মাশরাফির হাত ধরেই সিলেটে প্রথম জয়ের দেখা পাবে বাংলাদেশ?
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে এটা যেহেতু বাংলাদেশেরই প্রথম ওয়ানডে, তাই ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজারও প্রথম। ভাবছেন, সে কি কথা! সিলেট স্টেডিয়ামে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার প্রথম ম্যাচ কি করে?
একটু গোলমেলে ঠেকছে? নাহ! জটিল মনে হবার কোনোই কারণ নেই। ইতিহাস পরিষ্কার জানাচ্ছে, এই মাঠে বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত ম্যাচই খেলেছে মোটে দুটি। যার একটি টি-টোয়েন্টি (এ বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে) আর অন্যটি টেস্ট (এই তো গত ৪ থেকে ৬ নভেম্বর)।
মাশরাফি টেস্ট খেলেন না সেই ২০০৯ সাল থেকে। তাই সাদা পোশাকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলার প্রশ্নই আসে না। যেহেতু গত বছর ৬ এপ্রিলের পর থেকে দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটও খেলছেন না, তাই জাতীয় দলের লাল সবুজ জার্সি গায়ে চড়িয়েও সিলেট মাঠে নামা হয়নি মাশরাফি বিন মর্তুজার।
সে কারণেই বলা, শুক্রবারের ম্যাচটি সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ম্যাচ হবে মাশরাফির। লাল সবুজ জার্সি গায়ে চড়িয়ে না খেললেও গত বছর রংপুর রাইডার্সের হয়ে এই মাঠে বিপিএলের দুটি ম্যাচ খেলে গেছেন তিনি। তাই এ মাঠে খেলার অভিজ্ঞতাও খুব কম তার। উইকেটের চরিত্র সম্পর্কেও তেমন পরিষ্কার ধারণা নেই।
কিন্তু সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের রুপে মুগ্ধ-মোহিত মাশরাফি। ‘লাক্কাতুরা চা বাগান, টিলা , সবুজ বৃক্ষরাজির সম্মিলনে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলা নিকেতন আর বৃটিশ ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে লাল টালির ছাদে ঘেরা গ্র্যান্ডস্ট্যান্ড- সব মিলে দৃষ্টিনন্দন, নয়ম মনোহর এক ভেন্যু।
পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতার বিবেচনায় মাশরাফির চোখে এটাই বাংলাদেশের সুন্দরতম ভেন্যু। এই স্টেডিয়াম সম্পর্কে আজ প্রেস কনফারেন্সে কথা বলতে গিয়ে তাই টাইগার অধিনায়কের কণ্ঠে উচ্ছসিত প্রশংসা, ‘এই মাঠ অবশ্যই বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ভেন্যু। সিলেট এমনিতেই সুন্দর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ঘেরা। স্টেডিয়ামের আশেপাশের এলাকাটাও খুব সুন্দর। সৌন্দর্য্যরে কথা যদি বলেন, তাহলে তো অবশ্যই এটা অন্যতম সেরা।’
যে মাঠের সৌন্দর্য্যে তিনি মুগ্ধ, যার আশপাশ তার মন কেড়ে নেয়া, সে মাঠেই শুক্রবার জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে প্রথম খেলতে নামবেন মাশরাফি; কিন্তু এ ম্যাচে ভাল করার একটা অন্যরকম তাড়া থাকবে তার ওপর।
কারণ, ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে এখনো জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। যদিও আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছে সাড়ে চার বছর আগে, ২০১৪ সালের ১৭ মার্চ, জিম্বাবুয়ে আর আয়ারল্যান্ডের বিশ্ব টি-টোয়েন্টি আসরের বাছাই পর্বের ম্যাচ দিয়ে।
কিন্তু এ মাঠে টিম বাংলাদেশ প্রথম খেলেছে এ বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৭৫ রানের বড় ব্যবধানে হার থেকেছে সঙ্গী। আর গত মাসে এখানেই জিম্বাবুয়ের কাছে টেস্টে ১৫১ রানের বড় ব্যবধানে পরাজয়ের গ্লানিতে মাঠ ছাড়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। তার মানে, এমন এক অনিন্দ্য সুন্দর ভেন্যুতে জয় অধরাই বাংলাদেশের।
অবশ্য কেউ কেউ এরই মধ্যে সিলেট ভেন্যুকে ‘অপয়া’ বলতে শুরু করেছেন; কিন্তু হাতে গোনা দুটি ম্যাচের ফল দেখে চূড়ান্ত মন্তব্যে যাওয়া ঠিক নয়। তাই সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামকে টিম বাংলাদেশের ‘অপয়া ভেন্যু’ না বলাই উত্তম ও যুক্তিযুক্ত।
অধিনায়ক মাশরাফিও এই মাঠে আগের দুই ম্যাচ হারা নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। মাশরাফির অনুভব-উপলব্ধি হলো, এখন সিরিজে জয়-পরাজয়ের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে দল। এখন আগের দুই হারের কথা ভেবে বসে থাকলে চলবে না। ওসব সাত-পাঁচ ভাবনা বাদ দিয়ে মাশরাফি নিজেদের নিয়েই ভাবতে চান।
তার কন্ঠে তাই সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দেয়ার তাগিদ- ‘এখন আর অতকিছু ভেবে লাভ নাই। এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়, এখানে আপনাকে নিজের সেরাটা দিতে হবে। এখন অন্য কিছু নিয়ে ভাবা আপনার ঠিক না। পেছনেরটা মনে করে কোনো লাভ নেই। কালকে আমাদের নতুন ম্যাচ। নতুন কিছু। খুব ব্যাকফুটে আছি তাও না। ১-১ সমতায় আছে। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ। এটা এমন না যে আমাদের সব কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। ইতিবাচক খেলতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে আপনি প্রত্যাশা করবেন, ওরা বেস্ট ক্রিকেট খেলবে কালকে। আমাদেরকেও বেস্ট ক্রিকেট খেলতে হবে। এ গ্রাউন্ডে আগে কি হয়েছে, সেটা ভেবে মাঠে নামলে আরও খারাপ হবে।’
অঘ্রাণের শেষ ভাগে সিলেট অঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি। পাশাপাশি শিশিরও পড়ে। আগেরবার বিপিএল খেলতে এসে সে অভিজ্ঞতা হয়েছে মাশরাফির। তাই মুখে এমন কথা, এই ভেন্যুতে খেলার খুব একটা অভিজ্ঞতা নেই। বিপিএলে দুইটা ম্যাচ খেলেছিলাম। তখন শিশির ছিল।’
এখন মানে এবার কি অবস্থা? শিশির পড়ে কি না? পড়লেও কতটা? মাশরাফি তা দেখে নিতে চান। আর সে কারণেই শিশির পড়া নিয়ে কথোপকোথন পর্বের শেষটা এমন, ‘এই সময়ে কেমন হচ্ছে সেটাও দেখার ব্যাপার। এতবেশি অভিজ্ঞতা নেই যে, আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারব।’
তার অধিনায়কত্বে অনেক কিছুই প্রথম হয়েছে। অনেক বড় বড় কৃতিত্ব হয়েছে অর্জিত। অনেক নজরকাড়া ও ঐতিহাসিক- অবিস্মরণীয় সাফল্যও ধরা দিয়েছে, পূন্যভুমি সিলেটের অনুপম সৌন্দর্য্যে ঘেরা স্টেডিয়ামে মাশরাফির অধিনায়কত্বে কাল কি প্রথম জয়ের দেখা মিলবে?
এআরবি/আইএইচএস/পিআর