এখন আর ‘সবুজ’ উইকেটে ভয় পায় না ভারত!
ওয়াকা গ্রাউন্ড, নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক টুকরো সবুজের হাতছানি। ৯০ গজের মাঠটা যেমন সবুজ, তার মাঝে ২২ গজের উইকেটটাকে সেখান থেকে আলাদা করে চেনার উপায় থাকে না। মাঠের চেহারার সঙ্গেই যেন মিল রেখে উইকেটটা তৈরি করা হয় এখানে। সুতরাং, ওয়াকা মানেই পেসারদের স্বর্গরাজ্য। গতিঝড়, বাউন্স আর ইয়র্কারের স্বর্গ। পেসারদের জন্য এর চেয়ে প্রিয় আর কোনো স্টেডিয়ামই যেন হয় না।
এ কারণেই ওয়াকা গ্রাউন্ডে ভারতের খেলতে আসা মানেই একরাশ আতঙ্ক। পেসারদের গতি আর বাউন্সের সামনে দুরু দুরু বুক নিয়ে খেলতে নামা এবং খুব দ্রুত উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পারাটাই যেন ছিল নিয়তি। এবারও তো তেমন হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু এখন আর ভারত পার্থের ‘সবুজ’ উইকেট নিয়ে মোটেও ভয় পায় না। এখানকার গতিময় বাউন্সি উইকেট দেখে বরং উল্টো ভারতই আশাবাদী হয়ে উঠেছে, অ্যাডিলেড টেস্ট জিতে এগিয়ে যাওয়ার পর পার্থ টেস্ট জিতে সিরিজে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করার বিষয়ে।
যদিও এবার কিন্তু বিখ্যাত ওয়াকা গ্রাউন্ডে ভারত আর অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। টেস্ট হবে এবার পার্থ স্টেডিয়ামে। পার্থের আরেকটি স্টেডিয়াম। যেটার অভিজ্ঞতা মাত্র দুটি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ আয়োজন। অস্ট্রেলিয়া-ভারতের মধ্যকার এই ম্যাচ দিয়েই স্টেডিয়ামটির টেস্ট অভিষেক ঘটবে।
ওয়াকা গ্রাউন্ডে টেস্ট নেই; কিন্তু পার্থের নতুন স্টেডিয়ামটি যেন ওয়াকার পুরোপুরি ফটোকপি। বলা হচ্ছে, ওয়াকায় ক্রিকেট না থাকলে কি হবে, ক্রিকেট থেকে তো আর ওয়াকাকে আলাদা করা যাবে না। অর্থ্যাৎ, ওয়াকার সব বৈশিষ্ট্যই কপি করে আনা হয়েছে পার্থ স্টেডিয়ামে। আগের মত সেই সবুজ মাঠ। যার ভেতর থেকে উইকেটটাকে খুঁজে বের করাই মুস্কিল হয়ে যায়। পেসারদের জন্য যে ধরনের আদর্শ উইকেট প্রয়োজন, তার সবই আছে এখানে।
কিউরেটর ব্রেট সিপথর্প জানিয়ে দিয়েছেন, তারা চেষ্টা করেছেন উইকেটটাকে যতটা সম্ভব গতিময় এবং বাউন্সি হিসেবে গড়ে তুলতে। তাতে টেস্ট যে কয়দিন গড়ায় গড়াক। তোদের কোনো সমস্যা নেই। টেস্ট যদি আড়াই-তিনদিনেও শেষ হয়, হোক। এখানে বাণিজ্যিক কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই।
এমন উইকেট দেখার পর যেখানে আতঙ্গে কেঁপে ওঠার কথা ভারতীয়দের, সেখানে উল্টো খুশি খুশি ভাব অধিনায়ক বিরাট কোহলির। ম্যাচ শুরুর আগেরদিন উইকেট দেখতে এসে বিরাট কোহলি মাঠ ছেড়েছেন হাসিমুখেই। এরপর সংবাদ সম্মেলনে বসে নিজেই জানিয়ে দিলেন, এ ধরনের উইকেট দেখে বরং, তিনি খুশিই হয়েছেন।
বছরের শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ঠিক একই ধরনের উইকেটে খেলেছিল ভারত। সেবার উল্টো ভারতীয় পেসেই নাকাল হতে হয়েছে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ৫ পেসার খেলিয়েছিল ভারত এবং স্বাগতিকদের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয় পেয়েছিল বিরাট কোহলির দল।
