সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতল চিটাগং

ক্রীড়া প্রতিবেদক ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:২৮ পিএম, ২১ জানুয়ারি ২০১৯

লক্ষ্যটা খুব কঠিন কিছু ছিল না চিটাগং ভাইকিংসের সামনে। শক্তিশালী ঢাকা ডায়নামাইটসকে সরিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠতে করতে হতো মাত্র ১৪০ রান। সে লক্ষ্যে শুরুটাও ভালো করেছিল চিটাগং। কিন্তু মাঝপথে খেই হারিয়ে খোয়াতে বসেছিল ম্যাচটি।

তবে শেষ পর্যন্ত রবি ফ্রাইলিংকের ১০ বলের ঝড়ে নিরাপদেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় চিটাগংয়ের তরী। হট ফেবারিট ঢাকাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে ঢাকার দ্বিতীয় পর্বের শুভ সূচনা করে চিটাগং। তবে ঢাকার সমান ১০ পয়েন্ট নিয়েও নেটরান রেটে পিছিয়ে থাকার কারণে পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরেই অবস্থান করছে চিটাগং।

রান তাড়া করতে নেমে ঢাকার ইনিংসেরই পুনরাবৃত্তি ঘটে চিটাগংয়ের ইনিংসে। ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় বলেই শুভাগত হোমের অসাধারণ এক ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন মোহাম্মদ শাহজাদ। প্রথম ওভারেই উইকেট হারালেও ডায়নামাইটস বোলারদের ওপর চড়াও হতে দ্বিধা করেননি ক্যামেরন ডেলপোর্ট।

শুভাগত হোম ও আন্দ্রে রাসেলের ওভারে চার-ছয়ের ফুলঝুরি ছুটিয়ে ৩ ওভারেই দলীয় সংগ্রহ ৩২ রানে পৌঁছে দেন ডেলপোর্ট। মাত্র ১১ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩০ রান তখন তার নামের পাশে। উপায়-অন্ত না দেখে ডেলপোর্টকে থামাতে চতুর্থ ওভারেই আক্রমণে আসেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

প্রথম বলেই সরাসরি বোল্ড করে ডেলপোর্টের হাতে সাজঘরের ঠিকানা ধরিয়ে দেন বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। তবে এতে ঘাবড়ে যাননি চিটাগং অধিনায়ক মুশফিক। প্রথমে ইয়াসির আলি (১৫) ও পরে মোসাদ্দেক সৈকতকে নিয়ে জয়ের পথে এগুতে থাকেন তিনি। এ ম্যাচে রান করতে ব্যর্থ হন আগের ম্যাচে ঝড় তোলা দাশুন শানাকা। আউট হন মাত্র ২ রান করে।

পঞ্চম উইকেটে ৩২ রানের জুটি গড়েন মুশফিক ও মোসাদ্দেক। যখন মনে হচ্ছিল ধীরে-সুস্থেই জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে চিটাগং, তখনই খেলার ধারার বিপরীত আচমকাই ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে নিজের উইকেট খুইয়ে বসেন মুশফিক। আউট হওয়ার আগে ২৩ বলে খেলেন ২২ রানের ইনিংস।

তখনো জয়ের জন্য ৫ উইকেট হাতে রেখে ৪০ বলে ৪৫ রানের প্রয়োজন ছিলো চিটাগংয়ের। অফস্পিনার নাঈম হাসানকে নিয়ে ধীরে-সুস্থে ১৫ বলে ১৯ রান করেন মোসাদ্দেক। শেষের ৪ ওভারে ২৬ রান বাকি থাকে চিটাগংয়ের। ম্যাচের ভাগ্য বদল করতে নিজের শেষ ওভারে বোলিং করতে আসেন আগের তিন ওভারে ৩ উইকেট নেয়া সাকিব আল হাসান।

