মিরাজ : টেস্ট থেকে এবার ওয়ানডে স্পেশালিস্ট

ক্রীড়া প্রতিবেদক ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৫৬ এএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

ক্যারিয়ারের শুরুটা টেস্ট স্পেশালিস্ট হিসেবে। অনুর্ধ্ব-১৯ দলে যখন খেলেছিলেন, তখন ছিলেন অলরাউন্ডার। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়ে গেলেন স্পেশালিস্ট স্পিনার।

বয়স কম হলেও শুরু থেকেই ঝলক দেখাতে শুরু করেছেন বাংলাদেশের এই উদীয়মান স্পিনার। অভিষেকটা ছিল স্বপ্নের মত। এক টেস্টে ১২ উইকেট নিয়ে হারিয়েছেন ইংল্যান্ডকে। প্রথম সিরিজেই (২ টেস্টে) নিয়েছেন ১৯ উইকেট। সাদা জার্সি পরে দু’বার ম্যাচ সেরা হয়েছেন তিনি।

সেই টেস্ট স্পেশালিস্ট এখন ওয়ানডেতেও সমান কার্যকর। শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়ানডেতে প্রথমবারেরমত ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতলেন। ক্যারিয়ারের ২২তম ওয়ানডে ম্যাচে এসে সিনিয়রদের ছাড়িয়ে গেলেন এই তরুণ ক্রিকেটার। ১০ ওভার বোলিং করে একটি মেডেন, ২৯ রান দিয়ে নিলেন ৪ উইকেট। ম্যাচ সেরার পুরস্কার তার হাতেই ওঠার কথা।

আগের ২১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মিরাজের সেরা বোলিং ছিল সম্প্রতি শেষ হওয়া জিম্বাবুয়ে সিরিজে। ঢাকায় প্রথম ওয়ানডেতে ৪৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এবার নিজেকেও ছাড়িয়ে গেলেন তিনি।

শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচ সেরা হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে এসেও মেহেদী হাসান মিরাজ কেন যেন একটু লাজুক। এর আগে অনেকবারই তিনি মিডিয়ার সামনে এসেছিলেন। কিন্তু এবারের এই আসাটা যেন একটু স্পেশাল। টেস্ট স্পেশালিস্ট থেকে ওয়ানডে স্পেশালিস্ট বনে যাওয়া নিয়েই কথা বললেন মিরাজ।

টেস্টের ধাঁচটা ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বুঝে গেছেন। কিন্তু ওয়ানডে তো আর টেস্টের মত নয়। ফরম্যাটের মতই ধরণটাও ভিন্ন। এখানে তাই বোলিংটাও করতে হয় ভিন্ন কৌশলে। মিরাজ সে চেষ্টাটাই প্রথম থেকে করে গেছেন এবং শেষ পর্যন্ত সফলতার মুখও দেখতে শুরু করেছেন।

ওয়ানডেতে বোলিং বৈচিত্র্য নিয়ে যখন বলতে বলা হলো, মিরাজ বলেন, ‘আমি টেস্ট শুরুর সময় ভেবেছিলাম এই সংস্করণে কিভাবে খুব ভালো করে ওয়ানডে খেলা যায়। ওয়ানডেতে আমি ধারাবাহিক ছিলাম না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর (হোম সিরিজ) থেকে আমি টানা খেলছি। আমার মনে হয়, ওয়ানডেতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রান চেক দিয়ে বোলিং করা। যদি রান চেক বোলিং করি তাহলে কিন্তু দলের অধিনায়ক আমার ওপর আস্থা রাখবে। আমি সেই চেষ্টা করেছি।’

সতীর্থদের সহায়তাও নিয়মিত পেয়ে যাচ্ছেন মিরাজ। সেটা অকপটে বলে গেলেন, ‘আমার যারা সতীর্থ আছেন, তারা তো সহায়তা করছেনই। আজকের (শুক্রবারের) ম্যাচে শেষে যে দুইটা উইকেট পেলাম তার আগে মাশরাফি ভাই আর মুশফিক ভাই আলোচনা করছিলেন। তাদের মনে হয়েছিল, এই সময়ে মিরাজ যদি বোলিং করে ও ভালো করবে।’

