ভারতকে হারাতে যা করতে হবে বাংলাদেশকে

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:০৩ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

এশিয়া কাপ খেলতে যাবার আগে শেরে বাংলায় প্রেস কনফারেন্সে অধিনায়ক মাশরাফি বলে গিয়েছিলেন, ভারত অনেক বেশি শক্তিশালী। আসরের হট ফেবারিট। শক্তি ও সামর্থ্যে বাংলাদেশ তো বটেই, সব দলের চেয়ে এগিয়ে। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং- তিন শাখায় ভারতীয়রা অনেক বেশি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। তবুও তাদের হারানো যাবে না, এমন নয়। তাদের হারানোর ক্ষমতা আছে আমদের। আমরা অতীতে হারিয়ে সে সামর্থ্যের প্রমাণও রেখেছি। তবে এবার এশিয়া কাপে ভারতকে হারাতে হলে সামর্থ্যের সেরা ও সফল প্রয়োগ ঘটাতে হবে।’

ফাইনালে সেই অতি শক্তিশালী ভারতই টাইগারদের প্রতিপক্ষ। অথচ ভাগ্য বিড়ম্বনায় সেরা শক্তি নিয়ে মাঠেই নামা হচ্ছে না মাশরাফি বাহিনীর। গোটা দলের শক্তির উৎস এবং অন্যতম চালিকশক্তি যে দু’জন- সেই তামিম ও সাকিব ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে এখন মাঠের বাইরে। এই দু’জন অতি নির্ভরযোগ্য ও কার্যকর পারফরমার ছাড়া ভারত বধ কি সম্ভব?

শুক্রবার কি করলে মাশরাফির দল হারাতে পারবে রোহিত শর্মার ভারতীয় বাহিনীকে? ভারত বধে কোন এবং কেমন লক্ষ্য-পরিকল্পনা ও কৌশল হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর?

কেউ কেউ বলছেন, মাশরাফির দলের আগে ব্যাট করা উচিৎ। কারণ এবারের এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের তিনটি জয়ই এসেছে আগে ব্যাট করে। পাকিস্তানের সাথে বুধবারের জয়টি ছাড়া শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের সাথে ২৫০ প্লাস স্কোর গড়েই ধরা দিয়েছে সাফল্য। আর পাকিস্তানের বিপক্ষে অঘোষিত সেমির যুদ্ধে মাশরাফির দল ২৩৯ রানের মাঝারি পুঁজিকেই জয়ের জন্য যথেষ্ট বলে প্রমাণ করেছে।

তাই বাংলাদেশ ভক্তদের একটা বড় অংশ ভারতের সাথে শুক্রবারের ফাইনালেও আগে ব্যাটিং করার পক্ষে। তাদের বোধ-উপলব্ধি ও স্থির বিশ্বাস, যেহেতু এবারের এশিয়া কাপে মাশরাফির বাহিনীর তিনটি জয়ই আগে ব্যাট করে এবং আড়াইশো রানের আশপাশে স্কোর গড়ে। তাই শুক্রবারের ফাইনালে আগে ব্যাট করে ২৬০ প্লাস স্কোর গড়তে পারলেই একটা ভালো সুযোগ ও উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকবে।

এ আসরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ও ফলকে মানদণ্ড ধরলে আগে ব্যাটিং এবং ২৬০ প্লাস রান করাকেই সাফল্যের পূর্বশর্ত বলে বিবেচনা করাই যায়। ভারত শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৫২ রানের মাঝারি টার্গেট অতিক্রম করতে না পারায় আগে ব্যাটিং করার দাবি আরও ভারি হয়েছে।

কিন্তু তারা বোধকরি ভুলেই গেছেন, ২৬০-২৭০ রানের স্কোর গড়ে ভারতকে আটকে রেখে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়া খুব কঠিন। বেশি দূর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না। এই তো গত বছর জুনে ইংল্যান্ডের বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ২৬৪ রানের পুঁজি গড়েও ভারতীয়দের জয় রথ থামাতে পারেনি মাশরাফির দল। জেতা বহদূরে এতটুকু লড়াইও করতে পারেনি। হেরেছে ৯ উইকেটে। টাইগারদের বোলিংকে গুঁড়িয়ে অনায়াসে ওই রান টপকে খেলার ৫৯ বল হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত।

team

এবারের এশিয়া কাপে ভারতীয়রা যার নেতৃত্বে খেলছে, সেই রোহিত শর্মা সেঞ্চুরি করেছিলেন। রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলিই টাইগারদের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছেন। রোহিত শর্মার অনবদ্য শতকের (১২৯ বলে ১২৩ বলে) সাথে বিরাট কোহলি ৭৮ বলে ৯৬ রানের হার না মানা ইনিংস যোগ হলে ভারতীয়রা পায় অনায়াস জয়। ওপেনার শিখর ধাওয়ানের ব্যাট থেকে আসে ৪৬।

