‘পুরনো চাল’রা ঠিকই ভাতে বাড়ছেন!

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৩৫ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

জাতীয় লিগ ও বিসিএলে ভাল খেলা আর সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করায় তুষার ইমরানকে নিয়েই কথা হয় বেশী। সাথে নাঈম ইসলাম আর আব্দুর রাজ্জাকের নামও উচ্চারিত হয়।

সে তুলনায় পর্দার অন্তরালে চলে গিয়েছে কিছু নাম- শাহরিয়ার নাফীস, জুনায়েদ সিদ্দিকী, অলক কাপালি, শামসুর রহমান শুভ আর মার্শাল আইয়ুব। বলার অপেক্ষা রাখে না, সবার গায়েই রয়েছে জাতীয় ক্রিকেটারের তকমা। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই নামগুলো ঢাকা পড়ে গিয়েছে অনেকটাই।

জাতীয় দল তো বহু দূরে, বিপিএলেও তারা অনেকটাই উপেক্ষিত। অনেক টাকা খরচ করে দল গড়া ফ্র্যাঞ্চাইজিরা সেভাবে জুনায়েদ, অলক, শামসুর শুভ, মার্শাল আইয়ুব আর শাহরিয়ার নাফীসদের প্রতি আগ্রহ দেখান না। তাদের দলে নিতেও রাজ্যের অনীহা।

এবার যেমন প্লেয়ার্স ড্রাফটে শাহরিয়ার নাফীস বিক্রিই হননি। পরে তাকে রাজশাহী কিংস আপোসে দলে টেনেছে। মোদ্দা কথা, বয়স হয়ে গিয়েছে, ব্যাটের ধার কমেছে- এই অজুহাতে ওপরের নামগুলোর প্রতি আগ্রহ কমেছে দলগুলোর। ভাবা হচ্ছে তাদের আর দেয়ার কিছুই নেই।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তারা কেউ একদম ফুরিয়ে যাননি। জুনায়েদ সিদ্দিকী প্রথম থেকেই রান করছেন। ঢাকা পর্বে রান সংগ্রহকারির তালিকায় খুব ওপরেই ছিলেন বাঁহাতি ওপেনার জুনায়েদ। খুলনা টাইটান্সের হয়ে প্রায় ম্যাচেই রান করেছেন জুনায়েদ। এখন পর্যন্ত হাফ সেঞ্চুরি করতে না পারলেও পাঁচ খেলায় ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলে ১৩১.১০ স্ট্রাইকরেটে ১২১ রান করেছেন জুনায়েদ।

এছাড়া মিডল অর্ডার কাম লেগস্পিনার অলক কাপালিও ব্যাট বলে ভাল পারফরম করে চলেছেন। আহামরি কিছু করতে না পারলেও কিছু না কিছু অবদান থাকছে অলকের। পাঁচ ম্যাচে তিন বার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে এক খেলায় ৩৩ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দিয়ে মোট ৫৬ রানের পাশাপাশি চার খেলায় ৮.৫ ওভার বল করে তিন উইকেট দখল করেছেন লেগস্পিনার অলক।

তার দল সিলেট সিক্সার্সের কোচ ওয়াকার ইউনুস অলকের ওপর আস্থা রাখছেন। অলকও ব্যাট ও বল হাতে আস্থার প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করছেন সাধ্যমত।

একই ভাবে শামসুর রহমান শুভ আর মার্শাল আইয়ুবও সুযোগ পেয়ে প্রথম ম্যাচেই রান করেছেন। কাল (মঙ্গলবার) রাতে স্বাগতিক সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে ৩৭ বলে ৩৪ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দিয়ে বিজয়ীর বেশে সাজ ঘরে ফিরেছেন শামসুর রহমান শুভ। স্ট্রাইকরেটকে মানদন্ড ধরলে হয়ত মনে হবে টি-টোয়েন্টির মানে বেশ স্লো। কিন্তু উইকেটের চরিত্র আর ম্যাচের অবস্থা বিচার করলে রীতিমত কার্যকর ও সময়োচিত ইনিংস।

