শেষ হাসি কার-দোলেশ্বর না শেখ জামালের?

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১২:১৮ পিএম, ০৪ মার্চ ২০১৯

খালি চোখে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই শুধু 'ধুমধাড়াক্কা' আর চার ছক্কার অবাধ প্রদর্শনী। আসলে কি তাই? ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরমেটে শুধু ধুন্ধুমার মার আর চার ছক্কা হাঁকিয়েই শেষ হাসি হাসা যায়? অতি বড় ক্রিকেট পণ্ডিতও হয়তো বলবেন, 'না, যায় না।'

আসলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট হচ্ছে অংকের খেলা, হিসেবের খেলা। সর্বোপরি ছন্দের খেলা। যে দল নির্দিষ্ট দিনে ও আসল সময়ে সঠিক ছন্দ খুঁজে পায়, জয়ের মালা তার গলায়ই পরে। তাই টি-টোয়েন্টি ফরমেটে কাগজে কলমের হিসেব নিকেশের সাথে মাঠের হিসেব মেলে খুব কম।

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের শীর্ষ আসর প্রিমিয়ার টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের এবারের আসরের চিত্রটাও তেমনই। কাগজে কলমের তিন শীর্ষ দল আবাহনী, মোহামেডান ও গাজী গ্রুপ সেমিফাইনালেই উঠতে পারেনি।

ফেবারিটের তকমাধারিদের মধ্যে টিকে আছে শুধু শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। আজ সন্ধ্যায় (ছয়টায়) শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি লিগের ফাইনালে শেখ জামাল মুখোমুখি হবে প্রাইম দোলেশ্বরের।

গ্রুপপর্বের প্রাচীর টপকে সেমির যুদ্ধে প্রাইম ব্যাংককে হারিয়ে ফাইনালে প্রাইম দোলেশ্বর। আর শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে পরাজিত করে শিরোপা নির্ধারণী লড়াইয়ে জায়গা করে নিয়েছে শেখ জামাল।

সাধারণত ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট ঘরে বসে টিভিতে দেখার সুযোগ কম। তবে এবার সেমিফাইনাল থেকে ক্রিকেট অনুরাগীরা এ আসরের খেলা দেখতে পারছেন। আজও গাজী টিভিতে দেখা যাবে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচটি।

ইতিহাস জানাচ্ছে, এক যুগ আগে ২০০৬ সালে যখন এই টুর্নামেন্ট প্রথম হয়েছিল; তখনও তারকায় ঠাসা ওল্ড ডিওএইচএস, সোনারগাঁ ক্রিকেটার্স এবং আবাহনীকে টপকে শিরোপা জিতেছিল তুলনামূলক কম শক্তির মোহামেডান।

আজ যিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক অবিসংবাদিত উইলোবাজ, সেই তামিম ইকবাল তখন চাচা আকরাম খানের নেতৃত্বে ওল্ড ডিওএইচএসের ওপেনার। তামিমের পার্টনার ছিলেন সে সময়ের আলোচিত ক্রিকেটার মেহরাব জুনিয়র।

সেখানে মোহামেডানের ওপেনিং জুটিতে ছিলেন জুনায়েদ সিদ্দিকী ও ইমতিয়াজ তান্না। বলার অপেক্ষা রাখে না, দুজনার নাম ডাক ছিল তামিম-মেহরাব জুনিয়রদের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই জুনায়েদ-তান্নার ওপেনিং জুটিই মোহামেডানকে শিরোপা জিতিয়েছিল।

প্রথম টি-টোয়েন্টি লিগের টপ স্কোরার ছিলেন জুনায়েদ। আর রান তোলায় দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন ইমতিয়াজ তান্না।

এবারও কিছু নতুন মুখ আর কজন প্রতিষ্ঠিত ও পরিণত পারফরমার ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে উঠেছেন। তাদের অন্যতম হলেন ফরহাদ রেজা। জাতীয় দলের এ সাবেক অলরাউন্ডার এবার প্রাইম দোলেশ্বরের অধিনায়ক। প্রায় প্রতি ম্যাচে ব্যাট ও বল হাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করে প্রাইম দোলেশ্বরকে ফাইনালে তোলা ফরহাদ রেজা সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

