‘অফস্পিনার’ আশরাফুল যখন মোহামেডানের জয়ের হাতিয়ার!
‘আচ্ছা, মোহামেডানের কি হলো? লাইনআপ তো মন্দ না। ভালো। কাগজে কলমে তিন নম্বর দল। এর চেয়ে কমজোরি ও দূর্বল দল নিয়েও কোন কোন দল ভালো খেলছে। জয়ের পাল্লা ভারি। মোহামেডান কোথায় মার খাচ্ছে?’
‘ব্যাটসম্যানরা তো রান করছেন। কিন্তু বোলিংয়ের অবস্থা খুব করুণ। বোলাররা বিশেষ করে পেসারর আলাউদ্দীন বাবু আর শাহাদত হোসেন রাজিব হালি পানি পাচ্ছেন না। ম্যাচ জেতানো বোলিং বহুদূরে, উল্টো এলোমেলো ও আলগা বোলিং করে দলকে পরাজয়ের দিকে ধাবিত করছেন। মোহামেডান শিবিরে কি আর কেউ নেই। অবহেলিত পেসার আজিম আর বাঁহাতি ম্পিনার রাহাতুল ফেরদৌস জাভেদকে কি ট্রাই করা যায় না?’-গত কদিন ক্লাব পাড়া আর প্রেস বক্সে এমন গুঞ্জন, ফিসফাস শোনা গেছে।
অবশেষে বিলম্বিত বোধোদয় সাদা-কালোদের। প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে সুপার লিগের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখার ম্যাচে লাইন আপে বড় ধরণের রদবদল মোহামেডানে। যে দুই পেসার আগের দুই ম্যাচে আলগা বোলিং করে প্রকারন্তরে ম্যাচ হারাতে রেখেছেন মুখ্য ভূমিকা, সেই শাহাদাত হোসেন রাজিব আর আলাউদ্দীন বাবুকে বাদ দিয়ে একজন মাত্র পেসার (শফিউল) নিয়ে সোমবার মাঠে নেমে শক্তিশালী ও লিগ টেবিলে মোহামেডানের ওপরে থাকা প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে মাঠে নামা।
আর বিকেএসপিতে সেই বদলে যাওয়া লাইন আপেই বড় জয়ের স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে মোহামেডান। আজ আবার বড় স্কোর মোহামেডানের। বিকেএসপিতে শক্তিশালী ও লিগ টেবিলে ওপরের দিকে থাকা প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে অধিনায়ক রকিবুল হাসানের অনবদ্য শতক (১০৪ বলে ১০২), ভারতীয় রজত ভাটিয়ার হাফ সেঞ্চুরি (৬০ বলে ৬৬) এবং সোহাগ গাজীর ক্রমাগত ঝড়ো ব্যাটিংয়ে (১৪ বলে ৩৩) আবার ২৯৬ রানের বড় স্কোর সাদা-কালোদের।
প্রশ্ন ছিল এবার কি শেষ রক্ষা হবে? এমন কঠিন হিসেব নিকেশকে সামনে রেখে আজ লাইন আপে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাদা-কালোদের। বল ও ব্যাট হাতে কিছুই করতে না পারা এবং প্রায় নাম সর্বস্ব অলরাউন্ডার বনে যাওয়া আলাউদ্দীন বাবুকে বাদ দেয়া।
এর আগে অন্তত দুই ম্যাচে ডেথ ওভারে বোলিং করে দলের পরাজয় ডেকে এনেছিলেন আলাউদ্দীন বাবু। আর গত ম্যাচে ৭০+ রান দেয়া শাহাদাত হোসেন রাজিবও ড্রপ। দুই পেসারের বদলে আজ মোহামেডান একাদশে অন্তর্ভুুক্ত হয়েছেন আশরাফুল আর রাহাতুল ফেরদৌস জাভেদ।
মোহামেডান যে দুই ম্যাচে বড় স্কোর গড়েও হেরেছে, তার প্রতিটিতে আলাউদ্দীন বাবুর আলগা বোলিং দায়ী। শেরে বাংলায় লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের বিপক্ষে ২৯৫ রান করে শেষ ওভারে গিয়ে হারা ম্যাচে আলাউদ্দীন বাবু ১০ ওভারে ৬০ রান দিয়ে পেয়েছিলেন এক উইকেট।
আর ঠিক আগের ম্যাচে শাইন পুকুরের সাথে ৩২৪ রান করেও না পারা ম্যাচে আলাউদ্দীন বাবু ব্যর্থতার ঘানি টেনে প্রকারন্তরে দল হারানো বোলিংই করেছেন। দুই বল আগে হার মানা ঐ ম্যাচে আলাউদ্দীন বাবুর ৯ ওভারে ওঠে ৬৫ (এক উইকেট)।
