ঢাকা-রংপুর ‘ফাইনালের আগে ফাইনাল’

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা চট্টগ্রাম থেকে
প্রকাশিত: ০৯:১৩ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

সুপার ফোর খেলবে কোন চার দল? সেটাই এখনো ঠিক হয়নি। সেখানে ৮ ফেব্রুয়ারি ফাইনাল নিয়ে কথা বলা একটু বাড়াবাড়িই হয়ে যায়! তা হয়ত যায়। কারণ এখনো অনেকটা পথ বাকি। অনেক ওঠা-নামা আর চড়াই উৎড়াই পার হয়ে শেষ পর্যন্ত কোন দুই ফাইনাল খেলবে? তা আগাম বলা শক্ত। তবে অনেকেই চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্স ও রানার্সআপ ঢাকা ডায়নামাইটসের সোমবারের ফিরতি লড়াইকেই ‘ফাইনালের আগের ফাইনাল’ বলে অভিহিত করেছেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বিপিএলের গত আসরের ফাইনালিস্টও এই দুই দল। এবার বিপিএলে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে নামি-দামি ও বিশ্ব তারকার মেলা বসলেও শক্তির বিচারে এবং তারকা ক্রিকেটার থাকার মানদন্ডে মাশরাফির রংপুর ও সাকিবের ঢাকা অন্য পাঁচ দলের চেয়ে এগিয়ে।

রংপুরের শক্তি ও সম্পদের মূল জায়গাটি চার বিদেশি ক্রিস গেইল, অ্যালেক্স হেলস, রিলে রুশো আর এবি ডি ভিলিয়ার্সের হাতে। মাশরাফির গতিশীল ও বুদ্ধীদিপ্ত নেতৃত্ব তো আছেই। অন্যদিকে ঢাকায়ও সুনিল নারিন, আন্দ্রে রাসেল আর কাইরন পোলার্ডের মতো টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট আছেন।

যদিও পোলার্ড ইনজুরির কারণে আগের তিন ম্যাচ খেলতে পারেননি। তবে কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন জানিয়েছেন পোলার্ড এখন অনেকটাই ফিট। সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ওই দুই জায়ান্ট মানে মাশরাফি বিন মর্তুজার রংপুর ও সাকিব আল হাসানের ঢাকা মুখোমখি হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না কাগজে কলমের দুই সেরা দলের এবারের আসরে এটা দ্বিতীয় সাক্ষাত। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি শুক্রবার শেরে বাংলায় প্রথমবার দেখা হয় এই দু’দলের। স্নায়ুক্ষয়ী-রুদ্ধশ্বাস ও শেষ বলে নির্ধারিত ওই ম্যাচে সাকিবের দল জয়ী হয় ২ রানে।

দু’দলের শীর্ষ ও নামি তারকাদের ম্লান করে অখ্যাত ও আনকোরা অফস্পিনার অ্যালিস আল ইসলাম হয়েছিলেন ঢাকার জয়ের নায়ক। তার হ্যাটট্রিক ও শেষ ওভারের অবিস্মরনীয় মাপা বোলিংয়ে দারুণ জয় পায় ঢাকা। ভাবা হয়, এখনও পর্যন্ত সেটাই ছিল ব্যাট ও বলের সেরা ও জমজমাট লড়াই।

সে লড়াইয়ে জয়টি ছিল মনোবল বর্ধক দাওয়াই। আর কাল দু’পক্ষ মুখোমুখি হচ্ছে সুপার ফোরে অবস্থান সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে। সে কারণেই আগামীকালকের ম্যাচকে ‘হাই ভোল্টেজ’ লড়াই বলেই মনে করা হচ্ছে।

এ মুহুর্তে চিটাগং ভাইকিংসের (৯ খেলায় ৬ জয় আর ৩ পরাজয়ে ১২ পয়েন্ট) ঠিক পিছনেই অবস্থান রংপুর ও ঢাকার। সাকিবের ঢাকা আর মাশরাফির রংপুর দু’দলই সমান পাঁচ ম্যাচ জিতেছে। তাই তাদের পয়েন্টও সমান ১০ করে; কিন্তু তাতে একটি ছোট্ট ‘কিন্তু’ আছে।

ঢাকা পাঁচ ম্যাচ জিতেছে আট খেলায়। আর রংপুরের পাঁচ জয় এক ম্যাচ বেশি খেলে। তাই সোমবারের ম্যাচে ঢাকা জেতার অর্থ রংপুরকে পেছনে ফেলে চিটাগাং কিংসের সমান ১২ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে চলে যাওয়া। অন্যদিকে জয়ী হলে রংপুরেরও পয়েন্ট দাঁড়াবে ১২। তবে সেটা ১০ খেলায়। মানে মুশফিকুর রহিমের চিটাগং ভাইকিংসের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে।

মোটকথা, যে দলই জিতুক, সেটা হবে নকআউট পর্বের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া। কাজেই খুব স্বাভাবিকভাবেই দু’দলই মরিয়া সেরা চার নিশ্চিত করতে। তাইতো আজ ভর দুপুরে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে নীবিড় অনুশীলনে কাটলো মাশরাফির রংপুর ও সাকিবের ঢাকার।

প্রথম সাক্ষাতে ঢাকা জিতে সাময়িকভাবে পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে গেলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে ঢাকার রমরমা অবস্থা খানিক ফিকে। ১৬ জানুয়ারি সিলেটে রাজশাহী কিংসের কাছে ২০ রানে হার দিয়ে ছন্দপতন ঘটে ঢাকার। সেই ম্যাচের পর ১৮ জানুয়ারি স্বাগতিক সিলেটের বিরুদ্ধে ৬ উইকেটে জিতলেও শেষ দুই ম্যাচ টানা হারের বৃত্তে আটকা সাকিবের দল।

২১ জানুয়ারি শেরে বাংলায় চিটাগাং ভাইকিংসের কাছে ৩ উইকেটে হারের পর নিজেদের অষ্টম ও শেষ ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সাথেও ৭ রানে পরাজিত হয়েছে খালেদ মাহমুদ সুজনের শিষ্যরা। অন্যদিকে যতই সময় গড়াচ্ছে রংপুর রাইডার্স আগেরবারের মতো ততই মেতে উঠছে।

চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম দিন স্বাগতিক ও শীর্ষে থাকা চিটাগং ভাইকিংসকে ভুপাতিত করেছে মাশরাফির রংপুর। দুই শীর্ষ তারকা ক্রিস গেইল (২) আর এবি ডি ভিলিয়ার্স (১) কিছু করতে না পারলেও অপর দুই বিদেশি অ্যালেক্স হেলস এবং রিলে রুশোর দুর্দান্ত জোড়া শতকে ২৩৯ রানের রেকর্ড স্কোর গড়ে ৭২ রানের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে টম মুডির শিষ্যরা।

রংপুর সাফল্যের স্বর্গে (শতভাগ ব্যাটিং সহায়ক পিচে) ছন্দ ফিরে পেয়ে দূর্বার হবার পথে, আর অন্য দিকে ঢাকা হারানো ছন্দ ফিরে পেতে মরিয়া। দেখা যাক, এ মরণপণ লড়াইয়ে রংপুর না ঢাকা, কে হাসে শেষ হাসি?

এআরবি/আইএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।