শুভ জন্মদিন ‘মি. ফিফটি’

শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ
শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ , স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশিত: ১১:৩১ এএম, ১৭ আগস্ট ২০১৮

টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগের দিনও জানতেন না তিনি দলে আছেন নাকি নেই। নিজের ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে তাই নিয়মিত অনুশীলন শেষে দলের সাথে না থেকে চলে গিয়েছিলেন বাসায়।

সেই তিনিই পরের দিন জায়গা পেয়ে গেলেন ম্যাচের মূল একাদশে। ১০ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পরে ব্যাটিংয়ে নেমে আউট হলেন দলীয় ১১০ রানে। মাঝে দলের রান বেড়েছে ১০০। যেখানে তার নিজেরই সংগ্রহ ৭১ রান।

বলছিলাম বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম টেস্টের কথা। তারিখটা ছিলো ১০ই নভেম্বর ২০০০। আর উপরের খেলোয়াড় ছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন। যিনি আগের দিন তথা ৯ তারিখ বিকেল পর্যন্ত জানতেন না তিনি খেলবেন কিনা। সেই তিনিই পরের দিন ম্যাচে নেমে হয়ে যান ইতিহাসের অংশ। একের পর এক সুইপ আর পুল শটে করেন দেশের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম হাফসেঞ্চুরী।

১০টি চারের মাধ্যমে ১১২ বলে ৭১ রান করে আউট হোন ওই ইনিংসে। পুরোটা ইনিংসে তিনি এতোটাই বিষ্মিত ছিলেন যে, তার কাছে মনে হচ্ছিলো তিনি হয়তো স্বপ্ন দেখছেন। ঘুম ভাঙলেই দেখবেন বাসায় শুয়ে আছেন,টিভি ছেড়ে দলের খেলা দেখতে বসবেন। জহির খানের বলে গাঙ্গুলীর হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার পরে ঘোর কেটে যায় তার। বুঝতে পারেন, কিছু একটা করে ফেলেছেন প্রিয় দল, প্রিয় দেশের হয়ে।

সেই যে শুরু "কিছু একটা" করে ফেলার, তার আগে পরে এমন আরো "অনেক কিছু একটা" করেছেন দেশের হয়ে। টেস্ট ক্রিকেটে দেশের হয়ে প্রথম হাফসেঞ্চুরীর পরে করেছিলেন, দেশের হয়ে প্রথমবারের মতো একই টেস্টের দুই ইনিংসেই হাফসেঞ্চুরীর রেকর্ড।

Bashar-1

সেঞ্চুরীর চাইতে হয়তো ফিফটির দিকেই ঝোঁকটা বেশী ছিলো তার। তাইতো বাংলাদেশ ক্রিকেটের রেকর্ডবুকে সাকিব-তামিম'দের একক আধিপত্যের যুগেও বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ফিফটি করা ব্যাটসম্যানের নামটা চলতি বছর পর্যন্ত ছিল হাবিবুল বাশার সুমন (যা এ বছর দখল করতে সক্ষম হয়েছেন তামিম)। ক্যারিয়ার জুড়ে ৫০টি টেস্টের ৯৯ ইনিংসে ব্যাট করে হাঁকিয়েছেন ২৪টি ফিফটি।

অবশ্য তাই বলে সেঞ্চুরী যে করেন নি তাও না। ক্যারিয়ার এর প্রথম ৬ টেস্টে পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরী করার পর ৭ম টেস্টে এসে পেয়ে যান আরাধ্য সেই সেঞ্চুরী। ক্যারিয়ারে করেন মোট ৩টি সেঞ্চুরী।

২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ৩ ফিফটি আর ১ সেঞ্চুরীতে করেছিলেন ৩৭৯ রান । যা এখনো পর্যন্ত দেশের টেস্ট ইতিহাসের এক সিরিজে করা সর্বোচ্চ রান।

৫০ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে তখনকার সময়ে প্রায় ৩১(৩০.৮৭) গড়ে ৩ সেঞ্চুরী ও ২৪ ফিফটিতে করেন ৩০২৬ রান। তার ৩০২৬ রান ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশের টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান ছিলো।

ব্যাটসম্যান বাশার ছাড়া ক্যাপ্টেন বাশারও ছিলেন দুর্দান্ত। দেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচ জয় এর পাশাপাশি প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ও আসে বাশারের অধিনায়কত্বেই।

প্রথম টেস্ট জয়ের ম্যাচে ব্যাট হাতেও দুর্দান্ত ছিলেন হাবিবুল বাশার। প্রথম ইনিংসে ৯৪ এর পরে ২য় ইনিংসেও খেলেন ৫৫ রানের ইনিংস। অবশ্য ক্যাপ্টেন বাশারের কৃতিত্ব জানতে চোখ বুলাতে হবে তার ওয়ানডে পরিসংখ্যান এর দিকে।

টানা ৪৭টা ওয়ানডে হারা একটা দলকে শিখিয়েছেন কীভাবে ভালো খেলে ম্যাচ শেষ করতে হয়, ম্যাচ জিততে হয়। ভালো খেলে ম্যাচ শেষ করার যুগ পার করিয়ে দেখিয়েছেন ম্যাচ জয়ের পথ।

Bashar-2

ক্যারিয়ারের ১১১টা ম্যাচের মধ্যে ৬৯টি ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জিতিয়েছেন ২৯টি ম্যাচ। যা ওইসময় এর বিবেচনায় দারূণ সাফল্য! ২০০৬-০৭ সালে একটানা ১৬টি ওয়ানডের মধ্যে ১৪টি ওয়ানডেতেই দলের জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। শ্রীলংকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার সাথের প্রথম জয়টাও এসেছিলো তারই অধিনায়কত্বে।

এ তো গেলো তার অধিনায়কত্বের কথা। ওয়ানডেতে ব্যাটটাও খুব খারাপ করেন নি হাবিবুল বাশার। ১১১ ম্যাচের ১০৫ ইনিংসে ব্যাটিং করে ১৪ ফিফটির সাহায্যে করেছেন ২১৬৮ রান। আক্ষেপ'টা তবুও থেকেই গেছে কারণ ওয়ানডেতে কোনো সেঞ্চুরি করতে পারেননি "মি. ফিফটি" খ্যাত এই ব্যাটসম্যান।

এতোকিছু বলার একটাই কারণ! তা হচ্ছে আজ থেকে ঠিক ৪৬ বছর আগে কুষ্টিয়ার নাগাকান্দায় জন্মগ্রহণ করেন আমাদের মি.ফিফটি। দেখতে দেখতে কাটিয়েছেন জীবনের ৪৬টি বসন্ত। জাতীয় দলের ক্রিকেটার, অধিনায়ক থেকে এখন রয়েছেন বর্তমান জাতীয় দলের ক্রিকেটার-অধিনায়ক বাছাইয়ের দায়িত্ব তথা নির্বাচক প্যানেলের সদস্য হিসেবে।

খেলোয়াড়ি জীবনের সফলতা সাংগঠনিক জীবনেও বয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন বাশার। জীবনের বাকি সময়টাও এমনভাবেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতিতে কাজ করে যাবেন তিনি এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। জন্মদিনের শুভেচ্ছা বাংলাদেশের 'মি. ফিফটি'।

এসএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।