তবু যত আলোচনা ওই গেইলকে নিয়েই

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৭:০৭ পিএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

স্বরূপে আবির্ভূত হওয়া বহুদূরে, তিনি রানেই নেই। রীতিমত রান খরা ব্যাটে। তারপরও ঢাকার বিপক্ষে অঘোষিত সেমির যুদ্ধে যত কথা গেইলকে নিয়ে। তবু গেইলই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

বিপিএলে ক্রিস গেইলই একমাত্র ব্যাটসম্যান, যার আছে সর্বাধিক পাঁচটি সেঞ্চুরি। যার প্রথম দুটি (১০১ এবং ১১৬) ২০১২ সালে বিপিএলের প্রথম আসরে বরিশাল বার্নার্সের হয়ে। তৃতীয় শতকটি ২০১৩ সালে দ্বিতীয় বিপিএলে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের পক্ষে (৫১ বলে ১১৪)। আর সর্বশেষ গতবারও একজোড়া শতরান করেছিলেন গেইল।

শুধু দুটি সেঞ্চুরি করাই নয়। বলা যায় রংপুর রাইডার্সকে এলিমিনেটরের বৈতরনী পার করে দেয়া এবং ফাইনালে ট্রফি জেতানোর লড়াইয়ে শতরান করে দলের সাফল্যের রূপকার ছিলেন এ ৩৯ বছর বছর বয়সী দীর্ঘদেহী ব্যাটসম্যান।

এলিমিনেটর ওয়ানে খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে রংপুরের জয়ের নায়ক গেইল আগের বার শেরে বাংলায় ৫১ বলে ১৪ ছক্কাসহ ২৪৭.০৬ স্ট্রাইকরেটে ১২৬ রানের ঝড়ো-বিধ্বংসী ইনিংস খেলে হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা।

আর ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটসের শিরোপা স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল গেইলের ব্যাটিং তান্ডবে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বাধিক ১৮ ছক্কা হাঁকিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি ৬৯ বলে ১৪৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন তিনি। সাকিব, নারিন ও আফ্রিদীর মত ঝানু বোলাররাও সেবার গেইলের উত্তাল উইলোবাজি আর ছক্কা ঝড়ের সামনে হালে পানি পাননি।

কিন্তু এবার সেই গেইল যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। কিছুতেই রান করতে পারছেন না। শেষ কয়েকটি ম্যাচে চেষ্টা করেছেন রয়ে সয়ে খেলে ইনিংসকে সাজানোর। আগের ম্যাচে কুমিল্লার বিপক্ষে অনেকটা সময় উইকেটে থেকেও পারেননি কিছু করতে। ৪৪ বলে ৪৬ রান করে লং অফে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন অফস্পিনার মেহেদি হাসানের বলে।

এবার এখন পর্যন্ত গেইলের ইনিংসগুলো এরকম : ১+৮+২৩+৭+০+৫৫+২+১+১০+৩৫+ ৪৬। বোঝা যাচ্ছে, গেইলের ব্যাট কথা বলছে না। প্রাণপন চেষ্টার পরও রান করতে পারছেন না। আগের মত ঝড়ো উইলোবাজি বা তেড়েফুঁড়ে যাকে তাকে যেখান দিয়ে খুশি তুলে মারার চেষ্টা বাদ দিয়ে অনেক সংযত গেইল চেষ্টা করছেন স্লো উইকেটে সিঙ্গেলস-ডাবলসে খেলে ইনিংস সাজাতে। যাতে সেট হয়ে মারতে পারেন। কোয়ালিফায়ার ওয়ানে কুুমিল্লার বিপক্ষে সে স্ট্র্যাটেজিতেই আগাচ্ছিলেন। কিন্তু একটা পর্যায়ে যেয়ে ঠিক ধৈর্য্যচ্যুতি এবং আউট।

তবে গেইল রান করতে না পারলেও তার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা আশাবাদী। আগামীকাল ঢাকা ডায়নামাইটসকে পেয়ে গেইল ঠিক জ্বলে উঠবেন, বড় ইনিংস খেলে দলের সাফল্যে অবদান রাখবেন, এমন আশায় উন্মুখ হয়ে আছেন মাশরাফি।

তাই তো মুখে এমন সংলাপ, ‘আসলে গেইলকে নিয়ে শেষ কথা বলার উপায় নেই। যে কোনো দিন, যখন তখন যার বিপক্ষে জ্বলে উঠে প্রতিপক্ষ বোলিংকে তছনছ করে দেয়ার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে তার।’

রংপুর সেই আশাতেই আছে। কিন্তু অবাক করা সত্য হলো যে, গেইল যে রান করতে পারছেন না, তা নিয়ে চিন্তায় প্রতিপক্ষ শিবির ঢাকা ডায়নামাইটস! কোয়ালিফায়ার টু'তে রংপুরের প্রতিপক্ষ যে এই ঢাকাই।

ঢাকা ডায়নামাইটস কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের কথা শুনে মনে হলো, গেইল যে রানে নেই সেটা নিয়ে তারা বরং চিন্তিত। এ সম্পর্কে ঢাকা কোচ বলেন, ‘ক্রিস গেইল খেলতে পারছে না, এটি আসলে ভয়েরই কারণ। এর আগের ফাইনালে গেইলের একশই আমাদের পেছনে ফেলে দিয়েছিল আসলে। ক্রিস গেইল হলো ক্রিস গেইল। এটি আসলে তুলনা করার কিছু নেই। সে কখন মারবে কি মারবে না সেটি তাঁর ব্যাপার। গেইলকে নিয়ে আলাদা করে সেভাবে চিন্তা করা যায় না। তবু আমরা পরিকল্পনা করি আর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাটাই বড় ব্যাপার।’

শুধু গেইলকে নিয়ে ভাবলেই কি হবে? রংপুর দলে আরও কয়েকজন ম্যাচ উইনার আছে মনে করিয়ে সুজন বলেন, ‘ওদের ম্যাচ উইনার অনেক আছে। রাইলি রুশো আছে, টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সুতরাং আমি বলবো যে এই কন্ডিশনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার মতো ক্রিকেটার সে এবং গেম চেঞ্জার। মাশরাফির কথা আলাদা করে বলতেই হয়। আর ওদের যারাই আছে তারাই ভালো খেলতে সক্ষম আসলে।’

এআরবি/এমএমআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।