অন্যদিকে সেমির যুদ্ধে শাইনপুকুরের বিপক্ষে ২৯ বলে ৭২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে শেখ জামালকে জয় এনে দিয়েছিলেন অলরাউন্ডার জিয়াউর রহমান। এই মুহূর্তে জাতীয় দলের বাইরে থাকা নুরুল হাসান সোহানের উইকেটকিপিং, ব্যাটিং এবং নেতৃত্বও শেখ জামালের বড় শক্তি।

আজকের ফাইনালে শেখ জামালের অন্যতম নির্ভরতা নাসির হোসেন। এ মেধাবী অলরাউন্ডার প্রথমে ফর্মহীনতা ও পরে ইনজুরির কারণে জাতীয় দলের বাইরে। বিপিএলে অপারেশনের ধকল কাটিয়ে তেমনভাবে নিজেকে মেলে ধরতে না পারলেও প্রিমিয়ার লিগে ভালো করতে প্রচুর পরিশ্রম করছেন নাসির। কোচ সোহেল ইসলাম (আগের তিন চার বছর মোহামেডানের কোচের দায়িত্বে থাক) আজকের ফাইনালে নাসিরের কাছ থেকে ভালো কিছুর আশা করছেন।

একইভাবে প্রথম টি-টোয়েন্টি লিগের ফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ ইমতিয়াজ তান্নাও আছেন আজকের ফাইনালে। শেখ জামালের এ ওপেনার আজ কি করেন, সেটাই দেখার।

অন্যদিকে প্রাইম দোলেশ্বরের প্রধান চালিকাশক্তি ফরহাদ রেজা। এ অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারের চৌকশ নৈপুণ্যে (৩২ রানে ৫ উইকেট ও ৮ বলে ২৪ রানের হার না মানা ইনিংস) প্রাইম ব্যাংককে হারিয়ে ফাইনালে দোলেশ্বর। তাই আজকের ফাইনালেও প্রাইম দোলেশ্বরের আশা ভরসার কেন্দ্রবিন্দু ফরহাদ রেজা।

তবে ফরহাদ রেজা ছাড়াও প্রতিষ্ঠিত কোচ মিজানুর রহমান বাবুলের দোলেশ্বর বাহিনীতে আরাফাত সানি ও মার্শাল আইয়ুবের মতো প্রতিষ্ঠিত পারফরমার এবং ওপেনার সাইফ হাসান, সৈকত আলির মতো তরুণ ক্রিকেটারও রয়েছেন।

তাদের দল ফাইনালে নেই। তারপরও শাইনপুকুরের তরুণ সম্ভাবনাময় টপ অর্ডার আফিফ হোসেন ধ্রুব ও পর্যাপ্ত মেধা থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে না পারা শুভাগতহোমও এবারের টি-টোয়েন্টি লিগে দারুণ খেলেছেন। কিন্তু সেমির লড়াইয়ে জিয়ার অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের কাছে হার মানে তাদের দল শাইনপুকুর।

একইভাবে এনামুল হক বিজয়, আরিফুল হক, জাকির হাসান ও ছোট আল আমিনের মতো প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার থাকা সত্ত্বেও প্রাইম ব্যাংক কুলিয়ে উঠতে পারেনি প্রাইম দোলেশ্বরের সাথে। সেমিফাইনালে প্রাইম ব্যাংকের হয়ে একা লড়াই করেছেন জাতীয় দলের এক সময়ের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ অলক কাপালি (৩১ বলে ৫৫)। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

গ্রুপপর্বের খেলা ও সেমিফাইনাল শেষে দেখা যাচ্ছে, তুলনামূলক সিনিয়র ও পরিণত পারফরমাররাই ম্যাচ ভাগ্য গড়ে দিচ্ছেন বেশি। সে কারণেই আজকের ফাইনালেও প্রাইম দোলেশ্বর ও শেখ জামাল-দুই দলই অভিজ্ঞতার দিকেই তাকিয়ে।

লড়াইটা শুধু প্রাইম দোলেশ্বর আর শেখ জামালেরই নয়, এ যেন দুই অলরাউন্ডার ফরহাদ রেজা আর জিয়াউর রহমানেরও। দেখা যাক, জাতীয় দলের দুই সাবেক অলরাউন্ডারের লড়াইয়ে শেষ হাসি কে হাসেন।

এআরবি/এমএমআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।