তামিম ইকবাল : আপনাকে স্যালুট

ইমাম হোসাইন সোহেল
ইমাম হোসাইন সোহেল ইমাম হোসাইন সোহেল
প্রকাশিত: ১০:১১ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সত্যিই এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। শরীরের কাঁপনও থামছে না। ৪৭তম ওভারের ৫ম বলে মোস্তাফিজুর রহমান যখন রানআউট হয়ে গেলেন, তখন বাংলাদেশের রান ২২৯। সেখানেই তো বাংলাদেশের দৌড় থেমে যাওয়ার কথা। মোস্তাফিজের সঙ্গে ধীরে ধীরে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার কথা সেঞ্চুরি করা মুশফিকের। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাঠে নেমে গেলেন তামিম ইকবাল।

কিছুক্ষণ আগেও যাকে ড্রেসিং রুমে দেখা গিয়েছিল গলায় হাতটাকে ঝুলিয়ে রাখতে। হাতের কব্জিতে বাধা ব্যান্ডেজ। তিনি কি না ব্যাট হাতে দিব্যি মাঠে। নিজের শরীরে চিমটি কেটে দেখলাম, স্বপ্ন দেখছি না তো। এটা কিভাবে সম্ভব? তামিম কিভাবে মাঠে নামেন। কিছুক্ষণ আগেই তো নিউজ করে দিয়েছি, ‘এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেলেন তামিম।’ ক্রিকইনফো, ক্রিকবাজের মত বিখ্যাত ক্রিকেট পোর্টালগুলো কি তবে মিথ্যা লিখেছে? ডাক্তার কি তবে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছে?

বিশ্বাস হচ্ছিল না কারও। ডাক্তাররা তো স্ক্যান রিপোর্ট দেখেই বলে দিয়েছে বাম হাতের কব্জিতে ছিড় ধরা পড়েছে। অন্তত ৬ সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে। কিন্তু যেখানে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচ, জিততে না পারলে গ্রুপ পর্ব থেকেই হয়তো বিদায় নিতে হবে।

সেখানে, একটি জ্বলজ্যান্ত উইকেট হিসেবে তামিম মাঠের বাইরে বসে থাকবেন, সেটা কি করে হয়! মাঠের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেও তো সেখানে প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান মুশফিক কিছু রান স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারবেন। শুধুমাত্র সে চিন্তা থেকেই গলায় ঝোলানো আর্ম স্লিং খুলে ফেললেন তামিম। রাখলেন শুধু কব্জিতে রাখা ব্যান্ডেজ। এরপর নেমে পড়লেন মাঠে। সঙ্গ দিলেন মুশফিককে। স্রেফ সঙ্গ দেয়ার জন্যই।

Tamim

কিন্তু তামিমের এই বিষয়টাই অবাক করে দিয়েছে সবাইকে। দলের প্রতি কী আত্ম নিবেদন! এতটা নিবেদন ক্রিকেট মাঠে কাউকে কি কখনও করতে দেখেছে কেউ? ক্রিকইনফোর লাইভ ধারাভাষ্যে লেখা হলো, ‘অবিশ্বাস্য এক দৃশ্য। তামিম ইকবাল এগার নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নেমে হাঁটছেন। তাও মাত্র এক হাত দিয়ে? অসাধারণ দৃশ্য। তামিম ইকবালের পক্ষ থেকে অবিস্মরনীয় এক সাহসীকতার কাজ।’

তামিম মাঠে নেমে এক বল মোকাবেলা করতে হয়েছে সুরঙ্গা লাকমালকে। বডি লাইনে আসা বলটি তামিম এক হাত দিয়ে ধরা ব্যাটে মোকাবেলা করলেন। এরপর বাংলাদেশ দল আরও ১৫ বল মোকাবেলা করেছে শ্রীলঙ্কাকে। প্রতিটি বলই খেলেছেন মুশফিক। তামিমের সঙ্গে সিঙ্গেল ছিল ২টি। অর্থ্যাৎ, দুই ওভারের শেষ দুই বলে। মুশফিক গেছেন স্ট্রাইকে।

মুশফিককে সঙ্গ দিয়ে তামিম বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে যোগ করেছেন আরও ৩২টি রান। অবিশ্বাস্য! সবগুলো রানই হয়তো নিয়েছেন মুশফিক। কিন্তু তামিমের অসাধারণ সাহসিকতা না থাকলে তো এটা মোটেও সম্ভব হতো না। শেষ মুহূর্তে মুশফিক হয়তো চড়াও হয়ে খেলেছেন। তামিমের সাহসের নিজের মধ্যে আরও বেশি সাহস সঞ্চার করার চেষ্টা করেছেন।

সেই সাহসে বলিয়ান হয়ে লঙ্কান বোলারদের একের পর এক পাঠিয়েছেন মাঠের বাইরে। মুশফিক চেষ্টা করেছেন তামিমের এই আত্ম নিবেদনের মূল্য রাখতে। তিনি পেরেছেন। সফল হয়েছেন। নিজের স্কোর হয়তো ব্যাক্তিগত ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। কিন্তু তামিমের সাহসিকতাই এখানে সবার কাছে মূখ্য হয়ে উঠেছে।

টুইটারে ঝড় বয়ে গেছে তামিমের এভাবে মাঠে নামা দেখে। দ্বীপ নামে একজন লিখেছেন, ‘আমি আত্মনিবেদনের সবচেয়ে বড় উদাহরণ দেখতে পাচ্ছি এই মুহূর্তে।’ নোমান নামে একজন লিখলেন, ‘ও ভাই!!! এই লোককে স্যালুট জানাতে হয়। তামিম ইকবাল ইউ আর গ্রেট।’

Tamim-1

আবু তালহা মীর নামে একজন লিখেছেন, ‘ব্যাট হাতে তামিম মাঠে হাঁটছেন...। আমি স্বপ্ন দেখছি না তো!’ আতাউর রহমান বলেন, ‘কেউ যদি বলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে কোনো দৃঢ় সংকল্প নেই, সে যেন তামিম ইকবালকে দেখে।’

সজিবুল নামে একজন লিখেন, ‘অবিশ্বাস্য তামিম ইকবাল। আই লাভ ইউ ম্যান! তার এই অবিশ্বাস্য সাহসিকাত দেখে সত্যিই আমার চোখে পানি এসে গেছে।’ অ্যাডলি নামে একজন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ দলের স্কোর যা হয় এখন, সবগুলোই তামিমের নামে লিখে দেয়া উচিৎ।’ রুশদি নামে একজন লিখেছেন, ‘এটাই হলো সাহসী আত্মা। এটাই সাহস। এটাই হচ্ছে সঠিক দেশপ্রেম। হ্যাটস অব তামিম।’

তামিম ইকবাল আপনি যে সাহসিকা আজ দেখালেন, যে উদাহরণ আজ সৃষ্টি করলেন, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। সাহসিকতা, দেশপ্রেম বলতে আমরা শুধু মাশরাফিকেই বুঝতাম। সাতটি বড় অস্ত্রোপচার করেও যে হাঁটু নিয়ে মাশরাফি নিয়মিত খেলে যান শুধু দেশের টানে, সেখানে যে আপনার মধ্যেও এতবড় দেশপ্রেম বিদ্যমান, আজকের এই দৃশ্য না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না। স্যালুট তামিম ইকবাল, আপানাকে।

তামিমের জন্যই এই ম্যাচটা এখন জেতা উচিৎ বাংলাদেশের।

আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।