সে ঘটনারই পূনরাবৃত্তি এবার ঘটাতে চান কোহলি। পার্থের উইকেট দেখে তেমনটাই ভাবনা তার। ব্যাটসম্যানদের জন্য পরীক্ষাটা খুব কঠিন হবে সত্য। কিন্তু বোলারদের জন্য কিছু পুঁজি সংগ্রহ করে দিতে পারলে, বাকি কাজটা ভারতীয় পেসাররাই করে নিতে পারবে বলে বিশ্বাস কোহলির।
সংবাদ সম্মেলনে উইকেট নিয়ে কোহলি উল্টো হুমকি দিলেন। তিনি বলেন, ‘উইকেট দেখে আমি খুবই খুশি। আমি আশা করবো, উইকেট থেকে যেন আর কোনো ঘাস তুলে ফেলা না হয়। তাহলে, টেস্টের প্রথম তিনদিন হবে খুবই প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ। এ ধরনের উইকেট নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। শুধুমাত্র আমাদের ব্যাটসম্যানদের কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। শুধু ইতিবাচক খেলতে হবে এবং বোলারদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাহলেই অ্যাডিলেডে তারা যা উপহার দিয়েছে, পার্থেও সেটা দিতে পারবে।’
বিরাট কোহলি জানিয়ে দিলেন, এ ধরনের সবুজ উইকেট দেখে তারা এখন আর নার্ভাস হন না। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের জীবিত উইকেট দেখার পর নার্ভাসনেসের চেয়ে আমরা এখন অনেক বেশি আশাবাদী হয়ে উঠি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের যে বোলিং অ্যাটাক আছে, তারা প্রতিপক্ষকে খুব সহজে অলআউট করে দিতে সক্ষম। যখন ৪ কিংবা ৫জন বোলার এমন থাকে, যারা নিজেদের সেরাটা সময়ে আছে, তখন বিষয়টা আপনার জন্য আরও সহজ হয়ে যায়। আর এটা আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্যও অনেক বড় মোটিভেশনের বিষয়।’
অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতীয় দলে রয়েছে একঝাঁক পেস তারকা। জসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি, উমেষ যাদব, ইশান্ত শর্মা, ভুবনেশ্বর কুমার। সবুজ উইকেটে হয়তোবা এই পাঁচ পেসারকে একসঙ্গে খেলিয়ে দিতে পারে ভারত। সে ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া যে আশা নিয়ে ‘সবুজ’ উইকেট তৈরি করেছে, সেটাই বরং উল্টো বুমেরাং হয়ে যেতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ারও রয়েছে একঝাঁক পেস তারকা, প্যাক কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজলউড, মিচেল মার্শ, পিটার সিডলরা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার তো সে তুলনায় ব্যাটিং শক্তিশালী নয়। মাঠে টক্করটা পেসে-পেসে হলেও ব্যাটিংয়ে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়াই।
এসব দেখেই সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভন মন্তব্য করলেন, সবুজ উইকেট উল্টো ব্যাকফায়ার করতে পারে অস্ট্রেলিয়াকে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, অস্ট্রেলিয়া বড় রিস্ক নিয়ে ফেলছে। তাদের এমন উইকেট প্রয়োজন, যেখানে তারা খুব সহজেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের উইকেট নিতে পারবে। কিন্তু অ্যাডিলেড ওভালে ভারতীয়দের বোলিং অ্যাটাক দেখে আমার মনে হচ্ছে, পার্থে বুমরাহ, শর্মা (ইশান্ত) কিংবা শামিরা অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য দুঃস্বপ্নেরও কারণ হতে পারে।’
আইএইচএস/এমকেএইচ