তরুণ বোলার হলেও মিরাজের ওপর অনেক বেশি আস্থা অধিনায়কদের। যে কারণে দেখা যাচ্ছে ইনিংস ওপেন করার জন্য মিরাজের হাতেই বল তুলে দিচ্ছেন মাশরাফি। শুক্রবার সিলেটেও হয়েছে একই অবস্থা। তো শুরুতে বোলিং করতে গেলে কেমন লাগে। চ্যালেঞ্জটা কেমন?

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মিরাজ বলেন, ‘শুরুতে বোলিং করা একটু কঠিন। মাত্র দুই জন ফিল্ডার বাইরে থাকে। ওখানে কিন্তু একটু এদিক-সেদিক হলে বাউন্ডারির সম্ভাবনা বেশি থাকে। শুরুর দিকে বোলিং করতে ভালোও লাগে। এই সময়ে ভালো জায়গায় বোলিং করলে কিন্তু সুযোগও বেশি থাকে উইকেট পাওয়ার। ডট বল খেলানোরও সুযোগ বেশি থাকে। আমাকে যখন নতুন বল দেওয়া হয়, আমি চেষ্টা করি জায়গায় বোলিং করে যাওয়ার আর বাউন্ডারির সুযোগ যেন না পায়। ওখানে এক রান হোক, কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু বাউন্ডারির সুযোগ পেয়ে গেলে ব্যাটসম্যানের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায়। চেষ্টা করি যদি আঁটসাঁট লাইনে জায়গায় বোলিং করে যাওয়ার। এক-দুই রান হোক কিন্তু বাউন্ডারিটা যেন না হয়।’

মিরাজের বোলিং তত্বটা কি? যারা তার খেলা দেখেছেন, বোলিং দেখেছেন, তাদের কাছে উত্তরটা জানা আছে। রান না দিয়ে আঁটো-সাঁটো বোলিং করে যাওয়া। মেহেদী হাসান মিরাজ সে কথাই জানালেন। মাশরাফি-মুশফিকরাও তাকে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকেন, কিভাবে বোলিং করবেন।

এ নিয়ে মিরাজ বলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে আমি এই সংস্করণে নিয়মিত খেলছি। আমাকে মাশরাফি ভাই, মুশফিক ভাই সব সময় বলেন- এই সংস্করণে আঁটসাঁট বোলিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি যদি আঁটসাঁট লাইনে বোলিং করি, ইকোনমি যদি ঠিক থাকে তাহলে অন্য প্রান্তে উইকেট পড়ার সম্ভাবনা থাকে। দীর্ঘ দিন আঁটসাঁট বোলিং করে যাওয়ার কারণেই হয়তো আজকে (শুক্রবার) চারটা উইকেট পেয়েছি। তারা আমাকে সব সময় বলেন আঁটসাঁট বোলিং করার জন্য। এটা হতে থাকলে তিন-চার-পাঁচটা উইকেট হয়ে যাবে। টানা যদি চাপটা ধরে রাখা যায় উইকেট আসবেই। দেখা গেল, পাঁচ ম্যাচ পরে একটা চার উইকেট হল।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিলেটের এই ম্যাচে বোলিং করে কেমন লাগলো? কিংবা নিজের বোলিংয়ের মূল্যায়নই বা কিভাবে করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মিরাজ বলেন, ‘খুব ভালো লেগেছে। টস জেতাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মাশরাফি ভাই টস জিতে ফিল্ডিং নেন। উইকেটও এমনই ছিল যে, প্রথম দিকে স্পিনাররা সহায়তা পাবে। মাশরাফি ভাই আমাকে এক প্রান্ত দিয়ে টানা আট ওভার বোলিং করিয়েছিলেন। পরে ফিরে দুইটা ‘ব্রেক থ্রু’ দিতে পেরেছিলাম। এটা করতে পেরে আমার খুব ভালো লেগেছে।’

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।