানি সুপার লিগের সব দলই সমৃদ্ধ ও শক্তিশালি, প্রতিপক্ষ হিসেবেও কঠিন। তাই আমরা সজাগ, সতর্ক ও সাবধানী। এখন তাই হালকা মেজাজে থাকার প্রশ্নই আসে না। সুপার লিগে আমাদের প্রথম ম্যাচ মোহামেডানের সাথে। লক্ষ্য থাকবে ঐ ম্যাচটি জিতে পরবর্তী ম্যাচের কথা চিন্তা করা।

আসলে আমি পুরো প্রথম পর্বেই ম্যাচ বাই ম্যাচ ভেবে, গেম প্ল্যান করে এসেছি। সুপার লিগেও তাই আমরা ম্যাচ পিছু লক্ষ্য ও পরিকল্পনা সাজাবো। কাজেই সুপার লিগের প্রথম ম্যাচে মোহামেডানের সাথে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক ও সাবধান।

 

Aftabএছাড়া মোহামেডান ও দল হিসেবে ভাল। তারা যদি একটু সুযোগ পায়, তাহলে আমাদের আর দাড়াতে দিবে না। সুতরাং আমাদের কোনও সুযোগই নেই কাউকে হালকাভাবে নেয়ার। এমনকি আমি শেষ ম্যাচেও বলেছি যে আবাহনীর সাথে ম্যাচ জেতার পরে যখন তুলনামূলক কম শক্তির উত্তরার সাথে খেলেছি সেখানেও আবাহনীর মত এফোর্ট দিয়ে খেলতে।

আমার শেষ কথা হলো, সুপার লিগে আমরা যদি প্রথম তিনটি ম্যাচ জিততেও পারি, তারপরেও বাকি দুই ম্যাচে আমাদের ক্যাজুয়াল হওয়ার কোনও সুযোগ নেই।

এর আগে একবার ছয় নম্বর হয়ে সুপার লিগে উঠেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম
সারোয়ার ইমরান, প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব

কে কিভাবে চিন্তা করেন জানি না, আমি মনে করি প্রথম লিগ শেষে পয়েন্ট টেবিলের যে অবস্থা, সেটাই শেষ কথা নয়। হ্যাঁ মানছি লিজেন্ডস অফ রুপগঞ্জ আমাদের চেয়ে চার পয়েন্ট এগিয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। তারপরও আমার মনে হয় এখনো আমাদের বা অন্য দলের লিগ বিজয়ের অবশ্যই সম্ভাবনা আছে। প্রতি দলের পাঁচটি করে খেলা বাকি আছে। আমরা গ্রুপ পর্বে রূপগঞ্জকে হারিয়েছি। আমরা যদি সুপার লিগে আরেকবার ওদের হারাই, আর অন্য কোন দলের কাছে যদি রূপগঞ্জ আরও এক ম্যাচ হারে, তাহলে অবশ্যই লিগ টেবিলের চালচিত্র পাল্টে যাবে। অন্য দলের সুযোগ চলে আসবে। তাই আমার দল প্রাইম ব্যাংকের চান্স আছে।

আমি আরও একটি বিশেষ কারণে আশাবাদী। আমার দীর্ঘ কোচিং ক্যারিয়ারে একবার প্রথম লিগে পাঁচ কি ছয় নম্বর হয়ে সুপার লিগে উঠে সুপার লিগে সব ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। সনটা ঠিক মনে নেই, ১৯৯৭-৯৮ হবে হয়তো। বলতে পারেন ৯০ দশকের শেষ দিকে। আকরাম খান ছিল অধিনায়ক। আমরা (আবাহনী) পাঁচ কি ছয় নম্বর দল হয়ে সুপার লিগে উঠেও সুপার লিগে সব খেলা জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। তাই আমি প্রাইম ব্যাংককে নিয়ে আশাবাদী। আমি মনে করি আমরা চ্যাম্পিয়নশীপের দাবিদার।

আমি চাই সুপার লিগে আবাহনী সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দিক
খালেদ মাহমুদ সুজন, আবাহনী লিমিটেড

একটু না, পরপর দুই হারে আবাহনীর হিসেব অনেকটাই কঠিন হয়ে গেল। চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়েও পিছিয়ে গেছি আমরা। তারপরও সুপার লীগে ছয়টা সেরা দল উঠেছে। ক্রিকেটে যে কোনো কিছুই হতে পারে, ঘটেও। কিন্তু আমি ওইগুলো নিয়ে চিন্তা করি না। আমি ভাবছি কিভাবে আবাহনী পরের পাঁচটা ম্যাচে ভালো খেলতে পারে।

আমার আশা একটাই, আবাহনী সুপার লিগে তাদের সেরাটা উপহার দিক। কালকের ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটা একটা করে যদি চিন্তা করি প্রাইম দোলেশ্বরের সাথে আমাদের ম্যাচটা খুবই ভাইটাল। আমি কোচ হিসেবে মনে করি আবাহনী এখনো তার সেরা ক্রিকেট খেলেনি।

কাগজে কলমে আমাদের যেই শক্তি, মাঠে সেই শক্তিমত্তার পরিচয় আমরা এখনো দিতে পারিনি। উত্তরার সাথে আমরা একটা ম্যাচে বড় ব্যবধানে জিতেছি, কিন্তু আবাহনীর তুলনায় উত্তরা কোনো দলই না। ওই হিসেবে আবাহনী এখনো নিজেদের ছন্দে খেলতে পারেনি। আমি অপেক্ষায় আছি। সুপার লীগের এই পাঁচটা ম্যাচ আবাহনী ছন্দে খেলবে।

শিরোপা নয়, যতটা সামনে আগানো যায় সেটাই লক্ষ্য
মিজানুর রহমান বাবুল, প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব

