তবে কি পেরেরার ১৫৩ রানের ইনিংসটিই ইতিহাসের সেরা?

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৫২ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

গত শনিবার ডারবানের কিংসমিডে নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস খেলে শ্রীলঙ্কাকে ১ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়েছেন বাঁহাতি মারকুটে ব্যাটসম্যান কুশাল পেরেরা। দশম উইকেটে বিশ্বরেকর্ড অবিচ্ছিন্ন ৭৮ রানের জুটি গড়ে দলকে ৩০৪ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ার পথে ২০০ বলে ১২ চার ও ৫ ছক্কার মারে ১৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন পেরেরা।

তার সেই ইনিংসের পর থেকে খালি চোখে কিংবা নিজেদের দেখার ওপর ভিত্তি করে অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার ও বিশ্লেষকরা পেরেরার ইনিংসটিকে বলে দিয়েছেন ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা। কিন্তু এভাবে বললেই তো হলো না! যথাযথ যুক্তিসহ প্রমাণ দিলেই না তা পাবে গ্রহণযোগ্যতা।

সেই দায়িত্ব নিয়েছেন জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিন ক্রিকইনফোর ক্রিকেট গবেষক অনন্ত নারায়ন। তিনি রীতিমতো তথ্য-উপাত্ত গবেষণা করে প্রমাণ করে দিয়েছেন পেরেরার ইনিংসটিই টেস্ট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ইনিংস, যাকে গোল্ডেন উইলো হিসেবে অভিহিত করছে ক্রিকইনফো।

এক্ষেত্রে মানদণ্ড হিসেবে ১১টি নিয়ামক ধরে নিজের গবেষণা করেছেন অনন্ত। সেগুলো হলো:

১. ইনিংসে করা রান
২. প্রতিপক্ষ দলের বোলারদের কোয়ালিটি
৩. পুরো ম্যাচ এবং ইনিংসজুড়ে পিচের কোয়ালিটি
৪. দলের অন্যদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সহায়তা এবং ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোর
৫. ম্যাচের দুই ইনিংস মিলিয়ে দলের বাকি ২১ ইনিংসের গড় অনুপাত
৬. নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে করা রান (শেষের ৫ জন এবং শেষের ২ জন)
৭. ব্যাটিং শুরু করার সময় দলের অবস্থা
৮. দলের পারফরম্যান্সে ব্যাটসম্যানের অবদান
৯. দলের তুলনামূলক শক্তিমত্তা
১০. ম্যাচের ভেন্যু এবং
১১. ম্যাচের ফলাফল

perera

এই ১১টি নিয়ামক ধরে হিসেব করার পথে পেরেরার ইনিংসছাড়াও তালিকায় অবধারিতভাবেই চলে আসে ১৯৯১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গ্রাহাম গুচের অপরাজিত ১৫৪, ২০০৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সনাত জয়াসুরিয়ার ২৫৩, ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্রায়ান লারার অপরাজিত ১৫৩, ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভিভিএস লক্ষণের ২৮১, ১৯৩৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডন ব্র্যাডম্যানের ২৭০ রানের ইনিংসটি।

সন্দেহ নেই এসব ইনিংসের মাহাত্ম্য অনেক বেশি। টেস্ট তথা ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ইনিংসের কথা বলা হলে ঘুরে-ফিরে চলে আসে এসব ইনিংসের কথাই। তবে এসব ইনিংসকে ছাড়িয়ে গিয়েছে পেরেরা ৫ দিন আগের ইনিংসটি।

কারণ, উল্লিখিত ১১টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি ৮৯৭.২ রেটিং পয়েন্ট বসেছে পেরেরার অপরাজিত ১৫৩ রানের ইনিংসের পাশেই। এছাড়া ক্রমান্বয়ে গ্রাহাম গুচের ১৫৪ রানের ইনিংসটি ৮৬৬.৬, জয়াসুরিয়ার ২৫৩ রানের ইনিংসে ৮১২.৮, ব্র্যাডম্যানের ২৭০ রানের ইনিংসে ৮০৯.৯ আজহার মাহমুদের ১৩২ রানের ইনিংসে ৮০৯.১ এবং ব্রায়ান লারার ১৫৩ রানের ইনিংসের পাশে রয়েছে ৮০৩.৯ রেটিং পয়েন্ট।

মানদণ্ডগুলোর ভিত্তিতে যে কারণে পেরেরার ইনিংসটি উঠেছে সবার ওপরে:

১. ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং আক্রমণটি ছিলো উপরে উল্লিখিত অন্যান্য ইনিংসগুলোর প্রতিপক্ষ বোলিং আক্রমণের তুলনায় বেশি শক্তিশালি।

২. ডারবানের পিচটিও ছিলো অনেকটা বোলিং সহায়ক। কারণ ম্যাচের ৪টি ইনিংসের রান ছিলো যথাক্রমে ২৩৫, ১৯১, ২৫৯ এবং ৩০৪/৯। ব্রায়ান লারার ১৫৩ রানের ইনিংসের ম্যাচে দলীয় সংগ্রহগুলো ছিলো যথাক্রমে ৪৯০, ৩২৯, ১৪৬ এবং ৩১১/৯।

৩. দলীয় ৩০৪ রানের মধ্যে শেষের পাঁচ উইকেটে ১৯৪ এবং শেষ দুই উইকেটে ৮৯ রান যোগ করেছেন পেরেরা। যা কি-না উল্লিখিত অন্যান্য ইনিংসগুলোর তুলনায় এগিয়ে।

৪. সবশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠ থেকে দলকে জয় এনে দিয়েছেন পেরেরা। যেখানে অন্যান্য ইনিংসগুলোর বেশিরভাগই ছিলো তাদের নিজ নিজ ঘরের মাঠে।

এতদিন ধরে গোল্ডেন উইলো তালিকায় সবার ওপরে ছিলো গ্রাহাম গুচের ইনিংসটি। কুশল পেরেরার সঙ্গে তুলনায় প্রায় কাছাকাছিই রয়েছে গুচের ইনিংসটিও। কিন্তু যেখানে ইংল্যান্ডের জয়টি ছিলো নিজেদের ঘরের মাঠে এবং গুচের ইনিংসটি ছিলো ম্যাচের তৃতীয় ইনিংসে, সেখানে পেরেরা দলকে জিতিয়েছেন শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে, চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করার চাপ জয় করে।

মূলত বিদেশের মাটিতে পুরোপুরি ভিন্ন কন্ডিশন এবং বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে অমন অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলার কারণেই গ্রাহাম গুচ কিংবা ব্রায়ান লারার চেয়ে ওপরে জায়গা পেয়েছে পেরেরার ইনিংসটি। যাকে এখন টেস্ট ইতিহাসের সেরা তথা গোল্ডেন উইলো হিসেবে অভিহিত করছে ক্রিকইনফো।

এসএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।