যে কারণে বোলিংয়ে আসেন সাকিব, সে কাজটি ঠিক-ঠিক করেন তিনি। নাঈম হাসানকে প্রথম ৪ বল ডট খেলিয়ে পঞ্চম বলে সরাসরি বোল্ড করে দেন তিনি। চিটাগংয়ের সমীকরণ দাঁড়ায় ১৯ বলে ২৬ রান, উইকেটে আসেন রবি ফ্রাইলিংক। শেষ বলটি ডট করে ১৭তম ওভারে উইকেট মেইডেন নিয়ে নেন সাকিব। তার বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ৪-১-১৬-৪।

শেষের ৩ ওভারে ২৬ রানের চাহিদায় তরুণ মোহর শেখের করা ১৮তম ওভারে মাত্র ৫ রান নিতে সক্ষম হন ফ্রাইলিংক ও মোসাদ্দেক। জিততে তখন ১২ বলে ২১ রানের প্রয়োজন থাকে চিটাগংয়ের। ১৯তম ওভারে মোসাদ্দেককে আউট করে মাত্র ৫ রান দেন রুবেল।

শেষ ওভারে চিটাগংয়ের জয়ের জন্য বাকি থাকে ১৬ রান। ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেলের এক ওভার বাকি থাকলেও ২১ বছর বয়সী মোহর শেখ অন্তরকে বোলিং দেন ঢাকার অধিনায়ক সাকিব। কিন্তু গড়বড় পাকিয়ে ফেলেন মোহর। ওভারে দ্বিতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে চাহিদার চেয়েও ৫ রান বেশি তুলে নেন ফ্রাইলিংক। ১ বল ও ৩ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় চিটাগং, বৃথা যায় সাকিবের স্পেশাল বোলিং। বল হাতে ২ উইকেটের পর ব্যাট হাতে মাত্র ১০ বলে ২৫ রানের ক্যামিও খেলে চিটাগংয়ের জয়ের নায়ক ফ্রাইলিংক।

এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন ডায়নামাইটস অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কিন্তু অধিনায়কের সিদ্ধান্তের প্রতি একদমই সুবিচার করতে পারেননি ওপেনার রনি তালুকদার। ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই রবি ফ্রাইলিংকের বোলিংয়ে সরাসরি বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। নিজের পরের ওভারেই বিধ্বংসী হওয়ার আভাস দেয়া সুনিল নারিনকেও ফেরান ফ্রাইলিংক।

তৃতীয় উইকেটে সামলে নেয়ার পথেই ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও দক্ষিণ আফ্রিকান হেইনো কুন। তখনই আবু জায়েদ রাহীকে আক্রমণে এনে বাজিমাত করেন চিটাগং অধিনায়ক মুশফিক। নবম ওভারে হেইনো কুন ও দারউইশ রাসুলিকে আউট করে ঢাকাকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন আবু জায়েদ।

তবে চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক সাকিব ও উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় ঢাকা। দুজন মিলে গড়েন ৩৯ রানের জুটি। তখন পার্টটাইম বোলার ক্যামেরন ডেলপোর্টকে আক্রমণে এনে জুটি ভাঙেন মুশফিক। একই ওভারে ৩৪ রান করা সাকিব ও ২৭ রান করা সোহানকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন ডেলপোর্ট।

তখনো ঢাকার বড় সংগ্রহের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন আন্দ্রে রাসেল। কিন্তু পরের ওভারেই তাকে লং অন অঞ্চলে দাশুন শানাকার হাতে ক্যাচে পরিণত করেন ডানহাতি পেসার খালেদ আহমেদ। মাত্র ১ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

শেষ দিকে ঢাকাকে অন্তত বলার মতো সংগ্রহ এনে দেন অফস্পিনিং অলরাউন্ডার শুভাগত হোম। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে মাত্র ১৪ বলে ৩৮ রান করা শুভাগত আজকের ম্যাচে খেলেছেন ১৫ বলে ২৯ রানের ক্যামিও। তার এ ইনিংসে ভর করেই ১৩৯ রান করতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা।

চিটাগংয়ের পক্ষে বল হাতে ৩ উইকেট নিয়েছেন ডেলপোর্ট। আবু জায়েদ রাহী এবং রবি ফ্রাইলিংক নিয়েছেন ২টি করে উইকেট, ১টি উইকেট গিয়েছে খালেদ আহমেদের পকেটে।

এসএএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।