রান তাড়া করে যে ম্যাচগুলো জিতেছে বাংলাদেশ
নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত ১০টি ম্যাচে জয় লাভ করতে পেরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এগারোতম জয় থেকে আর মাত্র ২৯৫ রান দূরে টাইগাররা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলতি সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ৩২১ রানের লক্ষ্যে বিনা উইকেটে ২৬ রান করেছে বাংলাদেশ।
শেষের দুই দিনে পুরো দশ উইকেট হাতে রেখে বাকি থাকা ২৯৫ রান করতে পারলেই আসবে নিজেদের এগারোতম জয় এবং রান তাড়া করতে নেমে চতুর্থ জয়। এখনো পর্যন্ত মোট দশ ম্যাচ জিতলেও রান তাড়া করে জেতা ম্যাচের সংখ্যা তিনটি। সে ম্যাচ তিনটি হলো ২০০৯ সালে সেন্ট জর্জেসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ (২১৭/৭), ২০১৪ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০১ (১০১/৭) ও ২০১৭ সালে কলোম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৯১ (১৯১/৬)।
চলুন দেখে নেয়া যাক এই তিন ম্যাচের চাল চিত্র:
সেন্ট জর্জেস টেস্ট (২০০৯ সাল)
মাশরাফি বিন মর্তুজার ইনজুরির কারণে সে ম্যাচের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব পান সাকিব আল হাসান। টসে জিতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন আগে বোলিং করার। তখনই বুঝা গিয়েছিল জিততে হলে চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করতে হবে বাংলাদেশকে। এনামুল হক জুনিয়র, সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩টি করে উইকেট নিলে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৩৭ রানে অলআউট হয় স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
কেমার রোচের বোলিং তোপে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৩২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশও। পাঁচ রানের লিড নিয়ে ব্যাট করতে নেমে আবারও বাংলাদেশ স্পিন ঘূর্ণিতে নাকাল হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার সাকিব নেন ৫টি, ৩টি নেন এনামুল জুনিয়র। ২০৯ রানে গুটিয়ে যায় ক্যারিবীয়রা। বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১৫ রানের।
রান তাড়া করতে খুব বেশি সময় নেয়াটা মানতে পারছিলেন না সাকিব আল হাসান। সাথে রকিবুল হাসান যোগ্য সঙ্গী দিলে মাত্র ৫৪.৪ ওভার ব্যাটিং করে চতুর্থ দিন শেষ বিকেলেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। রকিবুল করেন ৬৫ রান। মারমুখী সাকিব ১৩টি চার ও ১ ছক্কার মারে মাত্র ৯৭ বলে খেলেন ৯৬ রানের অপরাজিত ইনিংস। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের কারণে নিজের অধিনায়কত্বের প্রথম ম্যাচ জেতার পাশাপাশি ম্যাচসেরাও নির্বাচিত হন সাকিব।
মিরপুর টেস্ট (২০১৪ সাল)
সীমিত ওভারের ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব হারানোর পরে মুশফিকুর রহিমের অধীনে বাংলাদেশ দলের প্রথম টেস্ট। ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় জিম্বাবুয়ে। সাকিব আল হাসান ৬ উইকেট নিলে তারা গুটিয়ে যায় ২৪০ রানে। মিরপুরের স্পিনিং উইকেটে বাংলাদেশ দলের প্রথম ইনিংসও শেষ হয়ে যায় ২৫৪ রানেই। দলের পক্ষে হাফসেঞ্চুরি করে মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং মুশফিকুর রহিম।
১৪ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুলের মায়াবী ঘূর্ণির কবলে পড়ে সফরকারীরা। এক এক করে আট জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরান তাইজুল। মাত্র ৩৯ রান খরচায় ৮ উইকেট নিয়ে দেশের ইতিহাসের সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ড গড়েন তাইজুল। জিম্বাবুয়ে গুটিয়ে যায় ১১৪ রানে। বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১০১ রানের।
ছোট লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। দলীয় রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরে যান তামিম ইকবাল, শামসুর রহমান এবং মুমিনুল হক। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২৮ ও সাকিব আল হাসান ১৫ রান করে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন। শেষ দিকে শাহাদাত হোসেন রাজীব ও তাইজুল ইসলামকে সাথে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন মুশফিক। তিন উইকেটের ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ।
কলম্বো টেস্ট (২০১৭ সাল)
বাংলাদেশের ইতিহাসের শততম টেস্ট উপলক্ষ্যে বর্ণিল আয়োজন করে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট বোর্ড। ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাট করে স্বাগতিকরাই। দীনেশ চান্দিমালের ১৩৮ রানের ইনিংসের পরেও তারা থেমে যায় ৩৩৮ রানে। ৩টি উইকেট নেন তরুণ অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ।
জবাবে বাংলাদেশের পক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকান সাকিব আল হাসান, ৭৫ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন অভিষিক্ত মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ফিফটি করেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ৪৬৭ রানে। প্রথম ইনিংসে ১২৯ রানে পিছিয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কা।
নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন লঙ্কান ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে, শেষ দিকে গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন দুই বোলার দিলরুয়ান পেরেরা এবং সুরাঙ্গা লাকমল। শ্রীলঙ্কা সে ইনিংসে অলআউট হয় ২১৯ রানে। বাংলাদেশের সামনে ইতিহাস গড়তে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৯১ রানের।
রান তাড়া করতে নেমে তামিম ইকবালের ৮০ ও সাব্বির রহমানের ৪১ রানের ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ দল। যা এখনো পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে টাইগারদের দশম ও শেষ জয়।
নিজেদের এগারোতম জয়টি পেতে এবার জিম্বাবুয়েকে হারাতে হবে ৩২১ রান তাড়া করে।
এসএএস/এমএস