তুঙ্গস্পর্শী নির্বাচনী প্রচারণার মাঝেও টিকিটের লম্বা লাইন

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা সিলেট থেকে
প্রকাশিত: ০৮:১২ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

কাকডাকা ভোরে শহরে পা রেখেই মনে হলো, সিলেট কাঁপছে নির্বাচন উত্তাপে। শহরের প্রায় সব মোড়ে মোড়ে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার তোড়জোড়। দু‘একশ গজ দূরে দূরে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পোস্টার দড়ি দিয়ে টানানো।

আওয়ামী লিগ সমর্থিত প্রার্থী আব্দুল মোমেনের পোস্টারে সয়লাব। বিএনপির প্রার্থী খন্দকার মোক্তাদির খানের পোস্টারও চোখে পড়লো প্রচুর। সকাল গড়িয়ে দুপুর নামতে জিন্দাবাজার থেকে লাক্কাতুরা (যেখানে ক্রিকেট স্টেডিয়াম) আসতেই চোখে পড়লো হলো নির্বাচনী প্রচারণা এখন তুঙ্গে ।

জিন্দাবাজার থেকে লাক্কাতুরা-প্রাইভেট কার, সিএনজিতে সর্বোচ্চ মিনিট বিশেকের পথ। ঐ পথে আসতে-যেতে প্রতিটি মোড়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রাস্তার এপাড় থেকে ওপাড়ে রশি দিয়ে নৌকা আর ধানের শীষের পোস্টার ঝুলিয়ে রাখা ।

সফল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের উত্তরসূরী হিসেবে যাকে ভাবা হচ্ছে, সেই বর্ষীয়ান রাজনীতিবীদ অর্থনীতিবিদের ছোট ভাই আব্দুল মোমেনের পোস্টার চোখে পড়লো বেশি। তবে বিএনপি প্রার্থী খন্দকার মোক্তাদিরের পোস্টারও কম নয়। প্রচুর।

সব মিলে সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্র তথা সিলেট-১ নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চোখে পড়ার মত। নির্বাচনী প্রচার ও নির্বাচনী কার্যক্রম নিয়ে প্রার্থী ও তার সমর্থক, নেতা-কর্মীদের ব্যস্ততা দেখে বার বার মনে হচ্ছিলো, নির্বাচন নিয়ে মেতে থাকা সিলেটবাসীর কি তাহলে বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ানডে নিয়ে কোনই আগ্রহ নেই?

রাত পোহালেই শহরের লাক্কাতুরায় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাশরাফির বাংলাদেশের সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের তৃতীয় ওয়ানডে, অথচ শহরের কোথাও একটি তোড়নও নেই। ব্যানার-ফেস্টুনও চোখে পড়লো না। তবে কি নির্বাচনী প্রচারণার তোড়জোড় আর ডামাডোলে ফিঁকে হয়ে গেছে সব?

মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহদের সাথে হোপ, স্যামুয়েলস, হেটমায়ার, রোচ-থমাসদের সিরিজ নির্ধারণী লড়াই দেখায় সিলেটবাসীর আগ্রহ কি খুবই কম? যে সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে স্টেডিয়ামে দর্শকের ঢল বয়ে গিয়েছিল-সেই মাঠ কি তাহলে ফাঁকা থাকবে?

আগামীকালকের ওয়ানডে নিয়ে তাহলে এবার সিলেটবাসী তথা শহরের ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা বেশ কম? লাক্কাতুরা টি স্টেটের ভিতর দিয়ে স্টেডিয়ামের মূল প্রবেশ পথের ঠিক সামনে আসতেই ঠিক এই ভাবনা বদলে গেল। মূল প্রবেশ পথ থেকে দু ধারে লাক্কাতুরা চা বাগান ধরে এগিয়ে হাফ কিলোমিটার পথ পেরুলে স্টেডিয়াম। সেই পথ দিয়ে স্টেডিয়ামে ঢোকাই দায়। হাজার হাজার জনতার লাইন।

প্রথমে মনে হচ্ছিলো, কোন প্রার্থীর পথসভা বুঝি। পরক্ষণেই ভুল ভাঙ্গলো। আরে এ যে কালকের ম্যাচের টিকিট কেনার লাইন! কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে মাঝ বয়সী অন্তত হাজার তিনেক মানুষের ভীড়। সবাই সারিবদ্ধ হয়ে টিকেট কেনার অপেক্ষায় উন্মুখ। তাদের থামাতে পুলিশ মোতায়েন আছে।

এদিকে স্টেডিয়ামে পা রেখেই স্থানীয় ব্যবস্থাপকদের সাথে আলাপে জানা গেল, কাল টাইগারদের ম্যাচ দেখতে স্থানীয় ক্রিকেট অনুরাগীরা মুখিয়ে আছেন। অনেকেই ধরে নিয়েছেন, ঘরের মাঠে না হলেও ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফির সিলেটের মাটিতে লাল সবুজ জার্সি গায়ে এটাই হয়তো শেষ বার মাঠে নামা।

তাই সিলেটবাসীর ধারণা ও বিশ্বাস, ১৪ ডিসেম্বরের ম্যাচটি টাইগার অধিনায়ক মাশরাফির সিলেটের মাটিতে শেষ ম্যাচ। তাই দর্শক, সমর্থক ও ভক্তদের আগ্রহ প্রচুর। সে কারণেই ধারণা করা হচ্ছে রেকর্ড পরিমাণ দর্শক হতে পারে শুক্রবার।

স্থানীয় ব্যবস্থাপক জানালেন, এমনিতেই বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগরী চট্টগাম, খুলনা, রাজশাহী, বগুড়া, যশোর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রংপুরসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেক পর্যটক সিলেট শহরে আসেন। যাদের মূল অংশ আসেন হযরত শাহজালাল (রঃ) ও হযরত শাহ পরান (রঃ)- এর মাজার জিয়ারত করতে। আর অনেকে সিলেট, জাফলংসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র পরিদর্শনে যান।

এখন স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। কলেজও বন্ধ। এছাড়া লন্ডন প্রবাসী কিছু সিলেটীও এসেছেন। তাদের অনেকেরই লক্ষ্য, কালকের ম্যাচ দেখা। সিলেট শহরে বছরের এ সময় এমনিতেই নানা জেলার মানুষের সমারোহ। সে কারণেই শহরের হোটেলগুলোয় সিলেটের বাইরের মানুষে ঠাসা। প্রায় হোটেল ভরা। রুম খালি নেই। সব মিলে কালকের ম্যাচকে ঘিরে অন্যরকম উৎসাহ-উদ্দীপনা স্থানীয়দের মধ্যে।

ধারণা করা হচ্ছে, শুক্রবার সিলেটের চা বাগান, টিলা, সবুজ গাছপালা আর বৃটিশ স্থাপত্বের মিশ্রণে গড়া ‘লাক্কাতুরা’ স্টেডিয়ামে জনতার ঢল নামবে।

এআরবি/এমএমআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।