এবার ক্রিকেট নিয়ে ভারত-পাকিস্তান আইনি যুদ্ধ

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৫৮ পিএম, ০১ অক্টোবর ২০১৮

পাকিস্তানের রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছিল সর্বশেষ নির্বাচন। যেখানে ক্ষমতায় এসেছেন দেশটির সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক ইমরান খান এবং তার দল তেহরিক-ই ইনসাফ। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খান দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ভারতের সঙ্গে ক্রিকেট সম্পর্ক যে পূনঃপ্রতিষ্ঠা হয়, সে ব্যাপারে জোর দিয়েছিলেন তিনি। শুধু ক্রিকেটই নয়, প্রতিবেশি দেশটির সঙ্গে বৈরি রাজনৈতিক সম্পর্কেরও অবসান ঘটানোর লক্ষ্যের কথা জানিয়েছিলেন ইমরান প্রশাসন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে সব সুদুর পরাহতই মনে হচ্ছে। রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নতির তো কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। বরং, আরও খারাপ হওয়ার পথে রয়েছে। সুতরাং, দু’দেশের ক্রিকেট সম্পর্কের উন্নতিরও কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং, অবনতি হওয়ারই লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কারণ, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) বিরুদ্ধে স্পষ্টত আইনি লড়াইয়ে নেমে পড়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।

বিসিসিআইয়ের বিরুদ্ধে আইসিসিতে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে পিসিবি। যে চুক্তিভঙ্গের কারণে তাদেরকে ৭০ মিলিয়ন ডলার, অথ্যাৎ সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। এই ক্ষতি পূরণ চেয়েই আইসিসিতে মামলা করেছে পিসিবি। আজ সেই মামলারই শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আইসিসিতে। যদিও বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে এই শুনানিতে যোগ না দেয়ার কথাই জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

২০১৪ সালে ভারত-পাকিস্তান দু’দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। যেখানে বলা হয়, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৬টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলবে দুই দেশ। যার প্রথম সিরিজটি আয়োজন করার কথা ছিল পিসিবি’র। তবে ভারতের অভিযোগ, সীমান্তে পাকিস্তান ধারাবাহিকভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে ভারতীয় সরকার প্রতিবেশি দেশটির সঙ্গে যে কোনো ক্রিকেট সিরিজ খেলার অনুমতি দিতে নারাজ। বিসিসিআইও সে কারণে এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো সিরিজ খেলতে পারেনি।

indo-pak

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) অনেক চেষ্টা-সাধনা করেও ভারতকে রাজি করাতে পারেনি নিরপেক্ষ ভেন্যুতে হলেও সিরিজ আয়োজনের। শেষ পর্যন্ত রাজি করাতে ব্যর্থ হয়ে বিসিসিআইয়ের বিরুদ্ধে ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইসিসির কাছে মামলা করে পিসিবি।

দুবাইয়ে সেই মামলারই তিন দিনের সুনানি শুরু হওয়ার কথা আজ। আইসিসির ব্রিটিশ আইনজীবি মাইকেল বিলোফের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গড়া হয়েছে পিসিবি আর বিসিসিআইয়ের মধ্যকার এই সমস্যা সমাধানের জন্য। যেখানে স্বাক্ষ্য দিতে ডাকা হয়েছে বিসিসিআই একাধিক সাবেক বোর্ড কর্মকর্তাকে।

বিসিসিআই সরাসরি সেখানে না গেলেও তারা কিন্তু আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে। এ কারণে আগেই বিসিসিআইয়ের কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস ইংল্যান্ডের আন্তর্জাতিক ল-ফার্ম হার্বার্ট স্মিথ ফ্রিহিলস ও স্পোর্টস ডিসপুটি বিশেষজ্ঞ ইয়ান মিলকে নিয়োগ করেছে শুনানিতে তাদের পক্ষে হয়ে অংশ নেয়ার জন্য।

তবে ২০১৪ সালে এমওইউতে স্বাক্ষরকারী বিসিসিআইয়ের অন্যতম তিন সাবেক কর্মকর্তা, বিসিসিআই প্রধান এন শ্রীনিবাসন, সেক্রেটারি অনুরাগ ঠাকুর ও অন্যতম পরিচালক সঞ্জয় প্যাটেলকে ডাকা হয়েছিল শুনানীতে স্বাক্ষ্য দেয়ার জন্য। কিন্তু তারা তিনজনই আইসিসিতে গিয়ে বিসিসিআইয়ের হয়ে সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করেন।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অপসারিত বোর্ড সভাপতি অনুরাগ ঠাকুর তো এককথায় এর প্রয়োজনীয়তাও উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিসিসিআই কোনো ভুল করেনি। তাই সুনানিতে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন নেই। ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট সিরিজ দু-দেশের ক্রিকেট বোর্ডের আভ্যন্তরীন বিষয়। এতে আইসিসির নাক গলানোর কোনও এখতিয়ার নেই। আইসিসি কোনো দেশকে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে বাধ্য করতে পারে না।’

অনুরাগ ঠাকুর তো আরও এককাঠি সরেশ। তিনি সরাসরি দাবি করেন, ‘পাকিস্তানকে এক পয়সাও দেওয়া উচিত নয় ভারতের। আগে পাকিস্তান সন্ত্রাস বন্ধ করুক। তারপর আমরা ওদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলার কথা ভাববো।’

তবে, বিসিসিআইর বর্তমান কর্তৃপক্ষ ল-ফার্ম নিয়োগ করে শুনানিতে অংশ নেয়ার কারণে সাবেক কর্মকর্তারা এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় মিডিয়ার খবর, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোর্ড কর্মকর্তা কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরসকে তীব্র সমালোচনা করেন আইসিসির সুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য সংস্থা নিয়োগ করায়। তার মতে, বিসিসিআই যদি অভিজ্ঞ ক্রীড়াপ্রশাসকরা পরিচলনা করত, তবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এখন কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন যা পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে ভারতীয় বোর্ডকে বড়সড় ক্ষতির মুখেই পড়তে হতে পারে।’

আইএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।