দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও প্রথম ম্যাচের বাংলাদেশকেই চান মাশরাফি
‘আচ্ছা, ওয়ানডে সিরিজের আকর্ষণ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা কি সিলেট পর্যন্ত থাকবে? নাকি ঢাকাতেই সব শেষ হয়ে যাবে? বাংলাদেশ কি কালই সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলবে? টেস্ট সিরিজে চরম নাকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ওয়ানডেতে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? না দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে ফেলবে বাংলাদেশ?’-ঘুরেফিরে প্রশ্ন এখন সেটাই।
টাইগার সমর্থকদের বড় অংশের বিশ্বাস এবং অনেকেরই ধারণা, মাশরাফি বাহিনীর সাথে ঢাকায় মানে শেরে বাংলার স্লো অ্যান্ড লো পিচে পেরে ওঠা খুব কঠিন হবে ক্যারিবীয়দের। যে পিচে প্রথম ম্যাচ হয়েছে, তা ছিল একদমই স্বাগতিক দলের উপযোগী।
বল পিচ পড়ে স্লথ হয়ে ব্যাটে এসেছে। তেমন ওঠেনি। যা সব সময়ই বাংলাদেশের বোলারদের সাফল্যর স্বর্গ। কারণ বাংলাদেশের পেসারদের বোলিংয়ে গড়পড়তা গতি কম। মাঝে তাসকিন করতেন জোরে বল। আর এখন রুবেল হোসেন।
এছাড়া অধিনায়ক মাশরাফি আর মোস্তাফিজুর রহমান ও সাইফউদ্দীন কেউই জোরে বল করেন না, মিডিয়াম পেস। গড়পড়তা ১৩০ কিলোমিটারের আশপাশে থাকে। তারা গতি, বাউন্স ও ম্যুভমেন্টের চেয়ে যেহেতু লাইন লেন্থ এবং ব্যাটসম্যানের হাব ভাব বুঝে বুদ্ধি খাঁটিয়ে বল করে রান চাকা নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজটি খুব নিপুণভাবে করতে পারেন।
এছাড়া মাঝেমধ্যে বৈচিত্র্য এনে কখনো স্লোয়ার ছুড়ে ব্যাটসম্যানকে বেকায়দায় ফেলার কাজটিও ভালোই জানা তাদের। তাই তাদের জন্য স্লো অ্যান্ড লো ট্র্যাকই বেশি উপযোগী। ঐ ধরনের উইকেটে ফ্রি স্ট্রোক প্লে উইকেট ছেড়ে বেড়িয়ে দুম করে বিগ হিট নেয়া এবং এবং উইকেটের দু দিকে কাট, ফ্লিক, পুল খেলা ছিল বেশ কঠিন।
সাইড শট খেলা যাদের প্রথম পছন্দ, সেই ক্যারিবীয়রা প্রথম ম্যাচে শেরে বাংলার স্লো পিচে ইচ্ছেমত ব্যাট চালাতে না পেরে ছটফট করেছেন। অকাতরে উইকেটও দিয়েছেন। তাই তো মাঝারি গতির মাশরাফি (১০ ওভারে ৩/৩০) ও মোস্তাফিজ (১০ ওভারে ৩/৩৫) সবচেয়ে সফল। বাড়তি গতি সঞ্চারের চেষ্টা করা রুবেল সে তুলনায় রান দিয়েছেন বেশি (১০ ওভারে ১/৬১)।
অর্থাৎ শেরে বাংলায় যে পিচে গতকাল প্রথম ওয়ানডে হয়েছে, সেখানে শর্ট বল না করে যতটা সম্ভব ওপরে মানে ব্যাটসম্যানকে সামনের পায়ে ড্রাইভ খেলানো হচ্ছে সাফল্যর পূর্বশর্ত। ঠিক ড্রাইভিং জোনের একটু দূরে জায়গামত বল ফেলতে পারলে অফ ও অন সাইডে ড্রাইভ খেলা বেশ কঠিন। অফ ও লেগস্টাম্পের বাইরে জায়গা বেশি না পেলে সাইড শট খেলেও রান তোলা সহজ নয়।
এমন এক ধরনের উইকেটে সাকিব আর মিরাজের মাপা ও কোয়ালিটি স্পিনটাও অনেক বড় সম্পদ। তারা দুজন হয়ত পেসার মাশরাফি, মোস্তাফিজের তুলনায় উইকেট কম পেয়েছেন, কিন্তু শুরুতে কাজের কাজ করে দিয়েছেন। বোলিং শুরু করে প্রাথমিক ব্রেক থ্রু উপহার দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করার পাশাপাশি রান গতিও কমিয়ে রাখেন দুই স্পিনার সাকিব-মিরাজ। তাদের দুজনার উইকেট সোজা আর মাপা লাইন ও লেন্থের বোলিংয়ের মুখে ক্যারিবীয়রা প্রথম থেকেই চাপে ছিল।
