ভারতের অধিনায়ক কে, রোহিত না ধোনি?

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:০৬ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

এশিয়া কাপে ভারতের অধিনায়ক কে? এই প্রশ্নে, অবাক হতে পারেন। জবাব আসতে পারে, কেন রোহিত শর্মা। এখানে প্রশ্নের কি আছে? কিন্তু এশিয়া কাপে ঘটনার পরম্পরা বিবেচনা করলে, এই প্রশ্ন জাগা অবশ্যই স্বাভাবিক, ভারতীয় দলের মধ্যে নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড রোহিত শর্মার হাতে বাধা থাকলেও, মূলতঃ ছায়া অধিনায়ক হিসেবে কাজ করছেন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি।

তার নেতৃত্বে ২০১১ সালে বিশ্বকাপ জয় করেছে ভারত। তার নেতৃত্বে টেস্ট র্যাংকিংয়ে শীর্ষে এসেছিল ভারত। সেই মহেন্দ্র সিং ধোনি নেতৃত্ব ছেড়েছেন অনেক আগে। তিনি এখন নিয়মিত খেলে যাচ্ছেন কেবল ওয়ানডে ক্রিকেট। নেতৃত্বের পুরো দায়িত্ব এখন পুরোপুরি বিরাট কোহলির ঘাড়ে।

কিন্তু ইংল্যান্ড সফরের পর বিরাট কোহলিকে বিশ্রাম দিয়ে রোহিত শর্মার নেতৃত্বেই এশিয়া কাপে দল পাঠায় ভারত। যেখানে দলে রাখা হয় অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচেই হংকংয়ের বিপক্ষে দারুণ চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারতীয় দল। তাদের করা ২৮৫ রানের জবাব দিতে নেমে দুই হংকং ওপেনার অংশুমান রাথ এবং নিজাকাত খান। ১৭৪ রানের জুটি গড়ে ফেলেন তারা দু’জন।

শেষ পর্যন্ত দেখা গেলো মাঠে ধোনির নড়াচড়া বেড়ে গেলো। অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে ডেকে নানা পরামর্শ দিতে শুরু করলেন। অনেক সময় দেখা গেলো নেতৃত্বের দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়ে ফিল্ডিং সেট করছেন তিনি। তাতেই সাফল্য পেয়ে গেলো ভারত। স্পিনার কুলদ্বীপ যাদব এলবিডব্লির ফাঁদে ফেলে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দেন অংশুমান রাথকে।

বোঝাই যাচ্ছিল, ধোনির পরামর্শছাড়া দল চালাতে অনেকটাই অপারগ রোহিত শর্মা। যে কোনো জটিল পরিস্থিতিতে কার্যকর সব পরামর্শ দিয়ে রোহিতকে সহযোগিতা করছেন তিনি। তবে, সবচেয়ে কার্যকর পরামর্শটি তিনি দিয়েছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের সময়। সাকিব আল হাসানের উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে মোক্ষম বুদ্ধিটা দিয়ে।

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে শুরু থেকেই বিপর্যয়। তবুও মুশফিক আর সাকিব মিলে চেষ্টা করছিলেন একটা জুটি গড়ার। এটাই ছিল ভারতের জন্য বিপদের কারণ। এমন সময় বোলিংয়ে আনা হয় রবীন্দ্র জাদেজাকে। যিনি হার্দিক পান্ডিয়ার ইনজুরির কারণে দলে জায়গা পেলেন।

জাদেজার প্রথম বল শর্ট ফাইন লেগে ঠেলে এক রান নেন সাকিব। পরের বল জাদেজা নো করেন। সেই বলেও মুশফিকুর রহীম এক রান নিয়ে সাকিবকে স্ট্রাইক দেন। পরের বল কভার অঞ্চল দিয়ে চার মারেন সাকিব। পরবর্তী বলেই স্কোয়ার লেগ দিয়ে চার মারেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার। সেই সময়ে স্লিপে দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং করছিলেন শিখর ধাওয়ান।

উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে ধোনি সব দেখতে পাচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন সাকিবের মারা সুইপ কিছুক্ষণ শূন্যে ভেসে ছিল। সঙ্গে সঙ্গে তার মস্তিষ্কে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। স্লিপ থেকে ধাওয়ানকে স্কোয়ার লেগে দাঁড় করানোর জন্য রোহিত শর্মাকে এগিয়ে এসে পরামর্শ দিলেন ধোনি। এরপরই তাকে পাঠানো হয় স্কোয়ার লেগে।

এই অঞ্চল দিয়েই আগের বলটা বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছিলেন সাকিব। বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যান বুঝতেই পারেননি ধোনির পাতা ফাঁদের কথা। তিনি আগের বলে জাদেজাকে যেভাবে খেলেছিলেন, পরের বলেও স্কোয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারি মারতে গেলেন। আর ধোনির ছড়ানো জালে পা দিলেন সাকিব। জাদেজার বল তিনি স্কোয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠাতে গিয়ে ধরা পড়লেন ধাওয়ানের হাতে। ফাঁদ বুঝতে না পারার অনুশোচনায় ব্যাট শূন্যে ছুড়লেন তিনি।

ফিল্ডিং পরিবর্তনই বুঝিয়ে দিল ধোনির মস্তিষ্কে এতটুকুও মরচে পড়েনি। তিনি রয়েছেন আগের মতোই। ভারতীয় মিডিয়ায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তো চলছে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা। পুরো ভারত যেন মেতে উঠেছে ধোনির প্রশংসায়। লেখা হতে থাকে তার ক্রিকেট মস্তিষ্কের তীক্ষ্ণতা নিয়ে। ধোনির অভিজ্ঞতা নিয়েও মেতে ওঠেন সমর্থকরা। কেউ লেখেন, ধোনি চিরকালই লিডার থেকে যাবেন। কেউ লেখেন, ধোনিকে কেন সেরা অধিনায়ক বলা হয়, সেটা বোঝা গেল।

সাগর নামে টুইটারে এক ভক্ত প্রশংসা করে লিখেছেন, ‘নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছেন তিনি; তাতে কি, নেতৃত্ব তো আর তাকে ছাড়েনি।’ চেন্নাই সুপার কিংস আইপিএলে তাদের অধিনায়ক ধোনির প্রশংসা করে লিখেছে, ‘উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে ব্যাটসম্যানের মাইন্ডগেম পড়তে পারা! থালা মাস্টারমাইন্ড!’

কলকাতার এবেলা পত্রিকা লিখেছে, ‘কে বলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি তার ক্রিকেট-ক্যারিয়ারের উপান্তে এসে পৌঁছেছেন? বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের মস্তিষ্ক এখনও কম্পিউটারের মতো কাজ করে। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে তিনি দেখতে পান গোটা মাঠ। খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে আজও সমান দক্ষ মাহি। মাঠের ভিতরে দাঁড়িয়ে চকিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন আগে। আজ হয়তো অধিনায়ক নন আর, তবু এখনও তাই পারেন।’

আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।