একই ভাবে শাইনপুকুরের সাথে খেলায় চরম মার খেয়ে মোহামেডানের পরাজয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন পেসার শাহাদাত হোসেন রাজিব। তার ৭.৪ ওভারে ৭৫ রান তুলে মোহামেডানকে হতাশায় ডুবিয়েছিলেন শাইনপুকুরের ব্যাটসম্যানরা।
আজ (সোমবার) সেই দুই পেসারকে বাইরে রেখে একজন মাত্র পেসার শফিউল ইসলামকে নিয়ে মাঠে নামা। আর ব্যাট হাতে চরম ফ্লপ আশরাফুল লেগস্পিন বাদ দিয়ে এখন অফস্পিন করেন। তার অফস্পিনটাই এখন বেশি কার্যকর। সেই চিন্তায় তাকে নেয়া।
আজকের ম্যাচে আশরাফুলের ব্যাটিংয়ের চেয়ে তার বোলিংটার ওপরই বেশি দৃষ্টি ছিল মোহামেডানের। আশরাফুলকে পাঁচ নাম্বার বোলার ধরেই আজ মোহামেডান লাইনআপ সাজানো হয়েছে। তা বোঝা যায়, আগের ম্যাচে শাইনপুকুরের বিপক্ষে পুরো ১০ ওভার বোলিং করে ৮০ রান দেয়া জেন্টাল মিডিয়াম পেসার রজত ভাটিয়াকে আজ মাত্র এক ওভার বোলিং করানো দেখে।
অফস্পিনার আশরাফুলের সাথে আজ মোহামেডানের সংযোজন রাহাতুল ফেরদৌস জাভেদ। কয়েক বছর আগে জাতীয় যুব দলে খেলা এবং মাঝে প্রায় মোহামেডানের ঘরের ছেলে বনে যাওয়া রাহাতুল ফেরদৌস জাভেদ মূলতঃ বাঁহাতি স্পিনার। এবারের লিগে এ বাঁহাতি স্পিনারের প্রথম মাঠে নামা।
ব্যাট হাতে ৪ রানে ফেরা আশরাফুল বল হাতে বেশ ভালো করেছেন। ৩৭ রানে ৩ উইকেট দখল করে আজকের ম্যাচে মোহামেডানের অন্যতম সফল বোলার আশরাফুল।
আর একটি মাত্র উইকেট পেলেও বাঁহাতি রাহাতুল ফেরদৌস জাভেদও খুবই মিতব্যয়ী বোলিং করে ১০ ওভারে ৩২ রান দিয়েছেন। যেখানে আলাউদ্দীন বাবু আর শাহাদাত রাজিবরা ১০ + ১০ = ২০ ওভারে গড়ে ৬ রানের মত করে দিয়েছেন কয়েক ম্যাচ। সেখানে আজ আশরাফুল আর জাভেদের ২০ ওভারে উঠেছে মাত্র ৬৯ রান। ওভার পিছু ৩.৪৫ রান করে।
কার্যত সেটাই মোহামেডানের জয়ের পিছনে রেখেছে বড় ভূমিকা। তবে বল হাতে আসল কাজ করে দিয়েছেন অফস্পিনার সোহাগ গাজী। ব্যাট হাতে প্রতি ম্যাচে প্রায় ১৬০ থেকে ২০০ স্ট্রাইক রেটে ঝড়ো ব্যাটিং করা অফস্পিনার সোহাগ গাজী আজ প্রাইম ব্যাংকের ব্যাটিং লাইন আপের ওপর প্রথম আঘাত হানেন।
আজও প্রথম দিকে লক্ষণ ভালো ছিল না। প্রাইম ব্যাংকের দুই ওপেনার এনামুলক হক বিজয় আর নাজমুল হোসেন মিলন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিলেন শুরুতে। এক সময় প্রায় পৌনে দু‘শো স্ট্রাইক রেটে রান তুলে মোহামেডান ফ্রন্টলাইন বোলিংকে নিস্তেজ করে দিয়েছিলেন এনামুল হক বিজয়। কিন্তু বোলিংয়ে এসে তাকে নিবৃত্ত করেন সোহাগ গাজী। রান গতি কমানোর পাশাপাশি প্রাথমিক ব্রেক থ্রু এনে মোহামেডানকে জয়ের পথ দেখান এ অফস্পিনার। ৩৫ বলে ২৬ করা বিজয় আর নাজমুল মিলনকে (২৯ বলে ১৯) আউট করে ম্যাচের চিত্র পাল্টে দেন সোহাগ গাজী।
কি আশ্চর্য! আজও পেসার শফিউল সুবিধা করতে পারেননি। বেদম মার খেয়েছেন। তার ৩ ওভারে উঠেছে ৩১ রান। তবে তা পুষিয়ে দিয়েছেন চার স্পিনার সোহাগ গাজী (৪/২১), আশরাফুল (৩/৩৭), রাহাতুল ফেরদৌস (১/৩২) ও সাকলাইন সজিব (১/২২)। তারা মিলে পতন ঘটিয়েছেন ৯ উইকেটের। আর তাতেই বড় জয় মোহামেডানের।
মোহামেডানের ২৯৬ রানের জবাবে বৃষ্টিবাধায় পড়ার পর ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে প্রাইম ব্যাংকের লক্ষ্য দাঁড়িয়েছিল ৩৯.১ ওভারে ২৮৪ রানের। চার স্পিনারের ঘূণিতে ৯ উইকেটে ১৫০ রানের বেশি এগোতে পারেনি এনামুল বিজয়ের দল। ডাকওয়ার্থ লুইসে ম্যাচটা তারা হেরেছে ১৩৩ রানের বড় ব্যবধানে।
এআরবি/এমএমআর/এমএস