উইকেট এমনিতেই স্লো, তারওপর সাকিব-মিরাজের স্লো স্পিনে ক্যারিবীয় টপ অর্ডার হাত খুলে ফ্রি স্ট্রোক খেলতে না পেরে অস্বচ্ছন্দ্যবোধ করতে থাকেন। শুরুতে বাংলাদেশ বোলারদের ওপর চড়াও হতে না পারা উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা সেই যে ব্যাকফুটে চলে যান, সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়নি।
এটা সত্য যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের মত অতটা সমস্যা না হলেও শেরে বাংলায় প্রথম ম্যাচের স্লো উইকেট কিন্তু বাংলাদেশের বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানেরও খুব সহায়ক নয়। তামিম, লিটন, সৌম্য ও সাকিব-সবাই ফ্রি স্ট্রোক খেলতে পছন্দ করেন। বল ভালো গতি ও সমান উচ্চতায় ব্যাটে আসলে তাদের শটস খেলা সহজ হয়। কিন্তু থেমে আসলে আর উঁচু নিচু হলে তাদেরও সমস্যা হয়।
অবশ্য আজকাল তামিম এ কন্ডিশনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে শুরু করেছেন। তেড়েফুড়ে শট খেলা বাদ দিয়ে তামিম এখন উইকেটের চরিত্র বুঝে, প্রতিপক্ষ বোলিং দেখে এবং খেলার চালচিত্র অনুযায়ী ব্যাট করার চেষ্টা করেন। তাতে বেশ সফলও। তাই তামিম, মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-তিন তিনজন ব্যাটসম্যান স্লো ট্র্যাকে দেখে, ধৈর্য্য ধরে বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য রাখেন। প্রথম ম্যাচেও মুশফিকুর রহিম (৫৫*) একমাত্র ফিফটি হাকিয়ে সে সত্যর জানান দিয়েছেন।
মোদ্দা কথা, প্রথম ম্যাচ যে ধরণের উইকেটে হয়েছে আগামীকালকের ম্যাচও যদি ঠিক ঐ ধরনের পিচেই হয়, তবে সেখানে বাংলাদেশ সন্দেহাতীতভাবেই ফেবারিট। তাই ভাবা হচ্ছে, হয়ত মঙ্গলবারই সিরিজ নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে টাইগারদের।
প্রথম ম্যাচ শেষে রোববার রাতের প্রেস মিটে সে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল টাইগার অধিনায়ক মাশরাফির কাছেও। তবে এমন আবেগ-উচ্ছ্বাসে কখনো গা না ভাসানো মাশরাফি কোন কিছুকেই গ্যারান্টেড ভাবেন না। তার সতর্ক-সাবধানী উচ্চারণ- ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফিরে আসার জন্য যথেষ্ট সামর্থ্য রাখে। ঘুরে দাঁড়ানোর শতভাগ সামর্থ্যও আছে ওদের।’
যা নিয়ে চিন্তা ছিল বেশি, প্রথশ ওয়ানডেতে সেই শিশির পড়েনি তেমন। যে কারণে স্পিনারদের বল গ্রিপ করায় সমস্যা হয়নি। বরং দ্বিতীয় সেশনে স্পিনারদের বল টার্নও করেছে বেশি। সে প্রসঙ্গ টেনে মাশরাফি বলেন, ‘কোনো কিছুকেই নিশ্চিতভাবে নিতে নেই। শিশির সেভাবে পড়েনি। বল সেকেন্ড হাফে টার্ন করছিল বেশ। ওরা যদি ২৫০-২৬০ করে ফেলতো, তাহলে ডিফরেন্ট বল গেম হওয়ার চান্স বেশি ছিল।’
মাশরাফি মনে করেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য রাখে। তাই পরের ম্যাচেও প্রথম ওয়ানডের মতোই খেলতে চান টাইগার দলপতি। সিলেটে তৃতীয় ওয়ানডের আগেই সিরিজ জেতা হয়ে যাবে, এমনটা ভাবতেও নারাজ তিনি।
নড়াইল এক্সপ্রেস বলেন, ‘সিলেটের চিন্তা এখনই করা ঠিক হবে না। কাল আমাদের প্রস্তুতি ঠিকভাবে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে আরেকটি নতুন দিন। আরেক ম্যাচ। কাজেই সবাইকে আবার নতুন ভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এবং মঙ্গলবারের ম্যাচটা যেন ঠিক অমন শতভাগ উজার করে খেলতে পারি, সেটাও নিশ্চিত করা জরুরী।’
এআরবি/এমএমআর/পিআর