সাকিবের হাতের ইনজুরি নিয়ে যা বললেন পাপন

ক্রীড়া প্রতিবেদক ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৩৮ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০১৮

আঙুলের চিকিৎসার জন্য অস্ট্রেলিয়ার যাওয়ার আগে টিভি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সাকিব আল হাসান নিজেই বলেছিলেন, ‘আমার আঙুল আর কখনও শতভাগ ঠিক হবে না।’ এই কথা শোনার পর শুরু হয় নতুন বিতর্ক। সাকিব তো এশিয়া কাপ না খেলে আঙুলে অস্ত্রোপচারই করতে চেয়েছেন। কেন তাকে জোর করে খেলানো হলো। তাহলে এখন যদি তার কিছু হয়ে যায়, এর দায়ভার কে নেভে?

এমন নানা গুঞ্জন ডালপালা মেলতে শুরু করার পর সাকিবের ইনজুরি, তার অস্ত্রোপচার করা না করা নিয়ে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি এ নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য দিয়েছেন মিডিয়ার সামনে। সাকিবের ইনজুরি সম্পর্কে তার বলা কথাগুলোই হুবহু তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য।

‘আমাকে ও (সাকিব) বলেছে, আঙুলের জন্য আমার এই সমস্যা। আমি বলেছি, তুমি ডাক্তারের সাথে দেখা কর। এমন যদি হয়, এখন না করলেও চলবে। তুমি এটা এরপর কর। তারপর তার সঙ্গে মক্কা এবং মদীনায়ও দেখা হয়েছে। আমি বলেছি, এ ব্যাপারে (এশিয়া কাপে খেলা কিংবা আঙুলে অস্ত্রোপচার) তোমার সিদ্ধান্ত। ও বলল, ফিজিও বলে দিয়েছে অসুবিধা নাই। খেললে খারাপ হতে পারে কি না। আমি বলেছি, না। এটাই শেষ কথা হয়েছে। আমি হজ করে আসছি, চার দিন পর আমি মেইল দেখলাম, সাকিব টিমের সাথে (ঢাকায়) জয়েন করবে না। ওখান (যুক্তরাষ্ট্র) থেকে সে এশিয়া কাপ খেলার জন্য আসছে। তখন আমরা জানলাম সে খেলছে।’

পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচের আগে এবং সাকিবের ফিরে আসার পরের ঘটনা সম্পর্কে পাপন বলেন, ‘যখন নাকি পাকিস্তানের সাথে খেলার আগের দিন আমি চলে আসি মাঠ থেকে। হোটেলে দেখি সাকিব, আরও কয়েকজন বসা। ওখানে হাতটা দেখেছি, দেখি ফুলে গেছে। কথায় কথায় বলছে, ও খেলতে পারবে না। কয়েকজন পাশ থেকে বলল, এটা সেমিফাইনাল (সুপার ফোরের শেষ ম্যাচ), খেলতে হবে। আমি তখন বলেছি, তুমি এখন এখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাও। ওর সাথে ওখানটায় আমার শেষ কথা হলো। আমি জানতাম ও যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে। ও ভয় পাচ্ছে, পুঁজ বের হবে। আমি বলেছি, তোমার এই অবস্থা থেকে থাকে, এটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এরপর ওর সাথে কথা বললাম, ও বলল ভালো আছে। ওকে হাসপাতালে দেখতে গেলাম। ওষুধের কী চেঞ্জ হবে, এসব নিয়েও কথা বললাম। আমি তো এই লাইনে অনেক বছর থেকে আছি। তখন আমাকে বলল, আমি (সাকিব) আগে লন্ডন হয়ে আমেরিকায় যাব। পরদিন তাকে রিলিজ করবে। রাতে গিয়ে আমাকে বলল আমি বাসায় চলে আসছি।’

কোথায় হাতের চিকিৎসা করানো হবে সাকিবের? এ নিয়ে পাপন বলেন, ‘হাসপাতালে কথা হয়েছিল ও যাবে আগে লন্ডন। এরপর ঠিক করবে ও ওখানে করবে না আমেরিকায় করবে। এরপর আমি ইস্তাম্বুলে গিয়ে শুনলাম ও অস্ট্রেলিয়া গেছে। কাল ওর সাথে কথা হয়েছে। বলল, আজকে (মঙ্গলবার) রিপোর্ট পাবে।’

বিসিবি প্রধানের কাছেও বিরাট প্রশ্ন, সাকিবের হাতের এমন অবস্থা হলো কি করে? তিনি বলেন, ‘ও খেলতে গিয়ে যদি ব্যথা পেত তাহলে বুঝতাম। কিন্তু এ রকম হলো কী করে? হঠাৎ করে হাতে এমন পুঁজ হলো কী করে? এটা আমাদের কাছে বিরাট প্রশ্ন। ওকে, আমাকে যেটা বললাম তিন মাস রেস্ট। অপারেশনের কথা জানতে চাইলাম, আমাকে সবাই বলছে অপারেশন করে লাভ নাই। আমাকেও ও (সাকিব) বলল, অপারেশন করে লাভ নেই, লাগবে না। এখনো ওই জায়গায় আছে। এখনও ইনফেকশন কন্ট্রোলে আছে। এটা সাকিবের কথা, ডাক্তারের সাথে কথা বলিনি। এর মধ্যে আমি দেবাশিষকে (বিসিবির ডাক্তার) ফোন করি। আমরা সবাই এটা নিয়ে বেশ অবাক। এক দিনের মধ্যে এত পুঁজ! এত সিরিয়াস হলে কী করে। ওদের সাথে কথা বলে বুঝলাম, ইনফেকশন ওদের পক্ষে বোঝা কঠিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ইনজেকশন দিয়েছে, এখন ওই ইনজেকশনের জন্য হলো কি না জানি না। আগে থেকে একটু থাকলে স্টেরয়ডের জন্য বাড়তে পারে; কিন্তু সেটাও বলা যাচ্ছে না। ও কমপ্লেইন করে নাই। আসল পরিস্থিতিটা আমরা জানি না, জানার চেষ্টা করছি।’

