স্বপ্নের চেয়েও অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ জয় ইংল্যান্ডের

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:০৪ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

এমন একটি ম্যাচই দেখার জন্যই হয়তো চাতক পাখির মত অপেক্ষায় থাকেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। এমন ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় কালেভদ্রে। যদিও এমন ম্যাচগুলোতে স্রেফ অসহায় হয়ে যেতে হয় বোলারদের। ব্যাটসম্যানদের রান বন্যায় ভেসে যাওয়া ম্যাচটিতে কোনো প্রতিপক্ষ ৪০০ প্লাস রান করে ফেললেও শেষ পর্যন্ত কে জিতবে সেটা আগাম বলতে পারে না কেউ।

গ্রানাডার সেন্ট জর্জে ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কাল রাতে তেমন একটি ম্যাচেরই অবতারণা করলো ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যার পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিল রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা। ব্যাটসম্যানদের জয়জয়কারের এই ম্যাচে শেষ মুহূর্তে নায়ক হয়ে উঠলেন একজন স্পিনার। যিনি কি না মাত্র এক ওভারে ভিলেন থেকে হয়ে উঠলেন ম্যাচ জয়ের নায়ক। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের জয় মাত্র ২৯ রানের।

ছক্কার রেকর্ড গড়ে স্কোরবোর্ডে ইংল্যান্ডের রান ওঠে ৪১৮। ওয়ানডে ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ডও ইংল্যান্ডের, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪৮১ রান। এবার সেন্ট জর্জে ইংল্যান্ডের ৪১৮ রান দেখে অনেকেই তাদের নিশ্চিত জয় ধরে নিয়েছিল।

কিন্তু প্রতিপক্ষ দলে যখন ক্রিস গেইলের মত ব্যাটসম্যান রয়েছেন, তখন সেই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজও যে ছেড়ে কথা বলবে না, তা নিশ্চিত ধরেই নেয়া যায়। বলেওনি। ক্রিস হেনরি গেইলের দানবীয় রূপ দেখে নিলো ইংলিশ বোলাররা। ৫৫ বলে সেঞ্চুরি করার পর ৯৭ বলে ১৬২ রান করেন তিনি।

England

ওয়েস্ট ইন্ডিজও সেই ৪১৮ রান তাড়া করে পুরোপুরি জয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিলো। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ক্যারিবীয়দের জন্য ভিলেনে পরিণত হলেন ইংলিশ স্পিনার আদিল রশিদ। যিনি আগের ৯ ওভারে ৮৩ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। কিন্তু ৪৮তম ওভারে এসে নিয়ে নিলেন ক্যারিবীয়দের শেষ ৪ উইকেট। ওভারের শেষ ৫ বলেই নিয়েছেন ৪ উইকেট।

আদিল রশিদের এই বিধ্বংসী ওভারেই শেষ হয়ে গেলো ক্যারিবীয়দের স্বপ্ন। তিন ওভারে যাদের প্রয়োজন ছিল ৩২ রান। হাতে তখনও ৪ উইকেট। এমন পরিস্থিতিতে বল করতে এসে প্রথম বলে দিলেন ২ রান। ওই বলেই ক্যাচ ড্রপ হয়েছিল অ্যাশলে নার্সের। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বলে ফিরিয়ে দিলেন নার্স এবং ব্র্যাথওয়েটকে। চতুর্থ বলটা দেবেন্দ্র বিশু কোনমতে ঠেকালেন। পঞ্চম এবং ষষ্ঠ বলে নিলেন বিশু এবং থমাসের বাকি দুই উইকেট।

নিশ্চিত জয়ের অবস্থান থেকে হেরে গেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিস গেইল যে ভিত রচনা করেছিলেন, তার ওপর দাঁড়িয়ে কার্লোস ব্র্যাথওয়েট এবং অ্যাসলে নার্স জয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিলেন। কিন্তু এক ওভারেই আদিল রশিদ সব চুরমার করে দিলেন। ইংল্যান্ডকে এনে দিলেন স্বপ্নের চেয়েও অবিশ্বাস্য এক জয়।

