সেই জিম্বাবুয়ে, এই জিম্বাবুয়ে

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:১৬ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০১৮

সময়কাল ২০০৫ সালের ৩১ জানুয়ারির বিকেল, ভেন্যু ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। এখন যিনি জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক, সেই হ্যামিল্টন মাসাকাদজার জেন্টল মিডিয়াম পেস বলে বাউন্ডারি হাঁকালেন বাংলাদেশের তখনকার অধিনায়ক হাবিবুল বাশার।

বাশারের শট মাটি কামড়ে সীমানার ওপারে যাবার সঙ্গে সঙ্গে ৮ উইকেটের অনায়াস জয় (১০২ বল আগে ১৯৮ রান টপকে) নিশ্চিত হলো টাইগারদের। লাল সবুজ পতাকা হাতে হৈ হৈ করতে করতে আনন্দের আতিশ্যয্যে মাঠে ঢুকে পড়লো পুরো বাংলাদেশ দল। গ্যালারিতে বয়ে গেল আনন্দের বন্যা। প্রায় ২৫-৩০ হাজার ভক্ত-সমর্থকের ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে কেঁপে উঠলো গোটা মাঠ। উচ্ছাস-উল্লাসে ফেটে পড়লো বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। একটা উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হলো।

ঐ উৎসব-আনন্দ জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ বিজয়ের। ঐ উচ্ছাস-উল্লাস কোন টেস্ট খেলিয়ে দেশের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের। তারপর কেটে গেছে ১৩ টি বছর। এক যুগের বেশী সময়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দেশে ও বিদেশে গুনে গুনে ১১টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। যাতে টাইগারদের একচেটিয়া আধিপত্য ও সাফল্য। তিনটি মাত্র সিরিজ ছাড়া (সবকটাই জিম্বাবুয়ের মাটিতে; ২০০৬, ২০১১ ও ২০১৩ সালে) বাকি আটটাতেই জিতেছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বড় কথা হলো গত ১৩ বছরে দেশের মাটিতে আর কখনই জিম্বাবুয়ের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ।

এ বছর জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের সাথে তিন জাতি টুর্নামেন্ট খেললেও দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ানদের বিপক্ষে টাইগাররা শেষ বার ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে ২০১৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে। ঐ সিরিজেও টাইগারদের জয় জয়কার। তাদের শৌর্য-বীর্যর সামনে দাঁড়াতেই পারেনি জিম্বাবুয়ে। ৫-০‘তে হোয়াইটওয়াশ হয়ে দেশে ফেরে এল্টন চিগুম্বুরার দল।

তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মাশরাফি ও তাইজুল-জুবায়ের লিখনের নৈপুণ্যের দ্যুতির সামনে মাসাকাদজা, সিকান্দার রাজা, সিবান্দা, ব্রেন্ডন টেলর ও চিগুম্বুরারা ছিলেন যারপরনাই ম্লান। টাইগারদের উজ্জীবিত ও প্রত্যয়ী নৈপুণ্যের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ানরা এতটুকু প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারায় সিরিজটি ছিল চরম একপেশে।

তারপরও টাইগাররা ভক্তরা ঠিক প্রিয় দলকে অকুণ্ঠ সমর্থন জোগাতে মাঠে গেছেন। ঢাকার মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়াম ও বন্দর নগরীর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ঐ সিরিজের সব ম্যাচেই ছিল দর্শকের ঢল। কিন্তু সময়ের স্রোতে বদলে গেছে দৃশ্যপট। পাল্টেছে প্রেক্ষাপট ও পরিবেশ-পরিস্থিতি ।

তিন বছর আগেও জিম্বাবুয়ের সাথে সিরিজ নিয়ে কত হৈ চৈ হতো, সাড়া পড়ে যেত। দর্শক, সমর্থক ও ভক্তদের মাঝে রাজ্যের উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হতো। খেলা দেখা তথা টিকিট কেনার ধুম পড়ে যেত। কিন্তু এবার তার ছিটেফোঁটাও নেই। কেমন যেন ‘ম্যাড়ম্যাড়ে’ এক সিরিজ। দর্শক উৎসাহ-আগ্রহে ভাটা। গতকাল (শুক্রবার) বিকেএসপি মাঠে বিসিবি একাদশ আর জিম্বাবুয়ের প্রস্তুতি ম্যাচ দেখে বোঝাই যায়নি ৪৮ ঘন্টা পর সিরিজ শুরু ।

আজ (শনিবার) সকালে শেরে বাংলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সরব উপস্থিতি ও নিরাপত্তা মহরার অংশটুকু বাদ দিলে শনিবার সারা দিনে একবারও মনে হয়নি রাত পোহালেই এই মাঠে কোন সিরিজ শুরু হবে। হঠাৎ কেন এই হাওয়া পাল্টে গেল? কেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ নিয়ে আর আগের সেই উৎসাহ-উদ্দীপনা ও হৈ চৈ শোরগোল নেই?

সেটা কি জিম্বাবুয়ে এখন আর বাংলাদেশের সাথে পারে না আর টাইগাররা ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের মত দলকে হারাচ্ছে তাই? সন্দেহাতীতভাবে তাই।

মহাদেশীয় বা বিশ্ব পর্যায়ের কোন আসরে শেষ হাসি হাসতে না পারলেও বাংলাদেশ এখন ওয়ানডেতে ভাল দলের তকমা গায়ে এঁটে ফেলেছে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছায়। এইতো সেদিন পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা আর আফগানিস্তানকে পিছনে ফেলে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলে ভারতের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছে। অল্পের জন্য শেষ হাসি হাসতে না পারলেও সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে, মনও কেড়েছে।

সেখানে জিম্বাবুয়ে একদম তলানিতে। শুধু বাংলাদেশের বিপক্ষেই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সাফল্যের পাল্লাটা খুবই হালকা। ২০১৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে বাংলাদেশের কাছে ৫-০‘তে হোয়াইটওয়াশ হবার পর থেকে এই চার বছরে ১৯ টি সিরিজে হার ও ব্যর্থতাই সঙ্গী হয়ে আছে জিম্বাবুইয়ানদের।

২০১৫ সালের অক্টোবরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে (২-১) আর ২০১৭ সালের শ্রীলঙ্কার মাটিতে (৩-২) দুটি সিরিজ জয় আর গত বছর স্কটল্যান্ডের সাথে ১-১‘এ সিরিজ ড্র করা ছাড়া শেষ চার বছরে সব সিরিজ হেরেছে জিম্বাবুয়ে। এইতো গত জুলাইতে দেশের মাটিতে পাকিস্তানের কাছে ৫-০ আর বাংলাদেশে আসার আগে প্রতিবেশি দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৩-০‘তে হোয়াইট ওয়াশ হয়েছে মাসাকাদজার দল।

বাংলাদেশে এসেও সেই জরাজীর্ণ জিম্বাবুয়ে। বিসিবি একাদশের দূর্বল এবং আনকোরা বোলিংয়ের সামনেও ১৭৮ রানে অলআউট হয়ে ৮ উইকেটে হেরে গেছে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের তিন-চার নম্বর দলেও যার জায়গা হবেনা- সেই এবাদতের আগুন ঝড়ানো পেস বোলিংয়েই কুপোকাৎ জিম্বাবুইয়ান টপ ও মিডল অর্ডার। এমন এক কমজোরি দলের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে উৎসাহ-আগ্রহ কম থাকাই স্বাভাবিক।

এআরবি/এসএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।