কেউ কেউ হয়ত বলবেন, এবার তো বিরাট কোহলি নেই। সেটা বড় স্বস্তি। তারপরও রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল, আম্বাতি রাইডু আর মহেন্দ্র সিং ধোনির গড়া ভারতের বিশ্বমানের ব্যাটিং লাইন আপকে ২৬০-২৭০‘এর টার্গেট দিয়ে জেতা কঠিন।

আফগানদের সাথে ২৫২ রানের পুঁজি অতিক্রম করতে না পারাকে উদাহরণ না ভাবাই হবে যুক্তিযুক্ত। ভুলে গেলে চলবে না, সে ম্যাচে রোহিত-ধাওয়ান কেউই খেলেননি।

মোটকথা শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের সাথে যে রান করে জেতা সম্ভব হয়েছে, ভারতের সাথে ওই রান করে জেতা খুব কঠিন হবে। কারণ ভারতীয় দলে কুশলী, অভিজ্ঞ, পরিণত এবং ম্যাচ জেতানো ব্যাটসম্যানের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই আগে ব্যাট করে ভারতীয় ব্যাটিংকে চাপের মুখে ফেলতে হলে ৩০০ প্লাস রান করা ছাড়া উপায় নেই।

এবারের এশিয়া কাপে কোনো দল এখন পর্যন্ত ৩০০ রানের মাইলফলক ছুঁতে পারেনি। তামিম ও সাকিব ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে আগে ব্যাট করে অত রান করে ফেলাও যে বেশ কঠিন। ওদিকে ভারতীয়দের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠানোয়ও আছে বড় ধরনের ঝুঁকি।

২০১৫ সালের ১৯ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বিশ্বকাপ কোয়ার্টারফাইনালের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। ঘটনাবহুল ও বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের সে ম্যাচে ভারতীয়রা আগে ব্যাট করার সুযোগ দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে ১০৯ রানের বড় জয়ের ভীত রচনা করেছিল। রোহিত শর্মার অনবদ্য শতরানের ওপর ভর করে ভারতের সংগ্রহ দাড়ায় ৩০২ রান।

team

শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ আর অতবড় স্কোর টপকাতে পারেনি। তার মানে ভারতীয়দের আগে ব্যাট করতে দেয়ায়ও থাকছে বড় ধরনের ঝুঁকি। বিরাট কোহলি নেই, তাতে কি! রোহিত শর্মা তো আছেন। ইতিহাস পরিষ্কার সাক্ষী দিচ্ছে, ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল আর গতবছর আইসিসি চ্যাস্পিয়ন্স ট্রফি- দুটি নক আউট বা ‘সাডেন ডেথ’ পর্যায়েই টাইগারদের পথের কাঁটা ছিলেন রোহিত শর্মা।

তাহলে কি দাঁড়াল? আগে আর পরে দুই ক্ষেত্রে ব্যাটিংয়েই থাকছে বড় ধরনের ঝুঁকি ও রাজ্যের সংশয়; কিন্তু কিছু একটা তো করতেই হবে। এর বাইরে তো আর কিছু নেই। জিততে হলে হয় আগে ব্যাট করে জিততে হবে, না হয় রান তাড়া করে শেষ হাসি হাসতে হবে। এর বাইরে কোন হিসেব-নিকেশ বা পথ ঘাট নেই।

তবে কি ভারত বধের কোনই কার্যকর দাওয়াই বা ফর্মুলা নেই? আছে। কেন থাকবে না? ইতিহাস ঘাঁটলেই মিলবে সে রসদ।

একটু পিছন ফিরে তাকান, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচটির কথা মনে আছে? ওয়েস্ট ইন্ডিজের পোর্ট অব স্পেনে সৌরভ, শেবাগ, উথাপ্পা, শচীন, দ্রাবিড়, যুবরাজ এবং ধোনির অতি শক্তিশালি ভারতীয় ব্যাটিংকে ১৯১ রানে আটকে ফেলে ৫ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ।

এবারো যদি ভারতকে দুশোর নিচে কিংবা ২২০-২৩০-এ আটকে রাখা যায়, তাহলে মাশরাফি বাহিনীর সম্ভাবনা থাকবে প্রচুর। সে ক্ষেত্রে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজকে কার্যকর অবদান রাখতে হবে সামনে থেকে। পাকিস্তানের সাথে অঘোষিত সেমিফাইনালে যেমন বিধ্বংসী বোলিং করেছিলেন, ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মোস্তাফিজের অমন এক স্পেলই হতে পারে সাফল্যের পূর্বশর্ত।

অর্থাৎ ভারতকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে ২০০ থেকে ২৩০ ‘র মধ্যে আটকে রাখতে পারলে বাংলাদেশের প্রথম এশিয়া কাপ বিজয় তথা ট্রফি ঘরে তোলার সুযোগ থাকবে বেশি। দেখা যাক, বাস্তবে কোনটা ঘটে?

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।