মায়েদের জন্য মিরাজদের ‘অবিস্মরণীয়’ এক জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:১২ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

ইনিংসের তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বল। রাজশাহী কিংসের শ্রীলঙ্কান বাম হাতি মিডিয়াম পেসার ইসুরু উদানার বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে গেলেন আফগান ব্যাটসম্যান হজরতুল্লাহ জাজাই। সঙ্গে সঙ্গেই উইকেট পাওয়ার আনন্দ উদ্যাপন করতে গিয়ে দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি কাঁধের ওপর নিয়ে ইশারা করলেন পিঠের দিকে। বুঝিয়ে দিলেন, ‘এই উইকেটটা আমার মা হেমার জন্য।’

এবারের বিপিএলে মাঠের ভেতরের পারফরম্যান্সের সঙ্গে বাইরের নানা পারফরম্যান্স দিয়েও ভক্ত-সমর্থকদের মাতিয়ে রাখতে চায় রাজশাহী কিংস। তবে, সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজ ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে মাঠে নামার সময় তারা যে অভিনব কাণ্ড ঘটাল, তা সত্যিই অতুলনীয়, অবিস্মরণীয়।

কর্মব্যাস্ত জীবনে মা’দের সময় দেয়া হয় খুবই কম। অথচ, প্রতিটি মানুষেরই জীবনটা ঘিরে থাকে মায়ের আদর-ভালোবাসা আর স্নেহে। অথচ, ক’জনের ভাগ্য হয়, সেই স্নেহের পরশ প্রতিদিন গায়ে মাখার! ক্রিকেটারদের জন্য বিষয়টা যেন আরও কঠিন। বিদেশ-বিভূঁইয়ে খেলতে যেতে হয়। মায়েদের কাছ থেকে থাকতে হয় অনেক দুরে।

এ কারণে, রাজশাহী কিংস অভিনব এক কৌশল অবলম্বন করলো। ঢাকা ডায়নামাটইটসের বিরুদ্ধে মাঠে নামার সময় দলটির ক্রিকেটাররা পরিধান করলো মায়েদের নামাঙ্কিত জার্সি। রাজশাহীর অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের মায়ের নাম ‘মিনারা’। ম্যাচ সেরা ক্রিকেটার আরাফাত সানির মায়ের নাম, ‘নার্গিস’।

মায়েদের স্নেহ গায়ে জড়িয়ে দারুণ উজ্জীবিত রাজশাহী কিংস। ঢাকা পর্বে টানা চার ম্যাচ জেতা ঢাকা ডায়নামাইটসকে যখন মনে হচ্ছিল দুর্দান্ত অপরাজেয় একটি দল, তারাই কি না মায়েদের স্নেহের আলিঙ্গনে বদলে যাওয়া রাজশাহী কিংসের কাছে পেলো প্রথম পরাজয়ের স্বাদ! ঢাকাকে প্রথম পরাজয় উপহার দিয়ে অবিস্মরণীয় এক জয় পেলো রাজশাহী কিংস।

Rajsahi

রাজশাহী প্রথম ব্যাট করতে নেমে যখন ১৩৬ রান করলো, তখন মনে হচ্ছিল, এই ম্যাচে অনায়াসেই হারতে যাচ্ছে তারা। ঢাকায় এই দুই দলের মুখোমুখিতে হজরতুল্লাহ জাজাইয়ের টর্নেডো ব্যাটিংয়ের কাছেই হারতে হয়েছিল রাজশাহীকে। কিন্তু এই ম্যাচে মায়ের ছোঁয়ায় উজ্জীবিত ইসুরু উদানার বলে বোল্ড হয়ে গেলেন জাজাই মাত্র ৬ রানে। ১৩৭ রানের লক্ষ্যে তখনই কঠিন হয়ে যায় ঢাকার সামনে।

তার আগেই আরেক বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান সুনিল নারিনকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ‘মিনারা’ নামক জার্সির মেহেদী হাসান মিরাজ। জাজাইও ফিরে গেলেন। এরপর ঢাকার বাকি উইকেটগুলো একে একে তুলে নিলেন রাজশাহীর বোলাররা। সবচেয়ে বিধ্বংসী এবং কৃপণ ছিলেন ‘নার্গিস’ নাম লেখা জার্সির আরাফাত সানি। ৪ ওভারে ১টি মেডেন, মাত্র ৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট। ঢাকা তো এক ‘নার্গিসে’র কাছেই শেষ।

ম্যাচ শেষে সেরার পুরস্কার উঠলো গর্বিত মা ‘নার্গিসে’র ছেলে আরাফাত সানির হাতে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে আরাফাত সানি নিজেও ঢাকার বিপক্ষে পাওয়া এই জয়কে উৎসর্গ করলেন মায়েদের জন্য। অধিনায়ক মিরাজ এই ম্যাচে ব্যাট হাতে কিছু করতে না পারলেও বল হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। ৩ ওভারে ১৮ রান দেয় নিলেন ২ উইকেট। মোস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। তবে শেষ ২ ওভারেই রাজশাহীকে জয় উপহার দেন তিনি।

সিলেটে এসে কাকতালীয় একটি ব্যাপার ঘটালো রাজশাহী কিংস। সিলেট পর্বের প্রথম দুই দিনে দুটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে মেহেদী হাসান মিরাজের দল। এই দুই ম্যাচে এমন দুটি ঘটনা ঘটিয়েছে তারা, যা যে কাউকে অবাক করে দেবে। প্রথমদিন তারা হেরেছিল খুলনা টাইটান্সের কাছে। দ্বিতীয় দিন হারিয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটসকে।

আইএইচএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।