ফতুল্লায় স্টেডিয়ামের পানি নিষ্কাশন কাজে বিলম্ব এনএসসির কারণেই!
পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় বড় ধরনের ত্রুটি। নাহ, আউটফিল্ডের কিংবা মাঠের ভিতরের নয়, সমস্যাটা মূল স্টেডিয়ামের ঠিক বাইরে। ভারি বৃষ্টি এবং বর্ষা মৌসুমের বড় সময়, বিশেষ করে আশপাশের ডোবাগুলো অবিরাম বর্ষণ ও বর্ষায় পানিতে টইটম্বুর হয়ে পড়লে পানি জমে থাকে। স্টেডিয়ামের প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে মূল স্টেডিয়ামের ভিআইপি গ্র্যান্ডস্ট্যান্ড দিয়ে ঢোকার আগে বিশেষভাবে নির্মিত আউটার স্টেডিয়ামের পুরো এলাকা ডুবে থাকে পঁচা পানিতে।
সে কারণেই রাজধানী ঢাকার খুব কাছে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ হয় না। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে হিসেব করলে চার থেকে পাঁচ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম।
ইতিহাস জানাচ্ছে এই মাঠে শেষ টেস্ট ম্যাচ হয়েছিল ২০১৫ সালের ১০-১৪ জুন। ভারত আর বাংলাদেশের সেই বৃষ্টি বিঘ্নিত টেস্ট ম্যাচটি অমিমাংসিতভাবে শেষ হয়েছিল।
সর্বশেষ একদিনের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে তারও একবছর আগে ২০১৪ সালের ১ মার্চ (বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান)। আর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়েছে তিন বছর একমাস আগে (২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, হংকং আর আরব আমিরাতের মধ্যকার)।
মাঝের বছরগুলোয় ঢাকার প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগ হলেও আর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি এখানে। এমনকি বিপিএলের একটি ম্যাচও আজ অবধি গড়ায় ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে।
শুধুই মাঠের বাইরের পানি নিষ্কাশন সমস্যা? নাকি অন্য কোন সমস্যা? যাতায়াত কিংবা মাঠ-উইকেট? নাহ! সে অর্থে তেমন বড় সমস্যা নেই আর। যাত্রাবাড়ি ফ্লাই ওভার নির্মাণের পর যাতায়াত সমস্যা অনেক ভাল হয়ে গেছে। ঢাকার গুলিস্তান থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে ফতুল্লা স্টেডিয়ামে চলে যাওয়া যায় এখন।
আর মাঠ ও উইকেটেও কোন বড় ধরনের ত্রুটি নেই যে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন সম্ভব নয়। আনুসাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা ড্রেসিং রুম ও গ্র্যান্ডস্ট্যান্ড আহামরি না হলেও খেলা হবার মত সম্ভাব্য সুযোগ সুবিধা ও উপকরণ আছে এখানে।
তারপরও দীর্ঘদিন ফতুল্লা স্টেডিয়াম প্রায় অনাদরেই পড়ে আছে। শুধু প্রিমিয়ার লিগই হয়। মাঝে পানি নিষ্কাশন সমস্যার সমাধানে বিসিবি কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের স্মরণাপন্নও হয়েছিল বোর্ড।
বুয়েটের এক্সপার্টরা কি মতামত দিয়েছেন? তারা কি করতে পারবেন? মূল সমস্যার আদৌ কোন সমাধান হবে? প্রসঙ্গতঃ মূল সমস্যাটা বেশ বড়। সেটা শুধু স্টেডিয়ামের আশপাশ থেকে আসা নানা বর্জ্য ও পানি নয়। প্রকৃত সমস্যা হলো ঢাকা-নারায়নগঞ্জ সড়ক থেকে স্টেডিয়ামের প্রবেশ পথ এবং স্টেডিয়াম অনেক নিচুতে। প্রায় ছয়-সাত ফুট নিচু। যে কারণে সব পানি গড়িয়ে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের ভেতরের প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকে পড়ে।
স্টেডিয়ামের বাইরে যে আউটার স্টেডিয়াম, সেখানে গিয়ে জমা হয়। আর বের হতে পারে না। এর সাথে ক্রমাগত বৃষ্টিতে জমে পানি। আশপাশের বর্জ্যসহ ওয়াসার পানিও যোগ হয়। যা সহজে সরে না। পুরো এলাকা পুঁতি-দুর্ঘন্ধময় হয়ে ওঠে। যা শুকাতে শুকাতে লেগে যায় কয়েক মাস এবং তারপরও আশপাশে অস্থাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
সেই মূল সড়ক থেকে ছয় সাত ফুট পর্যন্ত ঢালু থাকার কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় আছে বড় ধরনের ত্রুটি। যে কারণে বর্ষার সময়, বিশেষ করে অতি বর্ষণে বৃষ্টির পানি, আশপাশের ডোবা-নালার পানি, বর্জ্য এবং ওয়াসার পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
কি অবস্থা? এ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার কোন উন্নতি ঘটবে না? অনেক দিন পরে সে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন আজ বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। আজ মিরপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের কাজ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে নাজমুল হাসান পাপন বোঝানোর চেষ্টা করলেন, কাজ চলছে। তবে তা চলছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) অধীনে। তাই কাজে এতটা সম্ভুক গতি।
পাপনের কথা, ‘মাঠে কিছু কাজের বাকি আছে। আমরা আগে থেকেই বলছিলাম এটা আমাদের দিয়ে দিতে। আমাদের দিয়ে দিলে এটার রক্ষণাবেক্ষণ, মেন্টেনেন্স- যা যা লাগে আমরা করে দেব। এখন এটা এনএসসি করছে, ওরা অনেক দেরি করছে। আমাদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। সমস্যার সমাধান না হলে আমরা আন্তর্জাতিক খেলা দিতে পারছি না। সেই জন্য আমরা বুয়েটকে নিযুক্ত করেছি। এনএসসি করছে; কিন্তু আমরা আমাদের তরফ থেকে যতটুকু পারি সাহায্য করছি। আশা করছি দ্রুত এটার সমাধান করতে পারব।’
এআরবি/আএইচএস/এমএস