টস জিতে ইংল্যান্ডকেই ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত যে এমন কাল হয়ে দাঁড়াবে তা কে ভাবতে পেরেছিল? দুই ওপেনার জনি বেয়ারেস্ট এবং অ্যালেক্স হেলস ১৩.৫ ওভারেই গড়ে তোলেন ১০০ রানের জুটি। ৪৩ বলে ৫৬ রান করে আউট হন বেয়ারেস্ট। ৪টি করে চার এবং ছক্কার মার মারেন তিনি।

১২০ রানের মাথায় আউট হন জো রুট। ১০ বলে মাত্র ৫ রান করে ফিরে যান তিনি। এরপর দলীয় ১৫৬ রানের মাথায় ফিরে যান অ্যালেক্স হেলস। ততক্ষণে তার নামের পাশে লেখা হয়েছে ৭৩ বলে ৮২ রান। ৮টি বাউন্ডারির সঙ্গে মেরেছেন ২টি ছক্কার মার।
এরপরই মূলতঃ ক্যারিবীয় বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে ওঠেন ইয়ন মরগ্যান আর জস বাটলার। দু’জনের ব্যাটে গড়ে ওঠে ২০৪ রানের বিশাল জুটি। সেঞ্চুরিও করেন দু’জন। ৮৮ বলে ১০৩ রান করে যখন মরগ্যান আউট হন, তখন ইংল্যান্ডের রান ৩৬৯। ৮টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৬টি ছক্কার মার মারেন ইংলিশ অধিনায়ক।

England

সবচেয়ে বিধ্বংসী ছিলেন জস বাটলার। মাত্র ৭৭ বলে ১৫০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ১৩টি বাউন্ডারির সঙ্গে ১২টি ছক্কা মারেন। ক্যারিবীয় বোলারদের ওপর যেন ছক্কা ঝড় বইয়ে দিলেন তিনি। বাটলারের ছক্কা ঝড়ে এক ইনিংসে দলীয় সর্বোচ্চ ২৪টি ছক্কার মার মারে ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট হারিয়ে ইংলিশদের রান গিয়ে দাঁড়ায় ৪১৮।

জবাব দিতে নেমে ক্যারিবীয়রাও কম যায়নি। ক্রিস গেইল একাই ছিলেন ইংলিশ বোলারদের আতঙ্ক। ছক্কা ঝড় বইয়ে দিয়েছেন গেইলও। একাই ১৪টি ছক্কা মারেন তিনি। বাউন্ডারি ছিল ১১টি। ৯৭ বলে খেলেন ১৬২ রানের এক টর্নেডো ইনিংস। গেইল একাই লড়াই শুরু করলেন। তার পাশে অন্যরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। জন ক্যাম্পবেল আউট হলেন ১৫ রান করে। সাই হোপ করলেন ৫ রান।

ড্যারেন ব্র্যাভো কিছুক্ষণ সঙ্গ দেন গেইলকে। তাকে নিয়েই অবশ্য বড় জুটিটি গড়ে তোলেন গেইল। ১৭৬ রানের জুটি গড়েন তারা দু’জন। এর মধ্যে ৫৯ বলে ৬১ রান করে আউট হয়ে যান ড্যারেন ব্র্যাভো। শিমরন হেটমায়ার হতাশ করলেন এই ম্যাচে। মাঠে নেমেই মেরেছিলেন একটি ছক্কা। এর পরের বলেই আউট হয়ে যান মার্ক উডের বলে।

অধিনায়ক জেসন হোল্ডার করেন ৩৫ বলে ২৯ রান। কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ৩৬ বলে করেন ৫০ রান এবং অ্যাসলে নার্স করেন ৪৩ রান। শেষ মুহূর্তে এক ওভারেই তো আদিল রশিদের ঘূর্ণিতে কাবু হয়ে ৫ বলে ৪ উইকেট হারালো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অবিশ্বাস্য ম্যাচটিতে ক্যারিবীয়দের থামতে হলো শেষ পর্যন্ত ৩৮৯ রানে। অথচ, হাতে তখনও বাকি ২ ওভার। পরাজয় ২৯ রানে। ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতলেন জস বাটলারই।

আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।