ব্যাটিংয়ে শৃঙ্খলা কম ছিল : মাহমুদউল্লাহ

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৬:৩৮ পিএম, ০৬ নভেম্বর ২০১৮

২৬ রান আগেই যোগ হয়েছিল। আজ ও কাল শেষ দুই দিনে ১০ উইকেট হাতে থাকা অবস্থায় টাইগারদের দরকার ছিল ২৯৫ রানের। সময়টা ভালো যাচ্ছে না মোটেই। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের শেষ টেস্ট থেকে সেই যে রান খরা শুরু হয়েছে, আগের সাত ইনিংসে একবারের জন্যও ২০০ রান করা সম্ভব হয়নি।

সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ব্যাটিং ভাল হয়নি। ইনিংস গুঁড়িয়ে গেছে মাত্র ১৪৩ রানে। তারপরও সবার প্রত্যাশা ছিল ‘শনির দশা’ কাটিয়ে বৃহস্পতির নাগাল পাবে টাইগাররা। সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে আবার আলোয় ফিরবেন লিটন, ইমরুল, মুমিনুল, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, শান্ত ও আরিফুলরা।

কিন্তু হায়! সে আশায় গুড়ে বালি। আলোয় ফেরা বহু দূরে, উল্টো আরও অন্ধকারে তলিয়ে গেছে টাইগারদের ব্যাটিং। খাপছাড়া, লাগামহীন, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অপেশাদার ব্যাটিংয়ের নগ্ন প্রদর্শনী ঘটিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৯ রানে সবাই আউট বাংলাদেশের।

আগের দিন ১০.১ ওভারে বিনা উইকেটে ২৬। আর আজ ৬৩.১ ওভারে ১০ উইকেটের পতন। মানে চতুর্থ দিন দুই সেশনেরও কম সময়ে ৫৩ ওভারে ১০ জন সাজঘরে। উইকেট খেলার অযোগ্য হয়ে পড়লে কথা ছিল না। এমন নয় যে বল পিচে পড়ে কখনো বিপজ্জনকভাবে বুক, মুখ, মাথা সমান উচ্চতায় লাফিয়ে উঠছিল। আবার কোন কোন বল নিচু হয়ে প্রায় গড়িয়ে যাচ্ছিল। ম্যুভমেন্ট আর টার্ন- দুই’ই গিয়েছিল বেড়ে। তাই চাতারা, জারভিস, সিকান্দার রাজা আর মাভুতাও ভয়ঙ্কর বোলার বনে গিয়েছিলেন। 

কিন্তু তা তো হয়নি। হ্যাঁ চতুর্থ দিনের পিচ, কোথাও না কোথাও ভাঙবেই, ভেঙেছিল। বোলারদের বুটের স্পাইকে পপিং ক্রিজ ও তার আশপাশে ক্ষতের সৃষ্টিও হয়েছিল। কিছু বল বাড়তি টার্ন করেছে। আবার কোন কোন হঠাৎ লাফিয়েও উঠেছে। কিন্তু পিচের অবস্থা এমন জটিল ও খারাপ হয়নি যে, দুই সেশনেরও কম সময়ে ১০ উইকেট পতন ঘটবে।

সেটা হয়েছে টাইগারদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাট চালনায়। উইকেটে পড়ে থাকার ধৈর্য্য দেখাতে পারেননি কেউ। লম্বা সময় উইকেটে থাকতে হলে যে অত্যাবশ্যকীয় গুণ ও উপাদান লাগে, তার কিছুই ছিল না কারো মধ্যে। ধৈর্য্য ধরে বলের মেধা-গুণ বিচার করে ভাল বলকে সমীহ দেখানো আর আলগা ডেলিভারি পেলেই তাকে শায়েস্তা করতে হবে- এই মন্ত্রে দীক্ষিত মনে হয়নি কাউকে।

বরং বরাবরের সেই শটস খেলার তাগিদ, আকাঙ্ক্ষাই ছিল প্রবল। কিছুক্ষণ পরপর শটস খেলার ইচ্ছেটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে সবার। আর তাতেই সর্বনাশ নেমে এসেছে। উইকেটের টার্ন-বাউন্স না ঠাউরে পুল খেলতে গিয়ে লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে লিটন দাস।  

সিকান্দার রাজার অফস্পিনে সুইপ করার চরম খেসারত দিয়েছেন ইমরুল ও মাহমুদউল্লাহ। মুমিনুল বোল্ড ফাস্ট বোলার কাইল জারভিসের বলে হাফ শট খেলতে গিয়ে। বাঁ-হাতি নাজমুল হোসেন শান্ত লাঞ্চের ঠিক আগে চটকদার স্ট্রোক খেলতে গিয়ে কভারে ক্যাচ। ।

বিপদে ও প্রয়োজনে বার বার শক্ত হাতে হাল ধরা মুশফিকুর রহীমও আজ প্রয়োজনে হাল ধরার বদলে ব্যর্থ। লেগস্পিনার ব্রেন্ডন মাভুতার বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে সেই আত্মঘাতি কাজটিই করলেন মুশফিক।

টেস্ট জেতার মিশনে কোথায় ব্যাটিং হবে পরিপাটি। সাজানো বাগানের মত। যার পরতে পরতে থাকবে সুশৃঙ্খলতা। অপ্রয়োজনীয় ও ঝুকিপূর্ণ শট খেলা থেকে বিরত থাকবেন সবাই। তার বদলে এক ঝাঁক খাপছাড়া ও বাজে আউট। এমন অনুজ্জ্বল ও শ্রী-হীন ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা কি?

কি কারণে ব্যাটিংয়ের এ হতচ্ছিরি অবস্থা? সবাই একযোগে ব্যর্থতার মিছিলে? ভক্ত-সমর্থকদের মনে ঘুরে ফিরে এ প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনেও উঠলো এ প্রশ্ন।

অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও খানিক বিব্রত। কথা শুনে ও শরীরি অভিব্যক্তি দেখে মনে হচ্ছিলো তার কাছেও সত্যিকার উত্তর নেই। তবে অনেক কথার ভীড়ে তিনিও বলে দিলেন, টেস্ট ব্যাটিংটাটা যেমন পরিশীলিত, সুবিন্যস্ত ও সুশৃঙ্খল হওয়া উচিৎ, তাদের ব্যাটিং ততটা পরিপাটি ছিলনা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ভাষায় ডিসিপ্লিন কম ছিল। 

তাই তো মুখে এমন সংলাপ, ‘এমন ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা দেয়া আসলে খুবই কঠিন। একটা জিনিস বলতে পারি, টেস্ট ক্রিকেট খেলতে যেই ধরনের ডিসিপ্লিন থাকা উচিত, আমার মনে হয় না আমরা সেই ডিসিপ্লিন দেখাতে পেরেছি। কারণ উইকেট বেশ ভাল ছিল, ইভেন আজকেও উইকেট ভাল ছিল। হয়তো আজকেও দুই একটি বল টার্ন করেছে। এছাড়া আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে। আমার মনে হয় ডিসিপ্লিনের ইস্যুটা আমাদের আরেকটু ভালো করে দেখতে হবে। নিজেদের ওপর বিশ্বাসটা আরেকটু বাড়াতে হবে। এই ইস্যুগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। কারণ বেশ কয়েকটি টেস্ট আমাদের ব্যাটিং খুব বাজে হচ্ছে। আমাদের এইসব নিয়ে ভাবতে হবে, একটা উপায় বের করতে হবে।’ 

এআরবি/এসএএস/আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।