উত্তাল সূচনার পরেও মোস্তাফিজ-সাকিবের নিয়ন্ত্রিত ডেথ বোলিং
প্রথম ছয় ওভারে প্রায় ১৫ করে, দশ ওভার শেষে সেটি নামিয়ে আনা হয় সাড়ে বারোতে (১২ দশমিক শূন্য ৩)। আর শেষের দশ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা রান করতে পেরেছে কেবল ওভারপ্রতি সাড়ে সাত করে। যে কারণে ইনিংসের শুরুর দিকে প্রায় আড়াইশো রানের ইঙ্গিত দিলেও শেষপর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে দুইশ রানও করতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। অলআউট হয়ে গিয়েছে ১৯০ রানেই।
মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলতি বছরে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ উপলক্ষে নামে দর্শকদের ঢল। ম্যাচ শুরুর আগেই পূর্ণ হয়ে যায় স্টেডিয়ামের প্রতিটি গ্যালারি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শেষ হওয়ার আগেই একদম ফুলহাউজ হয় স্টেডিয়াম।
এমন গ্যালারিপূর্ণ দর্শকের সামনে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল যাচ্ছেতাই। টসে জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্তটা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসছিলো নিজেদের উপরেই। টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম পাওয়ার প্লে'তেই ৮৮ রান করে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিধ্বংসী ওপেনার এভিন লুইস মাত্র ১৮ বলেই করে ফেলেন হাফসেঞ্চুরি, শেষপর্যন্ত ৬টি চারের সাথে ৮টি বড় ছক্কার মারে মাত্র ৩৬ বলে ৮৯ রানের ইনিংস খেলে ফেরেন তিনি।
এভিন লুইস যখন উত্তাল ব্যাটিং করছেন তখনই ইনিংসের ১০ম ওভারে তুরুপের তাস হিসেবে ডানহাতি অফস্পিনার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ডেকে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। টাইগার অধিনায়কের এ বাজি কাজে লেগে যায় শতভাগ। নিজের প্রথম ওভারেই এভিন লুইসসহ পরপর দুই উইকেট তুলে নেন রিয়াদ। লুইসকে ফেরানোর পরের বলেই আরেক মারকুটে ব্যাটসম্যান শিমরন হেটমায়ারকে রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে দেন টাইগারদের 'আনসাং হিরো' রিয়াদ।
প্রথম পাওয়ার প্লে'তে ৮৮ রান পাওয়ার পরেও রিয়াদের এই এক ওভারেই রানের চাকা থামাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ১০ ওভার শেষে সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১২৩। রিয়াদের এমন এক ওভারের পর প্রয়োজন ছিলো অন্য বোলারদের কাছ থেকে যথাযথ সহায়তা। সে কাজটিও ঠিকঠাকভাবে করেন সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান।
ইনিংসের পঞ্চম ও নিজের প্রথম ওভারেই ক্যারিবীয় ওপেনার সাই হোপকে ফিরিয়ে প্রথম ব্রেকথ্রু আনা সাকিব পরে নেন আরও দুই উইকেট। সবমিলিয়ে চার ওভারের স্পেলে ৩৭ রান খরচায় নেন ৩ উইকেট। এ তিন উইকেটের মাধ্যমে সাঈদ আজমল ও উমর গুলকে পেছনে ফেলে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকায় তিন নম্বরে উঠে এসেছেন সাকিব।
তবে সাকিবের চেয়ে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন বাঁহাতি কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ। আগের ম্যাচে বেধড়ক পিটুনি খাওয়া মোস্তাফিজ এ ম্যাচে ফেরেন আপন মহিমায়। নিজের চার ওভারের স্পেলে খরচ করেন কেবল ৩৩ রান, সাজঘরে ফেরান ক্যারিবীয় অধিনায়ক কার্লোস ব্রাথওয়েট, মারমুখী হয়ে ওঠা নিকোলাস পুরান ও অলরাউন্ডার কেমো পলকে। ডেথে বোলিং করতে এসে ইনিংসের ১৭তম ওভারে তিনি মাত্র তিন রানে নেন দুইটি উইকেট।
তবে সাকিব-মোস্তাফিজকেও ছাড়িয়ে গিয়ে আজকের ম্যাচে স্বাগতিকদের বোলিং হিরো মূলত মাহমুদউল্লাহই। নিজের প্রথম ওভারেই দুই উইকেট নেয়া রিয়াদ, পরে নেন আরও একটি। শেষপর্যন্ত ৩.২ ওভার বোলিং করে মাত্র ১৮ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন রিয়াদ। যা তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার।
এ তিনজনের দুর্দান্ত ডেথ বোলিংয়েই ক্যারিবীয়দের বেঁধে রাখা গিয়েছে ১৯০ রানেই। এবার টেস্ট ও ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজটাও নিজেদের করে নেয়ার দায়িত্বটা নিতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরকেই।
এসএএস/এমএমআর/জেআইএম