আজই কি সিরিজ নিজেদের করে ফেলবে টাইগাররা?

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১০:৩৮ এএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

এক টিকিটে দুই ছবি দেখার মতো আজ শেরে বাংলায় এক ঢিলে দুই পাখি মারার সুযোগ থাকছে বাংলাদেশ সমর্থকদের সামনে। প্রথমত এটা ‘পঞ্চপাণ্ডবে’র (মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহীম) শততম ম্যাচ।

আগে পরে শুরু করলেও সময়ের প্রবহতায় একসঙ্গে ৯৯ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাহমুদউল্লাহরা। যাদের ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে বাংলাদেশ দল, সেই পঞ্চশক্তির একসঙ্গে শততম ম্যাচ এটি। পঞ্চপাণ্ডবের বিশেষ এ ম্যাচ দেখতে মুখিয়ে আছেন দর্শক-ভক্তরা।

ওদিকে আজ যে মাশরাফি বাহিনীর সিরিজ নিশ্চিতের ম্যাচ! অনেকেরই বিশ্বাস মঙ্গলবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ক্যারিবীয়দের হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলবে টাইগাররা। এর কারণ মূলত শেরে বাংলার ‘রহস্যময়’ উইকেট ও এর গতি-প্রকৃতি।

সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বল পিচে পড়ে স্লথ হয়ে ব্যাটে এসেছে। তেমন ওঠেনি। যা সব সময়ই বাংলাদেশের বোলারদের সাফল্যের স্বর্গ। কারণ বাংলাদেশের পেসারদের বোলিংয়ে গড়পড়তা গতি কম। মাঝে তাসকিন করতেন জোরে বল আর এখন রুবেল হোসেন।

এছাড়া অধিনায়ক মাশরাফি আর মোস্তাফিজুর রহমান ও সাইফউদ্দীন কেউই জোরে বল করেন না, মিডিয়াম পেস। গড়পড়তা ১৩০ কিলোমিটারের আশপাশে থাকে। তারা গতি, বাউন্স ও ম্যুভমেন্টের চেয়ে যেহেতু লাইন লেন্থ এবং ব্যাটসম্যানের হাব ভাব বুঝে বুদ্ধি খাঁটিয়ে বল করে রান চাকা নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজটি খুব নিপুণভাবে করতে পারেন।

এছাড়া মাঝেমধ্যে বৈচিত্র্য এনে কখনো স্লোয়ার ছুড়ে ব্যাটসম্যানকে বেকায়দায় ফেলার কাজটিও ভালোই জানা তাদের। তাই তাদের জন্য স্লো অ্যান্ড লো ট্র্যাকই বেশি উপযোগী। ঐ ধরনের উইকেটে ফ্রি স্ট্রোক প্লে উইকেট ছেড়ে বেড়িয়ে দুম করে বিগ হিট নেয়া এবং এবং উইকেটের দু দিকে কাট, ফ্লিক, পুল খেলা ছিল বেশ কঠিন।

সাইড শট খেলা যাদের প্রথম পছন্দ, সেই ক্যারিবীয়রা প্রথম ম্যাচে শেরে বাংলার স্লো পিচে ইচ্ছেমত ব্যাট চালাতে না পেরে ছটফট করেছেন। অকাতরে উইকেটও দিয়েছেন। তাই তো মাঝারি গতির মাশরাফি (১০ ওভারে ৩/৩০) ও মোস্তাফিজ (১০ ওভারে ৩/৩৫) সবচেয়ে সফল। বাড়তি গতি সঞ্চারের চেষ্টা করা রুবেল সে তুলনায় রান দিয়েছেন বেশি (১০ ওভারে ১/৬১)।

অর্থাৎ শেরে বাংলায় যে পিচে গতকাল প্রথম ওয়ানডে হয়েছে, সেখানে শর্ট বল না করে যতটা সম্ভব ওপরে মানে ব্যাটসম্যানকে সামনের পায়ে ড্রাইভ খেলানো হচ্ছে সাফল্যর পূর্বশর্ত। ঠিক ড্রাইভিং জোনের একটু দূরে জায়গামত বল ফেলতে পারলে অফ ও অন সাইডে ড্রাইভ খেলা বেশ কঠিন। অফ ও লেগস্টাম্পের বাইরে জায়গা বেশি না পেলে সাইড শট খেলেও রান তোলা সহজ নয়।