পাপন বলছেন, সাকিবের সার্জারি লাগবে কি-না, সেটাই জানতেন না। তিনি বলেন, ‘আমি তো আপনাকে বলেছি। আপনারা প্রথমত বলতে পারেন, এশিয়া কাপের পরে সার্জারি কেন- এমন বললাম। আমি ওইদিন বললাম, এটা প্রথম শুনেছি। ওর সার্জারি লাগবে সেটাই তো জানি না। সমস্যা তো থাকবে। আমাকে ডাক্তাররা বলছে, ৭০ শতাংশ থাকলেই হবে। এটা নিয়ে খেলতে পারবে। আর সার্জারি করলে আগের অবস্থা হবে, এমন গ্যারান্টি নেই। এটার কথা কেউ বলেই নাই। যদি বলত, আপনারা আমাকে বলেন, এর আগে আমেরিকায় এক দেড় মাস ছিল, বসে ছিল। তখনই তো করতে পারত।’

সাকিব নাকি নিজেই বিসিবি সভাপতিকে বলেছিলেন, এশিয়া কাপ খেলতে পারবে। সেটাই পাপন বললেন মিডিয়াকে। তিনি বলেন, ‘আমাকে সে মক্কা-মদীনাতে বলেছে, ফিজিও বলেছে- এটা (এশিয়া কাপ) খেললে এটা বাড়ার কোনো সুযোগ নাই। কোনো অসুবিধা নাই। সে খেলতে পারে। তারপরও বলেছি, একজন ডাক্তার দেখাও। আমার ধারণা ছিল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড বা যুক্তরাষ্ট্রে করতে পারে; কিন্তু আমাদের ধারণা ছিল, সার্জারি কোনো ডাক্তার করতেই বলেছে এমন নয়। এই জিনিস ছিল সাকিব, ফিজিও ও ডাক্তারের ওপর। সাকিব এশিয়া কাপের আগেই করতে চায়, সার্জারির আগে। আমি বলেছি, এশিয়া কাপে খেলা গেলে সে এর পরে করুক। আমার কথা হচ্ছে, পারলে খেলুক। অনেকেই ভাবছে, কেন বললাম। একটা কথা, সবাইকে বাদ দিয়ে রেখে দিতে পারি। কিন্তু খেলতে গেলে ব্যথা পেতে পারে। ডাক্তারের কাছ থেকে কিছু জানার আগ পর্যন্ত কিছু বলা যায় না। লাস্ট তাকে বলেছি, ডাক্তার দেখাও।’

পাপন বলছেন, তিনি শুধু সাকিবের কথা শুনেছেন। ডাক্তারের কথা শোনেননি। তিনি বলেন, ‘আমি এই প্রশ্নটা করেছি, আমি শুধু সাকিবের কথা শুনেছি। ফিজিওর সাথে কথা হয়নি। একটা জিনিস আমাকে বলা হয়ছে, হাতের ইনফেকশন এভাবে বোঝার উপায় নাই। যখন নাকি ইনজেকশন দেয়, তখন ইনফেকশন কি না বলার উপায় নেই। আমাদের যে কোনো খেলার ব্যাপারে চিকিৎসা-সংক্রান্ত কোনো ব্যাপার থাকে, তাহলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। সাকিব আমাদের সবচেয়ে মূল খেলোয়াড়দের একজন। তিনটি খেলোয়াড়ের বিকল্প নাই, তামিম, সাকিব এবং অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির বিকল্প নাই। সবাই তো তামিম, সাকিব ও মাশরাফির অভাব পূরণ করতে পারবে না। ওর জন্য কোনো ক্ষতি হোক সেটা কেউ চায় না। ও আমাদের সেরা সম্পদ।’

বিসিবি সভাপতির ধারণা, সাকিবের এখনও অপারেশন লাগবে না। যদি করায় তো সেটা তার নিজের ইচ্ছা। পাপন বলেন, ‘এখন ইনফেকশন ঔষধ দিলে ভালো হয়ে যায়, অপারেশন আর লাগবে না সেটা আমার ধারণা। ও নিজের সন্তুষ্টির জন্য অপারেশন করাতে চাইলে সমস্যা নাই। বাইরে ডাক্তার যদি বলে, ও ভালো আছে, ও খেলতে পারবে। নিদাহাস ট্রফির পর ব্যাংকক অস্ট্রেলিয়ায় গেল, ওর পছন্দমতো। এরপর আইপিএলের জন্য যখন পাসপোর্ট জমা দিল, তখনই বলতে পারল, খেলতে পারবে। যদি সব ঠিক থাকে, অপারেশন লাগবে না। ব্যথা থাকলেও জোর করে খেলাব, এই প্রশ্নই ওঠে না। সাকিব ভালো হয়ে যাবে, খুব ভালোভাবে উন্নতি করছে। আমরা আরও চেষ্টা করছি, আসলে কী কারণে এমন হলো। আমার ধারণা, দুই তিন মাস তো লাগবেই। আমার জানা মতে, কোনো ইনফেকশন এতোদিন লাগার কথা না। ডাক্তারের রিপোর্ট দেওয়ার পর বাকিটা বলতে পারব।’

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।