আমার মনে হয় লিজেন্ডস অফ রুপগঞ্জ অনেক সুবিধাজনক জায়গায় আছে। যেখান থেকে চ্যাম্পিয়ন হবার আশা করাই যায়। রুপগঞ্জ এখন নিকট প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৪ পয়েন্ট এগিয়ে। এই অবস্থায় আমার মনে হয় না আসলে আর কারো চ্যাম্পিয়ন হবার সুযোগ আছে। ওরা যদি সুপার লিগের প্রথম তিন ম্যাচ জিতে যায়, তাহলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে।

এমনকি ওরা যদি প্রথম দুইটা ম্যাচ যদি জিতে, তাও শিরোপার খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। তাই রূপগঞ্জকে আটকানো কঠিন। তবে হ্যাঁ, এখন শুধু নিকট প্রতিদ্বন্দ্বীগুলোর হাতেই না, খেলা এখন রূপগঞ্জের হাতে। ওরা যদি আবার সুপার লিগে দুই ম্যাচ হেরে যায়, তখন হিসেব বদলে যেতে পারে।

আমি ধরেই নিয়েছি আমার টিম মানে প্রাইম দোলেশ্বরের তেমন কোন চান্স নেই। ছয় পয়েন্ট পিছিয়ে। পাঁচ খেলায় জিতলেও হবে না। তখন বাকি দলগুলোর মাঝেও তো কাটাকাটি হবে। কাজেই এতদুর পিছিয়ে পড়া অবস্থা থেকে শেষ হাসি হাসা কঠিন।

প্রথম লিগ শেষে আমরা যেখানে আছি, সেখান থেকে সামনে যতটা আগানো যায়, প্রাইম দোলেশ্বরের সুপার লিগের টার্গেট সেটাই। যদি দুই-তিনের মধ্যে যেতে পারি, সেটাই বড় প্রাপ্তি হবে। সম্ভাবনা নাই, এই চিন্তায় আমি ফরেন প্লেয়ারকে (সাদ নাসিম) দেশে পাঠিয়ে দিয়েছি।

রুপগঞ্জকে টপকে অন্য দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়া খুব কঠিন
সোহেল ইসলাম, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব

আমার মনে হয় এখন লিগ টেবিলের যে অবস্থা, এখান থেকে রূপগঞ্জকে নিচে নামানো এবং অন্য দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়া খুব কঠিন। সব ম্যাচ জিতলেও হয়ত হবে না। বাস্তবতা হচ্ছে চান্স নাই। আমাদের শেখ জামালের টার্গেট হবে যত ওপরে যাওয়া যায়।

তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা যা খেলেছি, যে জায়গায় আছি, এর চেয়ে ভাল খেলার সামর্থ্য ছিল, আরও ভাল খেলাও উচিৎ ছিল। আমাদের দলে থেকে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সম্ভবত সুপার লিগেও পাবো না। ওর কাঁধের ইনজুুরি। প্রাইম দোলেশ্বরের সাথে খেলার দিন ওর সাথে কথা হয়েছে। খেলার চান্স খুব কম ।

তারপরও আমি অখুশি নই। কারণ, টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন হবার রেশ না মিটতেই তিন দিনের মধ্যে লিগ শুরু হয়ে যায়। সেই সাফল্যের রেশ নিয়ে খেলতে নামাও ছিল একটা কঠিন বিষয়। প্লেয়াদের মাইন্ড সেট ঠিক ছিল না।

তারা টি-টোয়েন্টি ট্রফি জেতার উৎসব আনন্দের রেশ কাটিয়ে ওঠার আগে মাঠে নেমেই প্রথম দিন উত্তরার কাছে হেরে যায়। এরপর ব্রাদার্সের সাথেও হারি। সেখান থেকে পরের নয় ম্যাচের ছয়টিতে জিতে সুপার লিগ চলে আসা সহজ কাজ ছিল না। পরের দিকে ছেলেরা ব্রিলিয়ান্ট কামব্যাাক করছে।

এখনো অনেক কিছুই ঘটতে পারে
মঞ্জুরুল ইসলাম, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব

আমি কিছুতেই ভাবতে চাই না ও মনে করি না যে আর কোন দলের চান্স নেই, অবশ্যই আছে। আমাকে পারসোনালি বলতে দিলে বলবো, কোন দল যদি সুপার লিগে সব ম্যাচ জেতে, তাহলে তার চান্স থাকবে। এখন সে দল এক, দুই না তিন-চার নম্বর হয়ে সুপার লিগে উঠে এসেছে- সেটা ধর্তব্য নয়। সুপার লিগে একটা দল সব ম্যাচ জিতলে বাকি দল গুলোর মধ্যে আরও ওঠা নামার পালা চলবে। তখন হিসেবে পাল্টে যাবে, চালচিত্রও হবে ভিন্ন।

হ্যাঁ রূপগঞ্জের আলোকে যদি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে বলি, তাহলে বলবো, ওরা তিন ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন। আবার বেশী বা সব ম্যচ হারলেই সব শেষ। আমি মনে করি আমরা ছয় নম্বর দল হিসেবে সুপার লিগে উঠে আসলেও মোহামেডানেরও চান্স আছে।

সুপার লিগের সব ম্যাচ ডু অর ডাই ম্যাচ। সব ফাইনাল। আমরা যদি কাল সোমবার সুপার লিগের প্রথম ম্যাচে লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জকে হারাতে পারি, তাহলে আমরাও ওপরে উঠবো। কাজেই হতোদ্যম হবার কিছু নেই। আমাদের ঘাটতির জায়গা পেস বোলিং। সে জায়গায় উন্নতি ঘটাতে পারলে আমাদেরও ভাল চান্স থাকবে।

এআরবি/এসএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।