একইভাবে মার্শাল আইয়ুব আর শাহরিয়ার নাফীসও আজ (বুধবার) প্রথমবারের সুযোগ পেয়ে ঠিক নিজেদের মেলে ধরেছেন। আকাশে উড়তে থাকা ঢাকা ডায়নামাইটস বধ মিশনে দলে চমক এনে কোচ ল্যান্স ক্লুজনার এই দুই বন্ধুকে প্রথম একাদশে রেখেছিলেন। প্রথম সুযোগ পেয়ে দুজনই রান করেছেন।

দিন শেষে দেখা যাচ্ছে ঢাকার বিপক্ষে ২০ রানের জয় পেয়েছে রাজশাহী কিংস। কিন্তু কেউ কি খুটিয়ে দেখেছেন, আসলে মার্শাল আইয়ুব আর শাহরিয়ার নাফীস জুটিই রাজশাহীকে লড়িয়ে পুঁজি গড়তে রেখেছে মুল ভুমিকা।

শুরু ভাল হয়নি মোটেই। তৃতীয় ওভারে (২.৩) অধিনায়ক মিরাজ আউট হলে মাত্র ২ রানে ভাঙ্গে ওপেনিং জুটি। এরকম কঠিন চাপে হাল ধরেন মার্শাল আইয়ুব আর শাহরিার নাফীস। দ্বিতীয় উইকেটে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে সে শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে দেন মার্শাল আইয়ুব আর শাহরিয়ার নাফীস।

৮.৫ ওভারে ৭৫ রানের দারুণ পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন দুজন। আর তার ওপর ভিত্তি করেই শেষ অবধী ১৩৬'এ গিয়ে ঠেকে রাজশাহী কিংস স্কোর। সেটাই শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য যথেষ্ঠ বলে প্রমাণিত হয়। মার্শাল খেলেন ৩১ বলে দুই ছক্কা আর তিন বাউন্ডারিতে ৪৫ রানের আকর্ষণীয় ও দৃঢ়চেতা ইনিংস। শাহরিয়ার নাফীস অমন গতি ও ছন্দে ব্যাট চালাতে না পারলেও বিপর্যয় এড়িয়ে ইনিংসকে নতুন ভাবে সাজাতে এবং দলকে সামনে এগিয়ে দেয়ার কাজটি করেছেন ২৭ বলে ২৫ রান করে।

এতক্ষণ বলা হলো ব্যাটসম্যানদের কথা। বোলারদের মধ্যেও আছেন তেমন পারফরমার- যাদের নাম কম উচ্চারিত হয় এখন। কিন্তু মাঠে ঠিক পারফরম করে যাচ্ছেন। তিনি আরাফাত সানি।

প্রথমে বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ তারপর নারী স্ক্যান্ডাল- দুয়ে মিলে মাঝে প্রায় হারিয়েই গিয়েছিলেন আরাফাত সানি। কিন্তু এবারের বিপিএলে ঠিক স্বরুপে এ বাঁহাতি স্পিনার।

রাজশাহী কিংসের হয়ে সব ম্যাচে ভাল বল করা সানি আজ শক্তিশালি ও প্রায় দুর্দমনীয় ঢাকার বিপক্ষে ৮ রানে তিন উইকেট দখল করে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। এখন পর্যন্ত এ বাঁহাতি স্পিনারের ঝুলিতে জমা পড়েছে ছয় ম্যাচে ৮ উইকেট।

ওপরের এ তথ্য উপাত্ত আর পরিসংখ্যান পরিষ্কার জানান দিচ্ছে, একটু বয়স হয়েছে ভেবে যাদের কম গুরুত্ব দেয়া হয় তারা এখনো পারেন। কথায় বলে না, পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। জুনায়েদ, অলক, মার্শাল আইয়ুব, শামসুর শুভ, শাহরিয়ার নাফীস আর আরাফাত সানিরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন আমরা হেলা ফেলার পাত্র না। এখনো পারি। দরকার শুধু যথাযথ সুযোগ।

এআরবি/এসএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।