যে পাঁচ কারণে নারী বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হবে বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:০৪ পিএম, ০৯ নভেম্বর ২০১৮

চলতি বছরে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। এশিয়া কাপ ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তানের মতো দলগুলোকে টপকে চ্যাম্পিয়ন হওয়া, আয়ারল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জেতা, নারী বিশ্ব টি-টোয়েন্টির বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো কৃতিত্ব দেখিয়েছেন সালমা-রুমানারা।

শনিবার ভোরে বছরের শেষ মিশন নারী বিশ্ব টি-টোয়েন্টির আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশের নারীরা। প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় ভোর ছয়টায়। নিজেদের প্রথম ম্যাচে নামার আগে টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের সম্ভাবনার ব্যাপারে বিস্তর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইসিসি।

যেখানে তারা জানিয়েছে পাঁচটি কারণে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে বাংলাদেশ। জাগোনিউজের পাঠকদের জন্য বাংলায় অনুবাদ করে দেয়া হলো সেটি:

বৈচিত্রপূর্ণ বোলিং আক্রমণ
পেস ও স্পিনের যুগলবন্দীতে সবসময়ই বোলিং আক্রমণটা বেশ শক্তিশালী বাংলাদেশ দলের। আইসিসি র‍্যাংকিংয়েও শীর্ষ দশে রয়েছেন লেগস্পিনার রুমানা আহমেদ (৭) ও বাঁহাতি স্পিনার নাহিদা আক্তার (৯)। এছাড়া অন্য দুই অফস্পিনার খাদিজা তুল কুবরা ও সালমা খাতুনের কিপটে বোলিং বরাবরই বাড়তি শক্তি জোগায় দলে।

এছাড়া নতুন বল হাতে দলের দুই পেসার জাহানারা আলম এবং পান্না ঘোষও প্রস্তুত আগুব ঝরাতে। চলতি বছর দুজনই দেখিয়েছেন ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব। দলের কোচ আঞ্জু জেইনের মতে স্পিন ও পেসের মিশেলে তার দলের বোলিং আক্রমণ বেশ বৈচিত্রপূর্ণ।

ব্যাটিংয়ে স্থিতিশীলতা
ব্যাটিং দিকেও খুব একটা পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের নারীরা। দলের দুই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান ফারজানা হক এবং শামীমা সুলতানা চলতি হাঁকিয়েছেন দুইটি করে হাফসেঞ্চুরি। দুজনেরই রয়েছে মেরে খেলার সামর্থ। এদের সাথে আয়েশা রহমান, সালমা খাতুন ও রুমানা আহমেদরা অবদান রাখায় নিজেদের ইতিহাসের ৮টি সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের সবকটিই এ বছরে করেছে বাংলাদেশ।

কোচ বলেন, ‘আমাদের দলের খেলায় অনেক পরিবর্তন এসেছে, আগের চেয়ে মেরে খেলারও সামর্থ বেড়েছে।’ ভারতীয় এ কোচ বাংলাদেশ নারী দলের ফিটনেসের উন্নতির ব্যাপারে কাজ করেছেন বিস্তর। যে কারণে বর্তমানে রানিং বিট্যুইন দ্য উইকেট ও বড় শট খেলার ধারাবাহিকতা বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশের।

রান তাড়ায় পারদর্শীতা
চলতি বছরে বাংলাদেশ দল জিতেছে ১৩টি ম্যাচে। এর মধ্যে ৯টি জয়ই এসেছে পরে ব্যাটিং করে অর্থাৎ লক্ষ্যের পেছনে ছুটে। রান তাড়া করার সময় ধৈর্য্য ও একাগ্রতার পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ। শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ম্যাচে ১৪২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে রেকর্ড গড়েছিলেন রুমানা-সালমারা।

এছাড়া এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচে ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে একদম শেষ বলে জিতে নিজেদের মানসিক দৃঢ়তারও পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ দল। কোচ আঞ্জু জেইন মনে করেন নিজেদের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া এবং পরে ব্যাটিং করার সুবিধাটা কাজে লাগানোর শিক্ষা যথাযথ পাওয়ার কারণেই রান তাড়াইয় পারদর্শীতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রস্তুতি
গত ১২ মাসে ভারতব্যতীত আর কেউই বাংলাদেশের চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেনি। এসময়ে তারা ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছে, যারা কি-না বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতেও খেলবে। এমনকি টুর্নামেন্ট শুরুর আগে গ্রেনাডায় এক সপ্তাহব্যাপী অনুশীলন ক্যাম্পে স্থানীয় ছেলেদের দলের বিপক্ষেও খেলেছে তারা।

বড় দলগুলোর বিপক্ষে খুব বেশি ম্যাচ হয়তো বাংলাদেশ জেতেনি। তবে এশিয়া কাপে দুইবার হারিয়েছে ভারতকে, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও এসেছে জয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় না পেলেও তাদের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে দিবে বলে মনে করেন দলের অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘যখন আপনি হারলেন তার মানে এই না যে সব হারিয়ে ফেললেন। আমরা হেরে গেলেও শিখতে পারি। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আমরা সব হারলেও সেটি আমাদের জন্য খুবই উপকারী ছিলো। কারণ আমরা ওখানে কঠিন কন্ডিশনে খেলেছি। আমরা জানতাম যে আমরা সেখানে ভালো খেলেছি। সেই সফর শেষে আমরা এশিয়া কাপ খেলেছি এবং চ্যাম্পিয়নও হয়েছি।’

নিচের সারির দলগুলোর বিপক্ষে আধিপত্য
বড় দলগুলোর বিপক্ষে খুব বেশি সাফল্য না থাকলেও নিচের সারির দলগুলোকে স্রেফ উড়িয়ে দেয়ার ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশের। এছাড়াও রান, উইকেট কিংবা বল বাকি থাকার হিসেবে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তিনটি জয়ই চলতি বছরে পেয়েছে বাংলাদেশের নারী দল।

এ জয়গুলোর ইতিবাচকতা বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে কাজে লাগবে বলে মনে করেন দলের কোচ আঞ্জু জেইন। তিনি বলেন, ‘নিজেদের সফলতাগুলোকে খেলোয়াড়রা ইতিবাচকভাবে নেয় এবং অনুপ্রেরণা হিসেবে মানে। চাপে ভেঙে না পড়ে দায়িত্ব নিয়ে কাজ শেষ করে। তাদের সাথে কাজ করা সহজ হয়েছে মূলত তাদের আত্মবিশ্বাস এবং ভালো করার তীব্র ইচ্ছার কারণেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি স্কিল বা সামর্থের দিক দিয়ে বড় দলগুলোর চেয়ে পিছিয়ে নেই আমরা। পুরো ব্যাপারটাই আসলে মানসিক। কোনো টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া এক জিনিস এবং ভালো খেলার লক্ষ্য নিয়ে খেলা আরেক জিনিস। আমরা এদিকটা নিয়েই কাজ করছি। আমরা এই বিশ্বাস নিয়েই নামবো যে যেকোনো দলকেই হারাতে পারি আমরা।’

এসএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।