এমন এক ধরনের উইকেটে সাকিব আর মিরাজের মাপা ও কোয়ালিটি স্পিনটাও অনেক বড় সম্পদ। তারা দুজন হয়ত পেসার মাশরাফি, মোস্তাফিজের তুলনায় উইকেট কম পেয়েছেন, কিন্তু শুরুতে কাজের কাজ করে দিয়েছেন। বোলিং শুরু করে প্রাথমিক ব্রেক থ্রু উপহার দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করার পাশাপাশি রান গতিও কমিয়ে রাখেন দুই স্পিনার সাকিব-মিরাজ। তাদের দুজনার উইকেট সোজা আর মাপা লাইন ও লেন্থের বোলিংয়ের মুখে ক্যারিবীয়রা প্রথম থেকেই চাপে ছিল।

উইকেট এমনিতেই স্লো, তারওপর সাকিব-মিরাজের স্লো স্পিনে ক্যারিবীয় টপ অর্ডার হাত খুলে ফ্রি স্ট্রোক খেলতে না পেরে অস্বচ্ছন্দ্যবোধ করতে থাকেন। শুরুতে বাংলাদেশ বোলারদের ওপর চড়াও হতে না পারা উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা সেই যে ব্যাকফুটে চলে যান, সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়নি।

প্রথম ম্যাচ শেষে রোববার রাতের প্রেস মিটে সে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল টাইগার অধিনায়ক মাশরাফির কাছেও। তবে এমন আবেগ-উচ্ছ্বাসে কখনো গা না ভাসানো মাশরাফি কোন কিছুকেই গ্যারান্টেড ভাবেন না। তার সতর্ক-সাবধানী উচ্চারণ, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফিরে আসার জন্য যথেষ্ট সামর্থ্য রাখে। ঘুরে দাঁড়ানোর শতভাগ সামর্থ্যও আছে ওদের।’

যা নিয়ে চিন্তা ছিল বেশি, প্রথশ ওয়ানডেতে সেই শিশির পড়েনি তেমন। যে কারণে স্পিনারদের বল গ্রিপ করায় সমস্যা হয়নি। বরং দ্বিতীয় সেশনে স্পিনারদের বল টার্নও করেছে বেশি। সে প্রসঙ্গ টেনে মাশরাফি বলেন, ‘কোনো কিছুকেই নিশ্চিতভাবে নিতে নেই। শিশির সেভাবে পড়েনি। বল সেকেন্ড হাফে টার্ন করছিল বেশ। ওরা যদি ২৫০-২৬০ করে ফেলতো, তাহলে ডিফরেন্ট বল গেম হওয়ার চান্স বেশি ছিল।’

মাশরাফি মনে করেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য রাখে। তাই পরের ম্যাচেও প্রথম ওয়ানডের মতোই খেলতে চান টাইগার দলপতি। সিলেটে তৃতীয় ওয়ানডের আগেই সিরিজ জেতা হয়ে যাবে, এমনটা ভাবতেও নারাজ তিনি।

নড়াইল এক্সপ্রেস বলেন, ‘সিলেটের চিন্তা এখনই করা ঠিক হবে না। কাল আমাদের প্রস্তুতি ঠিকভাবে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে আরেকটি নতুন দিন। আরেক ম্যাচ। কাজেই সবাইকে আবার নতুন ভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এবং মঙ্গলবারের ম্যাচটা যেন ঠিক অমন শতভাগ উজার করে খেলতে পারি, সেটাও নিশ্চিত করা জরুরী।’

অধিনায়ক তাগিদ অনুভব করতেই পারেন। তার অবস্থান থেকে সহযোগীদের সতর্ক ও সাবধান করে দেয়াই যে স্বাভাবিক। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, শেরে বাংলার যে পিচে প্রথম ম্যাচ হয়েছে, উইকেটের চরিত্র ও গতি-প্রকৃতি তেমন থাকলে সব হিসেবেই ফেবারিট বাংলাদেশ।

কারণ শেরে বাংলার স্লো ও লো ট্র্যাক, মাশরাফির ভাষায় ‘রহস্যময়’ হলেও সে রহস্যের জাল ছিন্ন করার সামর্থ্য পুরোপুরি আছে টাইগারদের। এ ধরনের স্লো উইকেটে যেমন বোলিং অ্যাটাক দরকার তা আছে বাংলাদেশের। ব্যাটিংয়ে স্ট্রোকমেকারের সংখ্যা বেশি হলেও স্লো ট্র্যাকে ধরে খেলার মতো পারফরমারও আছেন ক’জন।

গতিনির্ভর ক্যারিবীয় পেস অ্যাটাক এ উইকেটে ততটা কার্যকর নয়। ওশেন থমাসের গড়পড়তা ১৪৫ কিমির গতির ডেলিচারিও সে অর্থে টলাতে পারেনি টাইগারদের। অন্যদিকে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরাও মূলত স্ট্রোক খেলতেই বেশি পছন্দ করেন, যে কারণে এমন উইকেটে তাদের স্বাভাবিক খেলাটা কঠিন। তাই আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের দিকেই পাল্লা ভারী।

এআরবি/এসএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।