পরিবার নিয়ে পুজোর আনন্দ করতে না পারার আফসোস কাটল সেঞ্চুরিতে

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:০৩ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০১৮

সেই ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর খেলার কারণে প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পুজোর ছুটি মিলছিল না। এবার আশায় ছিলেন সাতক্ষীরায় পরিবারের সাথে নবমীর রাত আর বিজয় দশমী উদযাপন করবেন সৌম্য সরকার। যেহেতু জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন, তাই এমন ভাবার যথেষ্ট কারণও ছিল। সুযোগও ছিল।

কারণ জাতীয় লিগের শেষ রাউন্ডে নিজ বিভাগীয় শহর খুলনার খেলা ছিল খুলনাতেই। সেখান থেকে বড়জোর ঘন্টা খানেকের পথ তার বাড়ি। তাই সৌম্য ভেবে বসেছিলেন-যাক, এবার পুজোটা বাড়িতে আপনজনের সাথেই করবো!

কিন্তু অষ্টমীর রাতে সৌম্য জানলেন, তা আর হচ্ছে না। খুলনা থেকে সাতক্ষীরায় গিয়ে বাবা-মা ভাই বোনদের সাথে আর পুজোর আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠা হবে না। তার বদলে বিসিবি একাদশের হয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে হবে। তাও খুলনায় নয়। সেই ঢাকার অদূরে বিকেএসপিতে।

কাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুরের বিপক্ষে ম্যাচ শেষেই যশোর বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে ছুটে যাওয়া। শেষ ফ্লাইট ধরে ঢাকায় পৌঁছে রাতটুকু বিশ্রাম নিয়ে আজ কাকডাকা ভোরে টিম বাসে চেপে বিকেএসপি চলে আসা। আর তারপর মাঠে নেমেই দল জেতানো শতরান উপহার দিয়ে প্রাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসা।

ওপরের কথাগুলো জেনে ও পড়ে সৌম্যর চারদিনের ম্যাচ খেলে খুলনা থেকে বিকেএসপি এসে খেলাটা খালি চোখে সহজ মনে হলেও বাস্তবে তা নয়। বেশ কঠিন। শারীরিক ধকল গেছে প্রচুর। পুজোয় পরিবারের পাশে থাকতে না পারায় মনের প্রফুল্লতাও থাকার কথা নয়। তারওপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৫ জনের ওয়ানডে দলে জায়গা হয়নি।

প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের হয়ে খেলা এবং নেতৃত্ব দেয়া-সেটাও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। একটা অন্যরকম চাপ। ভালো খেলতে না পারলে আগামীতে ফেরার পথ হবে আরও দূর্গম।

মোদ্দা কথা, রাজ্যের প্রতিবন্ধকতা, বাধা বিপত্তি নিয়ে মাঠে নামা সৌম্যর। কিন্তু জায়গামত সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে অসাধারণ সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে দল জিতিয়ে হাসি মুখে মাঠ ছেড়েছেন। এ যেন নিজের সামর্থ্যের প্রমাণটা নতুন করে দেয়া। 'আমি হারিয়ে যাইনি, এখনো পারি। সামর্থ্যটা আগের মতই আছে।'- এই ভেবে মনে খুশির ফলগুধারা বয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। আনন্দে উদ্বেলিত হবারই কথা। কিন্তু সৌম্যকে দেখে মোটেই তা মনে হলো না। চোখ-মুখে কোনই বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই। কথা বার্তা শুনে মনে হলো, এই ম্যাচকে কোনোরকম চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেননি। ভাবটা এমন ছিল, নির্বাচকরা ডেকেছেন, ঠিক আছে খেলবো। তাই বলে এ ম্যাচ নিয়ে বেশি চিন্তা-ভাবনার কিছু নেই।

খেলা শেষে মুখ ফুটে তেমনটাই বললেন সৌম্য, ‘বিকেএসপির এই ম্যাচ মানে এখানে ভালো করলে আমি রিলিফ বা নির্ভার হবো, মনে স্বস্তি ফিরে আসবে- ঐ রকম কোনো চিন্তা করিনি। আমি খেলছিলাম জাতীয় লিগে। সেখান থেকে এসে এখানে খেলা, তাও আবার ৫০ ওভারের। পুরোই ভিন্ন বাতাবরণ, প্রেক্ষাপট ও পরিবেশ। চেষ্টা ছিল উইকেটে থাকার। দেখতে চেয়েছিলাম কতক্ষণ উইকেটে থাকতে পারি। আজকে সুযোগই তেমন ছিল। লক্ষ্য খুব একটা বড় ছিল না। সেই চেষ্টাই করেছি, উইকেটে কতক্ষণ থাকতে পারি।’

সৌম্য মানছেন, চার দিনের ম্যাচ খেলে রাতে খুলনা থেকে ঢাকা ফিরে আবার ভোরে বিকেএসপি এসে খেলাটা শারীরিক দিক থেকে কঠিন ছিল। এ নিয়ে বাঁহাতি ওপেনার বলেন, ‘হ্যাঁ, শারীরিক দিক থেকে একটু কঠিন ছিল। মানসিক দিক থেকে অন্যভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। খেলতেই যেহেতু হবে, ওই ভাবে না ভেবে রাতের মধ্যে যতটুকু সম্ভব রিকভারি করে খেলা যায়। সকাল বেলায়ও একটা জার্নি ছিল। সে সব মাথায় না নিয়ে চেষ্টা করেছি যতটা স্বাভাবিক খেলা খেলা যায়। যতক্ষণ সুস্থ থাকবো বা শরীর পারমিট করবে প্রপার ক্রিকেট খেলবো।’

জাতীয় লিগে রানে ফিরেছেন। সেঞ্চুরি করেছেন। মানে ছন্দে আছেন। এটা কতটা স্বস্তির? সৌম্যর জবাব, ‘ছন্দে আছি, এমন না। রান করলে তো অবশ্যই সবার ভালো লাগে। তেমন কোনো চিন্তা করিনি। চেষ্টা করছি নিজেকে খুশি রাখার। অবশ্যই ভালো খেললে ভালো লাগে। চেষ্টা করেছি বেশ সময় ক্রিজে থেকে ব্যাটিং করার। একটা সময় চিন্তা ছিল যে, বাইরে ছিলাম, দলে ফিরতে আমাকে ভালো করতে হবে। এখন চেষ্টা করি, তেমন কোনো চিন্তা না করে নিজের খেলাটা খেলতে।’

সেঞ্চুরির আনন্দটা কেমন উপভোগ করছেন? সৌম্যর হাসিমুখের জবাব, ‘সেঞ্চুরি তো অবশ্যই স্পেশাল। কিছু একটা ত্যাগ করে কিছু একটা পাওয়া তো অবশ্যই স্পেশাল। প্রথমে তো এই খেলা আছে জানতাম না। খুলনাতেই ছিলাম, পরিকল্পনা ছিল বাড়িতে যাব। হঠাৎ করে যখন বলা হল, খেলতে হবে। প্রথমে একটু খারাপ লেগেছিল। অনেক দিন পর একটা ছুটি পেয়েছিলাম, সেটাও মিস। আবার চিন্তা করলাম, যেহেতু খেলতেই হবে এসব চিন্তা না করাই ভালো। মনোযোগ দিয়ে খেলাই ভালো। সেই চেষ্টাই করেছি।’

এআরবি/এমএমআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।